চট্টগ্রাম রবিবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

দেশের উন্নয়নে চসিককে ভূমিকা রাখতে হবে: স্থানীয় সরকার মন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

৯ মার্চ, ২০২৪ | ১১:৪৬ অপরাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন সেই লক্ষ্য অর্জনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

 

শনিবার (৯ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ও ষষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের কাউন্সিলরদের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে মন্ত্রী এ কথা বলেন। নগরীর পাঁচলাইশে কিং অব চিটাগং ক্লাবে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

 

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, বন্দর নগরী চট্টগ্রাম সবসময় সারা বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে। চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রাজধানী উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চট্টগ্রামের অবদান অনস্বীকার্য। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন সেই লক্ষ্য অর্জনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন অতি গুরুত্বপূর্ণ।

 

মশার প্রকোপ কমাতে জনসচেতনতা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, হাজার প্রকারের মশা আছে পৃথিবীতে, বাংলাদেশে আছে তিন প্রকারের-এনাকিউলিস, কিউলিস এবং এডিস। আমাদের দেশে আগে এডিসের প্রকোপ তেমন ছিল না। এখন প্রচুর এডিসের প্রকোপ দেখতে পাচ্ছি। এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব আছে। ৯৮ শতাংশ এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব আছে। সিটি কর্পোরেশন ফগিং করে, স্প্রে করে। এত কিছু করেও সেটা মোকাবেলা করা যবে না। অন্য মশা আপনি স্প্রে করে মারতে পারবেন, এডিস নয়। তিনদিনের জমা পানি যদি ফেলে দেন, তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সিটি কর্পোরেশন এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করবে বলে আশা রাখি।

 

বন্দর নগরীর আবর্জনা অপসারণে নতুন প্রকল্প দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, মাথাপিছু আয় বাড়লে আবর্জনার পরিমাণ বাড়বে। ল্যান্ডফিল, এটা সেটা করে হবে না। ময়লা থেকে এনার্জি জেনারেশন করতে হবে। মেয়র আমাকে নিউমার্কেট, ইপিজেড ও বহদ্দারহাটে আন্ডারপাসের কথা বলেছেন। প্রিলিমিনারি স্টাডি করে দেন। ফিজিবিলিটি করে উপযোগী হলে প্রকল্প পাস করার ব্যবস্থা করব।

 

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নিজের অর্থায়নে ৮২টি স্কুল পরিচালনা করছে। ৫৬টি হেলথ কমপ্লেক্স পরিচালনা করছে। চারটা মাতৃসদন হাসপাতাল পরিচালনা করছে। চিকিৎসা কেন্দ্র, কম্পিউটার ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, নার্সিং ইনস্টিটিউট আছে। আপনার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এগিয়ে যাবে।

 

চসিকের আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে জনগণের আপত্তি ছিল। আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য ছয়টি রিভিউ বোর্ড গঠন করে উক্ত রিভিউ বোর্ডে আমি নিজে উপস্থিত থেকে আটটি স্থানে গণশুনানির মাধ্যমে করদাতাদের চাহিদা মতে সহনীয় পর্যায়ে কর মূল্যায়ন করি। এতে নগরবাসীর গৃহকর নিয়ে যে অসন্তোষ ছিল তা প্রশমিত হয়েছে। আমার এ উদ্যোগের ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় বেড়েছে।

 

সমাবেশে চসিকের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী অফিশিয়াল কাউন্সিলর ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। তিনি বলেন, ঢাকার সব মার্কেট চালায় সিটি কর্পোরেশন। আর চট্টগ্রামে চালায় সিডিএ। আমি অবিলম্বে দাবি জানাই, সব মার্কেট সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর করা হোক।

 

সমাবেশে চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ বলেন, সিটি কর্পোরেশনের তিন বছরের উন্নয়নে আমি সন্তুষ্ট। বঙ্গবন্ধু কন্যার চট্টগ্রামের প্রতি যে বিশেষ দায়িত্ব তা তিনি নিজে ঘোষণা করেছেন। এর জন্য সিটি কর্পোরেশনকে আড়াই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন ম্যাচিং ফান্ড ছাড়াই। এত কাজ প্রতিটি ওয়ার্ডে হচ্ছে। সাধারণ মানুষের অনেক অবজারভেশন থাকে, সেগুলো শেয়ার করুন। মেয়র মহোদয় ক্লোজলি মনিটর করুন। অনেক ত্রুটির কারণে সুবিধার চেয়ে অসুবিধা বেশি হচ্ছে। ভুক্তভোগীরাই সেটা আপনাকে বলতে পারবে।

 

কোনো বাড়ি বা দোকানের সামনে ময়লা পেলে মালিককে জরিমানা করতে হবে মন্তব্য করে এম এ লতিফ বলেন, কর্ণফুলীতে প্রতিদিন ৩৫০-৪০০ টন পলিথিন গিয়ে পড়ে। নাব্যতা নষ্ট হচ্ছে। এজন্য কোনো বাড়ি বা দোকানের সামনে ময়লা পেলে মালিককে জরিমানা করতে হবে। কিছুদিন আগে ফুটপাতগুলো চাঁদাবাজরা দখলে নিয়েছিল। সারাজীবন যারা চাঁদার উপর নির্ভর করেছে তাদের থেকে শহরকে রক্ষা করতে হলে মেয়রকে আরো শক্ত হতে হবে।

 

চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য আবদুচ ছালাম বলেন, চট্টগ্রামের মানুষের আকাঙ্ক্ষা মন্ত্রী মহোদয় ভালো করে জানেন। চট্টগ্রামের মানুষ যানজটমুক্ত, জলাবদ্ধতা মুক্ত, বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে চট্টগ্রাম চাই। মেয়র মহোদয় আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী দুই বছর বাকি আছে। আমরা যারা সংসদ সদস্য উনার পাশে থেকে সার্বিক সহযোগিতা করব।

 

চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, নগরবাসীর জন্য বসবাসের যোগ্য নগরী গড়তে মেয়র উদ্যোগ নিয়েছে। নগরীকে যানজট মুক্ত করতে এবং ফুটপাতের যত্রতত্র হকার বসা বন্ধ করতে মেয়রের উদ্যোগ নগরবাসীর প্রশংসা পেয়েছে ইতোমধ্যে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য সব দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই চট্টগ্রামের উন্নয়নে অন্যদেরও মানসিকতার পরিবর্তন এখন প্রয়োজন। পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনতে হবে শহরকে আধুনিক ও বাসযোগ্য করতে হলে।

 

সভায় রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এ.কে. এম এহেছানুল হায়দর চৌধুরী চট্টগ্রামে সিটি গভর্নমেন্ট চালুর দাবি জানান। চসিকের প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন, গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতায়নে জোরারোপ করেন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের গৃহিত বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা করেন।

 

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শের আলী, ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলরবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, চসিকের ভারপ্রাপ্ত সচিব নজরুল ইসলাম, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, চসিকের বিভাগীয় ও শাখা প্রধানবৃন্দ ও বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও সুধীবৃন্দ। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি এবং নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ক্রেস্ট দিয়ে অভিনন্দন জানান মেয়র। বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক আয়োজনের মাধ্যমে সুধী সমাবেশ শেষ হয়।

 

পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট