চট্টগ্রাম বুধবার, ০৯ অক্টোবর, ২০২৪

রামু সহিংসতার ১২ বছর আজ, সাক্ষীর অভাবে নিষ্পত্তি হয়নি বিচার

নীতিশ বড়ুয়া, রামু

২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের রামু সহিংসতার ১২ বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামুর ১২টি বৌদ্ধ বিহার ও বৌদ্ধপল্লির ২৬টি ঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলা করে দুর্বৃত্তরা। পরদিন পুড়িয়ে দেওয়া হয় উখিয়া-টেকনাফের আরও ৭টি বৌদ্ধ বিহার। এ সহিংস ঘটনাকে স্মরণ করে রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদ আজ রবিবার দিনব্যাপী কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে।

 

 

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-বুদ্ধপূজা, জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, অষ্টপরিষ্কারসহ মহাসংঘদান, ধর্মালোচনা সভা, শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের শান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা। সভায় সভাপতিত্ব করবেন রামু উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারের মহাপরিচালক বিজয় রক্ষিত মহাথেরো। স্মরণ সভায় দেশবরেণ্য পণ্ডিত, প্রাজ্ঞ বৌদ্ধ ভিক্ষু ও নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর উত্তম বড়ুয়া নামে এক বৌদ্ধ যুবক ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননা করেছে অভিযোগ তুলে রামুর বৌদ্ধবিহার ও বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। ওই দিনের হামলায় কয়েকশ বছরের প্রাচীন ১২টি বৌদ্ধবিহার ও ২৬টি বসতঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও বৌদ্ধবিহার ও ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়িগুলোতে ব্যাপকভাবে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। পরদিন উখিয়া-টেকনাফের আরও ৭টি বৌদ্ধ বিহারেও অগ্নিসংযোগ, হামলা ও লুটপাট চালানো হয়।

 

রামু, উখিয়া ও টেকনাফে সহিংসতার ঘটনায় ১৯টি মামলা হয়। এতে এজাহারভুক্ত ৩৭৫ জনসহ ১৫ হাজার ১৮২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। পরে আপসের ভিত্তিতে একটি মামলা প্রত্যাহার হলেও বাকি ১৮ মামলা সাক্ষীর অভাবে নিষ্পত্তি হয়নি এখনও। মামলার সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে না চাওয়ায় মামলা নিষ্পত্তিতে দেরি হচ্ছে বলে জানান কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।

 

কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি, রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের ভিক্ষু প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো বলেন, রামুর ধর্মীয় সম্প্রীতিতে যারা আঘাত হেনেছিল তারা সফল হয়নি। যে ক্ষতের তৈরি হয়েছিল, ১২ বছরে আমরা সবাই মিলে তা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছি। তবে দুঃখের বিষয় হলো হামলার এক যুগ হলেও ওই ঘটনার হামলাকারীদের পরিচয় এখনও অজানা রয়ে গেছে।
স্থানীয় বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দ জানান, সহিংস ঘটনার পর তৎকালীন সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত বিহারগুলো দৃষ্টিনন্দনভাবে পুনর্নির্মাণ করে দিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ঘর বিজিবির মাধ্যমে পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করে দেয়।

 

তারা জানান, বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে হামলা করে যারা রামুর হাজার বছরের স¤প্রীতি বিনষ্ট করতে চেয়েছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। ওই ঘটনায় বৌদ্ধদের মনে ক্ষতের সৃষ্টি হলেও সকল ধর্মের সচেতনতায় রামুতে আগের সম্প্রীতি অনেকটা ফিরে এসেছে। তবে দুঃখের বিষয় হলো হামলার এক যুগ পূর্ণ হলেও ওই ঘটনার বিচার সম্পন্ন না হওয়ায় হামলাকারীদের পরিচয় এখনও অজানাই রয়ে গেছে। এদিকে যার ফেসবুকে ছবি ট্যাগ করাকে কেন্দ্র করে এ হামলা সেই উত্তম বড়ুয়ার খোঁজ মিলেনি এক যুগেও।

 

 

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট