চট্টগ্রাম বুধবার, ২১ মে, ২০২৫

সর্বশেষ:

বিবাদের অনলে পুড়ছে চট্টগ্রামের বিএনপি
ফাইল ছবি

বিবাদের অনলে পুড়ছে চট্টগ্রামের বিএনপি

মোহাম্মদ আলী

২৪ এপ্রিল, ২০২৫ | ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ

বিবাদের অনলে পুড়ছে চট্টগ্রামের বিএনপি। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার, দখল, ঠিকাদারি, চাঁদাবাজি এবং বালি ও মাটি ব্যবসা নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাতে দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে চরম ক্ষোভ। বিবাদের কারণে রাউজান, মিরসরাই ও আনোয়ারা উপজেলায় গত ৮ মাসে প্রায় ৮০টি ঘটনায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ১০ কর্মী খুন এবং অন্তত সাড়ে তিনশ’ জন আহত হয়েছেন। এ নিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরে অশান্তির পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।

 

বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় চট্টগ্রামের রাউজান, মিরসরাই ও আনোয়ারা উপজেলায় বিএনপি নেতাকর্মীর মধ্যে গৃহবিবাদ এখন তুঙ্গে। গত ৫ আগস্ট দেশের পটপরিবর্তনের পর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, দখল, ঠিকাদারি, চাঁদাবাজি এবং বালি ও মাটি ব্যবসা নিয়ে এ তিন উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ হয়েছে। এ নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিবাদে জড়াচ্ছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। দিন দিন এ কোন্দল প্রকট হচ্ছে।

 

বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে বেশি অশান্তি বিরাজ করছে রাউজান উপজেলায়। বিএনপি দুই গ্রুপের কোন্দলের কারণে গত ৮ মাসে এ উপজেলায় ৮টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। পাশাপাশি কমপক্ষে তিনশ’জন আহত হয়েছেন। নিহত ও আহত সবাই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। চাঁদাবাজি, দখল, মাটি কাটা, পাহাড় কাটা, বালি উত্তোলন এবং আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। বিএনপির কোন্দলের কারণে রাউজানে প্রতিদিন ঘটছে সংঘর্ষের ঘটনা।

 

রাউজানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে এমন পর্যায়ে গেছে প্রায় প্রতিটি ঘটনায় ব্যবহার হচ্ছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। একের পর এক খুন, সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। হত্যায় জড়িতরা এলাকায় ঘুরলেও পুলিশ ধরছে না বলে অভিযোগ স্বজনদের।

 

প্রসঙ্গত, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও উত্তর জেলার আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারকে কেন্দ্র করে রাউজানে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে আসছে। কিন্তু একই দলের নেতাকর্মী হলেও বেশ কয়েকমাস ধরে এ দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম বৈরিভাব। বাড়ছে রাজনৈতিক সংঘাত।

 

এদিকে মিরসরাই বিএনপিরও একই অবস্থা। একই দলের অনুসারী হলেও মূলত ‘দুই আমিন’ এর অনুসারীদের মধ্যে এখন ‘সাপে-নেউলে’ সম্পর্ক। রাজনীতির মাঠে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। বিবাদের কারণে এ উপজেলায় গত তিন মাসে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে তিনটি বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তাতে দুই যুবদল কর্মী নিহত ও কমপক্ষে অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

 

বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিরসরাই বিএনপি মূলত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন এবং আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের অনুসারীদের মধ্যে এ বিবাদ সৃষ্টি হয়েছে।

 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, তৃণমূলে দলের বিবাদ নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সতর্ক রয়েছে। রাউজান বিএনপির একের পর এক সৃষ্ট অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্তে যারা দোষী সাব্যস্ত হবেন তাদের বিরুদ্ধে অতি শীঘ্রই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া বিএনপির দুই গ্রুপের বিবাদের কারণে মিরসরাই উপজেলা এবং মিরসরাই ও বারইয়াহাট পৌরসভা কমিটি বাতিল করা হয়েছে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন