চট্টগ্রাম সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০২৫

রোজার আগেই জমজমাট ঈদ বাজার

তিল ধারণের ঠাঁই নেই টেরিবাজারে

আরাফাত বিন হাসান

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১:০২ অপরাহ্ণ

নগরীর জেনারেল হাসপাতাল থেকে আন্দরকিল্লা সড়ক ধরে লালদিঘির দিকে এগুতেই হাতের বাম পাশে টেরিবাজার সড়ক। গত সোমবার বিকেলে এই সড়ক ধরে সামনে যেতে বেশ কষ্টই হলো, মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। না, গতানুগতিক কোনো উৎসব বা সমাবেশ নয়, আসন্ন ঈদের কেনাকেটা করতে আসা মানুষের ভিড় এটি। ক্রেতাদের অধিকাংশই নারী। ভিড় ঠেলে সামনে এগুতেই ক্রেতাদের হৈচৈ মধ্যেই কানে এলো বিক্রেতাদের হাঁকডাক।

 

সড়কের দু’পাশে দোকানের প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে নানা প্রলোভন দেখিয়ে ক্রেতাদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন বিক্রেতারা। অবশ্য এই বাজারের দেশি-বিদেশি নানা পোশাক মন যুগিয়েছে ক্রেতাদের। তাই ক্রেতাদের আনাগোনায় তিল ধারণের ঠাঁই মিলছে না টেরিবাজারে। পবিত্র রমজান শুরুর আগেই ধুম লেগেছে ঈদ কেনাকাটায়।

 

থান কাপড়ের পাইকারি বাজার থেকে জনপ্রিয় ঈদ বাজার: এই সড়কের মুখ থেকে শুরু করে খাতুনগঞ্জের ঠিক আগে ফুলের দোকান পর্যন্ত বিস্তৃতি টেরিবাজারের। এক সময় থান কাপড়ের পাইকারি বাজার হিসেবেখ্যাতি থাকলেও গেল দুই দশকে ঈদ বাজার হিসেবে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে বাজারটি।

 

ব্যবসায়ীরা জানান, টেরিবাজারের শুরু থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সাধারণ পাইকারিতে থান কাপড় বিক্রি করতেন ব্যবসায়ীরা। খাতুনগঞ্জের মতো অনেকটা বিশ্বাসনির্ভর ছিল পাইকারি কাপড়ের এই ব্যবসা। ২০০০ সালের পর পাইকারি ক্রেতাদের কাছে আর্থিক প্রতারণার শিকার হন অনেক ব্যবসায়ী। অনেকেই পাইকারি কাপড় নিয়ে বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় ধীরে ধীরে খুচরা বিক্রির দিকে ঝুঁকেন ব্যবসায়ীরা। এরপর থেকে অনেকটা পাইকারি দরে খুচরায় পোশাক বিক্রি শুরু করেন তারা।

 

নাগালের মধ্যে দেশি কাপড়ের পাশাপাশি ভারতীয় ও পাকিস্তানি ভালো মানের পোশাক পেয়ে সন্তুষ্ট হতে থাকেন ক্রেতারাও। এতে অল্প সময়ের মধ্যেই ঈদ কেনাকাটাসহ পোশাকের জন্য মধ্যবিত্তদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠে টেরিবাজার। ২০১০ সালের পর ঈদবাজার ও খুচরা বিক্রিকে কেন্দ্র করে এই বাজারে গড়ে উঠতে থাকে ছোট ছোট শপিং মল। এসবের অধিকাংশেই ওয়ান স্টপ মল, যেখানে এক ছাদের নিচে মেলে সব ধরনের পোশাক।

 

বর্তমানে রাজবধূ, মাসুম ক্লথ স্টোর, বধূয়া শপিং, বৈঠক বাজার, ভাসাবি, মনে রেখো, শাহ আমানত, হারুন অ্যান্ড ব্রাদার্স, রাজস্থান, মল টুয়েন্টি ফোর, মোহাম্মদীয়া, সানা ফ্যাশন, রাজপরী, পরশমণি, রাঙ্গুলি, ফেমাস, আলিশা, নিউ আজমির, খাজানা ইত্যাদি ওয়ান স্টপ শপিংমলের সংখ্যা ৩০টি ছাড়িয়েছে টেরিবাজারে। এসবের অধিকাংশই পোশাক থেকে শুরু করে জুতা ও জুয়েলারির দোকান নিয়ে দুই থেকে তিন ধাপে সাজানো।

 

এদিন এমনই এক মল ‘মেগামর্ট’-এ স্কুল পড়–য়া দুই মেয়ের জন্য ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছিলেন অক্সিজেন এলাকার বাসিন্দা শারমিন জাহান। তিনি বলেন, ঈদের আগে বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে, তাই রমজানের আগেই কেনাকাটা সেরে নিতে চাই। এখানে অনেকগুলো দোকান ঘুরে অল্প টাকায় পছন্দের মধ্যে পোশাক পাওয়া যায়, তাই প্রতিবছর এখান থেকেই কেনাকাটা করি।

 

প্রস্তুত ব্যবসায়ীরা: ঈদের বেচাবিক্রির বিষয়ে টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল মান্নান বলেন, টেরিবাজার মূলত পাইকারি বাজার। তবে শবেবরাতের পর থেকে আমাদের খুচরা বিক্রিও বেড়ে যায়। অধিকাংশ ক্রেতা এই সময়ের মধ্যে ঈদের কেনাকাটা করেন। শবে বরাতের পর থেকে ঈদ পর্যন্ত চলে বেচাবিক্রি।

 

ঈদ বাজারের প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, ঈদ বজার ঘিরে আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দিয়েছি। তারা ক্রেতাদের নিরাপত্তা ও যানজট নিয়ন্ত্রণ করবে। তাছাড়া পুলিশের একটি টিম মার্কেটে স্ট্যান্ডবাই থাকবে। তারাও ক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজ করবে। আবার দোকান কর্মচারীদেরও আমরা নিয়মিত কাউন্সিলিং করছি যেন তারা ক্রেতাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন।

 

টেরীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর বলেন, টেরিবাজারে এখন দোকান আছে দুই হাজারের মতো। বিভিন্ন ধরনের শপিংমল আছে ৮২টি। ওয়ান স্টপ শপিংমল রয়েছে অন্তত ৩০টি। ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যসংখ্যা আড়াই হাজার। টেরিবাজার থেকে থান কাপড় কিনে পোশাক সেলাই করা যায় বাজারের মধ্যেই। একে কেন্দ্র করে দর্জির দোকানও গড়ে উঠেছে শতাধিক।

 

এবার আগ্রহ দেশি পোশাকে: এবারের ঈদ বাজারে ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় দেশি পোশাকই এগিয়ে থাকার কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। ভিসা জটিলতায় এবার আসেনি ভারতীয় পোশাক। তবে বেড়েছে পাকিস্তানি পোশাকের বেচাকেনা।

 

ব্যবসায়ী সমিতির উপদেষ্টা ও পরশমনি শপিং মলের স্বত্বাধিকারী মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, প্রতিবছর ভারতীয়সহ বিদেশি পোশাকে ক্রেতাদের আগ্রহ দেখা যায়। এবার এখন পর্যন্ত দেশি পোশাকেই আগ্রহ বেশি দেখা যাচ্ছে। বাজারের ৬০ শতাংশই দেশি পোশাকের দখলে। বাকি ৪০ শতাংশের মধ্যে ৩০ শতাংশ বিক্রি হচ্ছে পাকিস্তানি পোশাক। বাশি ১০ শতাংশ অন্যান্য পোশাক। আর টেরিবাজারের ৯০ শতাংশ ক্রেতাই মধ্যবিত্ত। বাকি ১০ শতাংশ উচ্চবিত্ত বলা যায়।

 

১০ কোটি টাকার বেচাবিক্রির আশা: এবার ঈদে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি বেচাবিক্রির আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, এবারের ঈদ বাজারে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি বেচাকেনার আশা করছি। বাজারও ভালো, ক্রেতাদের আনাগোনাও আশাব্যঞ্জক।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট