অবশেষে চট্টগ্রাম-পানগাঁও-চট্টগ্রাম রুটের জাহাজ ভাড়া প্রতিযোগিতামূলক করতে চট্টগ্রাম বন্দরের জারিকৃত পূর্বের নির্ধারিত ভাড়ার সার্কুলারটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এর ফলে দর কষাকষি করে এই নৌ রুটের ভাড়া নির্ধারণের সুযোগ অবারিত হল। এতে করে একদিকে ব্যয় সাশ্রয় হবে অন্যদিকে বাড়বে সেবার মান।
রবিবার (২৬ জানুয়ারি) নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে আয়োজিত এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, মন্ত্রণালয়ের সচিব ও যুগ্ম সচিব, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রাম কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, এফবিসিসিআই, ঢাকা ও চট্টগ্রাম চেম্বার, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ, শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন ও কনটেইনার শিপিং এসোসিয়েশন, ফ্রেইট ফরোওয়ারর্ডার্স এসোসিয়েশন, কোস্টাল শিপ ওনার্স এসোসিয়েশন, অভ্যন্তরীণ জাহাজ মালিকদের একাধিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ ইকবাল আলী শিমুল পূর্বকোণকে বলেন, সভায় আগের ভাড়া সংক্রান্ত সার্কুলারটি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম-পানগাঁও-চট্টগ্রাম রুটের ফিক্সড ভাড়া আর থাকবে না। এবার প্রতিযোগিতামূলক ভাড়া নির্ধারণ হবে। দর কষাকষি করা যাবে এবং সেবার মান বাড়বে বলে আশা রাখি। মন্ত্রণালয় থেকে বন্দরের পূর্বের এই রুটের ভাড়া সংক্রান্ত সার্কুলারটি বাতিল করে দ্রুত একটি নতুন সার্কুলার জারি করবেন।
উল্লেখ্য, প্রায় অচলাবস্থা সৃষ্টির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল চট্টগ্রাম বন্দরের আওতাধীন পাঁনগাও কনটেইনার টার্মিনাল। অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এই টার্মিনালটি পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। তাই ওই টার্মিনালে নিয়োজিত বন্দর ও কাস্টমসের কর্মকর্তাদের বদলি করে নতুন কর্মকর্তা-কর্মচারী দেওয়া হয়। পাঁনগাও ব্যবহারকারীদের পূর্বের সব অভিযোগ আমলে নিয়ে নতুন করে ঢেলে সাজাতে একাধিক সভাও করা হয়।
সর্বশেষ গত বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দর ভবনে বন্দর চেয়ারম্যান সকল স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে সভা করেন। ওই সভায় পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালের কার্যক্রম গতিশীল করতে আমদানি পণ্য পাঠানোর পাশাপাশি রপ্তানি পণ্য আনার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া পণ্যের নিরাপত্তা ও ইনস্যুরেন্স কাভারেজ নিশ্চিত করা, কনটেইনারের ফ্রি টাইম ১৫দিন করা, চট্টগ্রাম-পানগাঁও-চট্টগ্রাম রুটের জাহাজ ভাড়া প্রতিযোগিতামূলক করার পাশাপাশি বন্দরের চার্জ কমানো, মেইন লাইন অপারেটরদের ওয়েব সাইটে এবং সেবা তালিকায় চট্টগ্রাম-পানগাঁও-চট্টগ্রাম রুটে পণ্য পরিবহন সেবা যুক্ত করা ও প্রচার করা, পানগাঁও থেকে রাতের বেলা ছাড়াও দিনেও যাতে পণ্য পরিবহন করা যায় সে ব্যবস্থা করাসহ গুচ্ছ প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, পানগাঁওয়ে আগের সেই চিত্র নেই। শুল্কায়নে হয়রানি বন্ধে পুরো কাস্টমস কর্মকর্তাদের পরিবর্তন করা হয়েছে। সব ধরনের সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি ডেডিকেটেড বার্থ বরাদ্দ দেওয়া আছে। বাণিজ্য বাড়াতে ওপেন আইজিএম চালুর বিষয়ে এনবিআরের সাথে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের কাজে এনলিস্টেড লাইসেন্সধারীদের কেন আবার পানগাঁওয়ের জন্য আলাদা লাইসেন্স করতে হবে বা অনুমতি নিতে হবে তা কাস্টমসের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলে পণ্য পরিবহনের নিরাপদ, সুবিধাজনক ও সাশ্রয়ী রুট হবে এই চট্টগ্রাম-পানগাঁও নৌ-রুট।
পূর্বকোণ/ইব