চট্টগ্রাম শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫

সর্বশেষ:

কক্সবাজারে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক

নিজস্ব সংবাদদাতা, কক্সবাজার

৫ এপ্রিল, ২০২৫ | ১২:১২ অপরাহ্ণ

বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে ঈদ-উল-ফিতরের পঞ্চম দিনে কক্সবাজারে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের সমাগম হয়েছে। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, মহামারি পরবর্তী সময়ে এটি পর্যটন খাতের নবজাগরণের স্পষ্ট ইঙ্গিত। সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে শুরু করে কলাতলী, সুগন্ধা এবং মেরিন ড্রাইভের ইনানী-পাটুয়ারটেক পর্যন্ত সর্বত্রই ছিল পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়।

 

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্টের দূরত্ব অনুমানিক দেড় কিলোমিটার। এই দূরত্বের মধ্যে সৈকতের সী গাল, সুগন্ধা নামের আরও দুই পয়েন্ট রয়েছে। কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবনী সৈকতের পাশাপাশি ইনানির পাথুরে বেলাভূমি, পাটুয়ারটেক এবং হিমছড়ির প্রাকৃতিক ঝরনায় পরিবার ও ভ্রমণপিপাসুদের উপস্থিতিতে মুখর ছিল এলাকা।

 

পর্যটকরা সমুদ্রের নীল জলে স্নান, ঘোড়ায় চড়া, জেট স্কি ও ওয়াটার বাইকিংয়ের পাশাপাশি রঙিন ছাতার নিচে বঙ্গোপসাগরের ঢেউ উপভোগ করছেন। এছাড়া কক্সবাজার শহরের বাইরে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর আদিনাথ ও মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এরিয়ায় গত কয়েক দিনে লক্ষাধিক পর্যটকের আগমন হয়েছে বলে ধারণা।

 

ছুটির দিন শুক্রবার (৪ এপ্রিল) সকাল থেকে টানা সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব স্পট পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। সাগরে স্নান ছাড়াও পর্যটকরা নিজেদের মতো আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ছিলেন। কিটকটে (বিচ ছাতা) বসে যেমন দিগন্ত বিহীন সাগরের জলের খেলা আর হাওয়া উপভোগ করেছেন, তেমনি সৈকতের বালিয়াড়িতে ছুটাছুটি, বিচ বাইক, ওয়াটার বাইক, ঘোড়ায় চড়ে মুঠোফোনে ছবি তুলে স্মৃতির বাঁধনে রেখেছেন অনেকেই।

 

কক্সবাজার ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশনের (টুয়াক) তথ্যমতে, ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকেই পর্যটকের সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে এবং ৫ এপ্রিলের মধ্যে এই সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। টুয়াকের উপদেষ্টা এস এম কিবরিয়া খান দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, এটি স্পষ্ট যে ভ্রমণে জনগণের আস্থা ফিরেছে।

 

তবে পর্যটকদের এই ঢলের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগও পাওয়া গেছে। আবাসিক হোটেলের ভাড়া, অভ্যন্তরীণ পরিবহন এবং খাবার দোকানগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন পর্যটকেরা।

 

ঢাকা থেকে আসা সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ডিসেম্বরে যে হোটেলের কক্ষ ভাড়া ছিল সাড়ে ৩ হাজার টাকা, ঈদের ছুটিতে অগ্রিম বুকিং দেওয়ার পরও তার জন্য ৬ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। একই চিত্র রেস্তোরাঁগুলোতেও।

 

কক্সবাজার আবাসিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার স্বীকার করেছেন যে, অতিরিক্ত পর্যটকের কারণে কিছু ব্যবসায়ী বেশি ভাড়া আদায় করছেন। তিনি জানান, প্রশাসন হোটেল মালিকদের কক্ষ ভাড়ার তালিকা টাঙানোর নির্দেশনা দিয়েছে এবং অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

কক্সবাজার কলাতলী হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান জানান, শহরের প্রায় সব হোটেলেই কক্ষ বুকড রয়েছে এবং কিছু মাঝারি মানের হোটেলে সামান্য খালি থাকলেও তারকা মানের হোটেলে কোন কক্ষ খালি নেই।

 

ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ জানান, দুর্ঘটনা ও অপরাধ রোধে তারা সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছেন। সৈকতের মূল তিনটি পয়েন্টে তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। লাইফগার্ড কর্মীরা জানান, যথাযথ নজরদারির কারণে এখনও পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।

 

কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চুরি-ছিনতাই রোধে শহরে অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি যানজটের নিরসন এবং পর্যটকের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

 

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, অতিরিক্ত ভাড়া ও খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে এবং অভিযোগের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট