চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর, ২০২৪

নতুন বছরে প্রযুক্তি খাতে যেসব পরিবর্তন আসবে

অনলাইন ডেস্ক

৩ জানুয়ারি, ২০২৪ | ৮:২৮ অপরাহ্ণ

সদ্য বিদায়ী ২০২৩ সালে আসা প্রযুক্তির উদ্ভাবন মানুষের জীবনমান শুধু সহজ করেনি বরং নতুনত্ব এনে দিয়েছে। যা আগে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। সে ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সাল হবে আরও বেশি সম্ভাবনাময়। এমনটাই বলছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। ২০২৪ সাল প্রযুক্তি দুনিয়ায় কোন কোন বিষয় বিদায়ি বছরে চ্যাটজিপিটি ও গুগল বার্ডের মতো জেনারেটিভ এআই মডেল দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছিল। তবে, আগামী বছরে এসব মডেলের পরবর্তী প্রজন্ম বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে এআই মডেলের ব্যবহার আরও বাড়বে। এছাড়া নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে স্বাস্থ্য, পরিবহণ ও শিক্ষা খাত নিয়ে। আর সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ভারি বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো।

 

জেনারেটিভ এআই: উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকেই রীতিমতো বিপ্লব নিয়ে এসেছে জেনারেটিভ এআই। প্রযুক্তি এখন সব কাজ অনায়াসে করছে, যা দীর্ঘদিন মানুষই করত। বর্তমানে কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ লেখা, ছবি আঁকা এবং গান তৈরিতে অনায়াসে ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে জেনারেটিভ এআই।

 

চ্যাটজিপিটির প্রতিষ্ঠাতা স্যাম অল্টম্যান মনে করেন, এআইয়ের দৌড় স্থির নয়। ২০২৪ সালে শক্তিশালী সংস্করণের চ্যাটজিপিটি আনা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। তবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিসিএস ইনসাইট প্রধান বিশ্লেষক বেন উড বলেন, ২০২৪ সালে এআইয়ের দুনিয়ায় আমরা কিছুটা স্থিরতা দেখতে পাব। যে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে, তা ধীর হবে বলেও মনে করেন তিনি।

 

এ বছর জেনারেটিভ এআই সম্পর্কে ধারণা শক্তিশালী করার মাধ্যমে যে কোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণা, ডাটা সায়েন্স এবং ক্রিয়েটিভ প্রতিষ্ঠানে চাকরির ব্যবস্থা করে নিতে পারে।

 

শিক্ষা খাত: বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, এ বছর শিক্ষা খাতে প্রতিবন্ধকতা দূর করে নতুন দিগন্ত উন্মুক্ত করবে প্রযুক্তি। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ব্লুমবক্স ডিজাইন ল্যাবসের মতো প্রতিষ্ঠান। এর মধ্য দিয়ে এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে যাবে। আরও কিছু প্রযুক্তি রয়েছে উদীয়মান পর্যায়ে। এছাড়া পরিবেশ অনুকূল প্রযুক্তি এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিং গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হয়ে উঠবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিংয়ের উত্থানের গুরুত্বপূর্ণ একটা উদাহরণ গেমিফিকেশন। এর মধ্য দিয়ে শিক্ষা খাতকে উপভোগ্য করে তোলা যায়। পাশাপাশি গ্রাহককে ফিডব্যাক, রিওয়ার্ডস এবং রিকমেনডেশনের মাধ্যমে সম্পৃক্ততা বাড়ায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে মানুষের আচরণকে শনাক্ত করা হয়।

 

অ্যাপলের ভিশন প্রো: প্লেস্টেশন ভিআর ও মেটার ‘কোয়েস্ট’ হেডসেটের মতো নানা মাত্রার সাফল্য নিয়ে ভার্চুয়াল ও মিক্সড রিয়ালিটি বেশ কয়েক বছর ধরেই বাজারে রয়েছে। তবে ২০২৪ সালে অ্যাপলের মিক্সড রিয়ালিটি হেডসেট ‘ভিশন প্রো’-এর হাত ধরে এ প্রযুক্তি প্রথমবারের মতো মূলধারায় প্রবেশ করতে চলেছে। যদিও এর পক্ষে বিপক্ষে অনেক যুক্তি রয়েছে।

 

ড্রোন: ড্রোন খুব দ্রুত বিবর্তিত হচ্ছে। গ্রহণ করে নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেন্সর, ব্যাটারি ও স্বয়ংক্রিয় পরিচালন প্রক্রিয়া যা ব্যবসায়িক চিন্তাধারায় এরই মধ্যে পরিবর্তন এনেছে। ওপর থেকে ছবি ও ভিডিও ধারণের মাধ্যমে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। তাছাড়া যেসব জায়গায় আগে পণ্য সরবরাহ করা কঠিন হয়ে যেত, ড্রোন সেখানে পৌঁছানো সহজ করে দিয়েছে। ফসলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, সেচ ব্যবস্থাপনা, রিয়েল এস্টেট পর্যবেক্ষণ। এছাড়া প্রকৌশল ও পরিবহণ খাতেও ভূমিকা রাখবে ড্রোন।

 

মানব আকৃতির রোবট: ২০২৪ সালে নানা কারণে সংবাদের শিরোনাম হবে হিউম্যানয়েড রোবট। ইলন মাস্কের টেসলার প্রকৌশলীরা ‘অপ্টিমাস’ নামের একটি মানব আকৃতির রোবট তৈরি করছেন। এ রোবট শিগগিরই বিভিন্ন কারখানার কাজে যুক্ত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা। ইলন মাস্ক ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছে, অপ্টিমাস ২০২৪ সালে টেসলা কারখানায় কাজ শুরু করবে। মানব আকৃতির রোবট তৈরির জন্য টেসলাসহ অনেক প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আমাজন এরই মধ্যে নিজেদের স্টোরে মানব আকৃতির রোবট পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু করেছে।

 

স্বাস্থ্যসেবা: স্বাস্থ্যসেবা খাতে ২০২৪ সালে আরও বেশি কার্যকর ও উপযোগী প্রযুক্তির উদ্ভাবন ঘটবে। তার একটি হলো শ্রবণ সমস্যা দূরীকরণ। এক্ষেত্রে দৃষ্টি ও শ্রবণসীমার সমন্বয় করে তৈরি করা হবে ডিভাইস। ফলে শ্রবণজনিত সমস্যা কমে আসবে আগামী দিনগুলোয়। এছাড়া ঔষধশিল্পে ওজন কমানোর বিভিন্ন ওষুধের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আর তাই ওজন কমানোর বিভিন্ন ওষুধ তৈরির জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা করছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছর ট্যাবলেট হিসাবে ওজন কমানোর ওষুধ বাজারে মিলবে।

 

সাইবার নিরাপত্তায় বড় বিনিয়োগ: সাইবার সিকিউরিটি ও এথিক্যাল হ্যাকিং একটা গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে আগামী দিনগুলোয়। এ দুই ক্ষেত্রে চাকরি তৈরি হবে। মাস্টার্স এমনকি ডিপ্লোমাও সুবিধা দেবে উচ্চ বেতনের পেশায়। সম্প্রসারিত হবে সাইবার সিকিউরিটি। সিকিউরিটি ইঞ্জিনিয়ার, সিকিউরিটি আর্কিটেক্ট এবং নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি অ্যানালিস্ট হয়ে উঠছে জরুরি অনুষঙ্গ। এর মধ্যেই সেন্সর এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সম্ভাবনা বিস্তৃত হয়েছে। ব্রিটিশ সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি সেন্টার (এনসিএসসি) তাদের ২০২৩ সালের বার্ষিক পর্যালোচনায় র‌্যানসমওয়্যার আক্রমণের ক্রমবর্ধমান হুমকির বিষয়ে সতর্ক করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং সম্ভবত যুক্তরাজ্যসহ ২০২৪ সালে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে বড় নির্বাচন হওয়ার কথা থাকায় শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা অনেকের মূল লক্ষ্য থাকবে।

 

ব্রেইন-কম্পিউটার: ২০২৪ সালে প্রযুক্তির দুনিয়ায় নতুন চমক নিয়ে হাজির হবে প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলোন মাস্কের প্রতিষ্ঠান নিউরোলিংক। এ বছর কম্পিউটার ব্রেইন নিয়ে গবেষণা এগিয়ে যাবে আরও কয়েক ধাপ, যা মানুষের সক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেবে। জয় করবে চোখ ও অন্য অঙ্গহানির মতো বিষয়। কিন্তু নিউরোলিংকের লক্ষ্য এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। কোম্পানিটি মানুষ ও চারপাশের দুনিয়ার মধ্যকার যোগাযোগ ব্যবস্থায়ই মৌলিক পরিবর্তন করতে চায়। ২০২৩ সালে অনুমোদন পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত এগিয়ে চলছে। তথ্যসূত্র: যুগান্তর

 

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট