চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরিতে স্বাবলম্বী হচ্ছে রুমা-সেতারারা

নরোত্তম বনিক হ সন্দ্বীপ

২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:১৩ পূর্বাহ্ণ

অসচেতনতা ও অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করতে পারে না বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলের নিম্নবিত্ত নারী ও কিশোরীরা। তাই পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর টুকরো কাপড় ব্যবহার করে। এছাড়াও গ্রামীণ পরিবেশে লজ্জায় সেই টুকরো কাপড় ধুতে ও শুকাতে হয় লোকচক্ষুর আড়ালে গোপন কোন স্যাঁতসেতে জায়গায়। ভালোভাবে না শুকিয়ে পুনরায় ব্যবহার করা কাপড়ে ফাঙ্গাস জাতীয় বিভিন্ন জীবাণু সংক্রমিত হয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। যার মধ্যে জরায়ুতে চুলকানি, টিউমার এমনকী বন্ধ্যাত্বের শিকার হতে হয়। এতে দাম্পত্য জীবনে কলহসহ বিবাহ বিচ্ছেদ ও চিকিৎসার পেছনে প্রচুর আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। এসব বিষয়ের ওপর নজর দিয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন সহজলভ্য ও ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনার জন্য এসডিআই’র রিকল ২০২১ প্রজেক্টে সন্দ্বীপের নারী উদ্যোক্তা ফাতেমা, রুমা, সেতারা, নিলুফা, কুলছুমা ও রাহেনা বেগমকে সিরাজগঞ্জের মানবমুক্তি সংস্থা হতে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির ওপর ৭ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণের ব্যবস্থা করে। একইসাথে তারা প্রশিক্ষণ পরবর্তীতে এগুলো উৎপাদন করার জন্য কারখানা তৈরির পুঁজি সহায়তাও দিয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে তারা সন্দ্বীপে দুটি ন্যাপকিন তৈরির কারখানা খুলে এখন নিয়মিত স্যানিটারি ন্যাপকিন উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। একটি মুছাপুর ৭ নং ওয়ার্ডের ভেলাকাজির বাড়ির কর্ণফুলী হাইজিন সেন্টার; অন্যটি রহমতপুর ৫ নং ওয়ার্ডস্থ লালখাঁর পাড়ার চামেলী হাইজিন সেন্টার। তাদের তৈরি ন্যাপকিন বাজারে অর্ধেক মূল্যে পাওয়া যায়। এতে গ্রাম্য নারী ও কিশোরীদের মাঝে স্থানীয়ভাবে তৈরি ন্যাপকিন ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। লজ্জা কাটিয়ে নারী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে কিনতে পারায় এগুলো ব্যবহার হয়ে উঠেছে বেশ জনপ্রিয়। অন্যদিকে উৎপাদনকারীদের আয়ের পথও তৈরি হয়েছে।

জানা যায়, পরিশোধিত তুলা, নেট ও ব্যান্ডেজের কাপড় দিয়ে ন্যাপকিন তৈরি করা হয়।
কিশোরী মেয়ে শিল্পী বেগম বলেন, আমাদের কিশোরী দলের মেয়েরা আগে অপরিচ্ছন্ন কাপড় ব্যবহার করতো। এখন হাতের নাগালে ও ক্রয়সীমার ভেতরে হওয়ায় প্রায় সকলে ন্যাপকিন ব্যবহার করছে। ফলে কিশোরীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটাই কমে এসেছে। মুছাপুর কর্ণফুলী হাইজিন সেন্টারে ৫ জন নারী ও রহমতপুর চামেলী সিবিওর কারখানাটিতে ৫ জন নারী এ কাজ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখছে।

কর্ণফুলী হাইজিন সেন্টারের উদ্যোক্তা ফাতেমা বেগম বলেন, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হওয়ায় আমরা বাজারমূল্যের অর্ধেক দামে অর্থাৎ ৭টি প্যাডের প্যাকেট বিক্রয় করছি মাত্র ৫০ টাকায়। অথচ একই মানের পণ্য ফার্মেসিগুলোতে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে কিশোরী ও মহিলার অনুপাতে ন্যাপকিন বিক্রি এখনো জমে ওঠেনি। বিক্রি বাড়াতে তারা কয়েকটি উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ফার্মেসি ও কিশোরী দলে এগুলোর প্রচারণা চালাচ্ছে। শিক্ষকরাও তাদের সহযোগিতা করছেন। রিকল প্রজেক্টের এফএফ কবি ও সংবাদকর্মী বাদল রায় স্বাধীন জানান, কারখানাগুলো দরিদ্র নারী উদ্যোক্তাদের আশার আলো হয়ে এসেছে। একইসাথে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে তাদের সচেতন করে তুলছে। তবে এগুলো বাজারজাত করার জন্য বড় কোন পৃষ্ঠপোষক পেলে সন্দ্বীপের বাইরেও তারা এই পণ্য পৌঁছে দিতে পারবে।

স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী রহিমা আক্তার বলেন, ‘কিশোরীরা পিরিয়ডের সময় অর্থাভাবে স্বাস্থ্যসম্মত ন্যাপকিন ব্যবহার করতে পারে না। তাই স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। এটি কমিয়ে আনতে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার বাড়াতে আমরাও সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট