ক্যাপাসিটি চার্জের মডেল ও দায়মুক্তি আইনসহ আরও বেশ কিছু কারণে বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে দেশের বিদ্যুৎ খাত। এর ফলে সরকারের ওপর বড় মাপের ভর্তুকির বোঝা তৈরি হচ্ছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংস্থা- বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এই পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে। ক্যাপাসিটি চার্জকে ‘লুটেরা মডেল’ হিসেবে উল্লখ করে আইএমইডির এ প্রতিবেদনে খাতটির সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ক্যাপাসিটি চার্জ হলো- বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) কর্তৃক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহারের বিনিময়ে দেওয়া অর্থ। বর্তমান ব্যবস্থায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ নেওয়া হোক বা না হোক, কেন্দ্র মালিকদের ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে বাধ্য পিডিবি।
বিদ্যুৎ খাতের চলমান সব প্রকল্প নিয়ে গবেষণা করে তৈরি করা আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৪ বছরে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে ৯০ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে। এই অর্থের পুরোটাই দিতে হয়েছে ডলারে।
আইএমইডি বলেছে, এই মডেলের কারণে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বেরিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ছে। ক্যাপাসিটি চার্জ না থাকলে বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ কমে যাবে, এটিও সত্য নয়।
বেসরকারি উৎপাদনকারীরা স্থানভেদে ২৫-৫০ শতাংশ বর্ধিত দামে বিদ্যুৎ বিক্রির সুযোগ পাবেন এবং সরকার অর্ধেক বিদ্যুৎ কেনার নিশ্চয়তা দেবে- এ দুই শর্তই বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট। ভর্তুকি থেকে এ খাতকে বের করার জন্য সুস্পষ্ট পরিকল্পনা দরকার। ক্যাপাসিটি চার্জ ব্যবস্থা টেকসই নয়।
‘ওভারহলিং’কে ক্যাপাসিটি চার্জের বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করা হয়েছে আইএমইডির প্রতিবেদনে। অর্থাৎ যতটুকু সময় বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উৎপাদন থাকতে পারবে না (সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ), ওই সময়ের জন্যও একটা চার্জ দেওয়া, যাতে বিনিয়োগ সুরক্ষিত হয়।
শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ বন্ধ নয়- প্রতিবেদনে জ্বালানি-অবান্ধব ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ বাতিলসহ বেশ কিছু সুপারিশ করেছে আইএমইডি। বিধি মোতাবেক প্রতিবেদন তৈরির পর কিছু সুপারিশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছে সংস্থাটি।
আইএমইডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আইএমইডি বিদ্যুৎ খাত নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি ও সুপারিশ করলেও এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। আইএমইডির কাজ হচ্ছে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পর্যবেক্ষণ করা। প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব চিহ্নিত করে প্রকল্পগুলোর প্রভাব বা ফলাফল মূল্যায়ন করে।
পূর্বকোণ/মাহমুদ