চট্টগ্রাম বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

বকশিস না দিলেই ধানে থাকে চিটা, চালে আর্দ্রতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ জানুয়ারি, ২০২৪ | ১১:২০ পূর্বাহ্ণ

সরকারি খাদ্য গুদামে ধান-চাল বিক্রিতে ‘বকশিস’ বাণিজ্যের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। চাষী ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ হচ্ছে, বকশিস না দিলে ধানে থাকে চিটা, চালের আর্দ্রতা থাকে খারাপ। পদে পদে হয়রানির কারণে সরকারের খাদ্য গুদামে ধান-চাল বিক্রিতে অনীহা রয়েছে।

 

আমন সংগ্রহ মৌসুমে সরকার ধান সংগ্রহ করছে কৃষকদের কাছ থেকে। আর চাল কিনছে চাল মিল মালিকদের থেকে।   চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা হয় পূর্বকোণের। তারা বলেন, বাজারে চালের দাম বাড়তি। সরকারি মান বজায় রেখে খাদ্য গুদামে চাল বিক্রিতে লোকসান গুনতে হয়। তারপরও লাইসেন্স টিকিয়ে রাখার জন্য চুক্তি করা মিল মালিকেরা সরকারের কাছে চাল বিক্রি করেছেন।

 

সরকারের কাছে চাল বিক্রি করা তিন মিল মালিক পূর্বকোণকে বলেন, হালিশহর ও দেওয়ানহাট সিএসডি খাদ্য গুদামের কর্মকর্তাদের কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা করে ‘বকশিস’ দিতে হয়েছে। চালের মানভেদে বকশিসের পরিমাণও কম-বেশি গুনতে হয়েছে।

 

এক মিল মালিক গতকাল রাতে বলেন, ‘মিল মালিকেরা এবার যে মানের চাল দিয়েছেন, তা গুদামে বেশি দিন টেকবে না। বাজারে চালের দাম বাড়তি। তার উপর কেজিপ্রতি বকশিস গুনতে হয়েছে। বেশি লোকসানের কারণে মধ্যমানের চাল দিতে হয়েছে। এতে সরকার ঠকলেও লাভবান হয়েছেন খাদ্য গুদামের কর্মকর্তারা।’

 

খাদ্য বিভাগের তথ্য মতে, চলতি আমন মৌসুমে চট্টগ্রাম জেলায় আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৫ হাজার ৮০৭ টন। সিদ্ধ চালের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৮০৬ মে. টন। ধান সংগ্রহের লক্ষ্য ধরা হয় ৬ হাজার ১৪৭ টন। গত মৌসুমে চট্টগ্রামে আতপ চাল সংগ্রহ করা হয়নি।

 

লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চাল সংগ্রহ হয়েছে দুই হাজার ৪৭০ টন। সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে ৫১১ টন। আর ধান সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ৬৯ টন।

 

গত বছর আমন মৌসুমে আতপ চাল সংগ্রহ করেনি সরকার। চারটি উপজেলা থেকে শুরু সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করেছে। এবার আতপ ও সিদ্ধ দুই প্রকারের চাল সংগ্রহ করছে খাদ্য বিভাগ। আতপ চাল কিনছে কেজিপ্রতি ৪৩ টাকা, সিদ্ধ চাল ৪৪ টাকা দরে। আর ধান কিনছে কেজিতে ৩০ টাকা দরে।

ধান সংগ্রহ :

বোয়ালখালীর আমুচিয়ার এলাকা কৃষক সুশান্ত দাশ ও কড়লডেঙ্গার সাবেক মেম্বার কুমকুম দাশ বলেন, ‘ধানের উৎপাদন খরচ এখন অনেক বেশি। সেই তুলনায় সরকারি ক্রয় দর কম। তাই কৃষকেরা বেশি লাভের আশায় মধ্যস্বত্বভোগী ও ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কাছে চাল বিক্রিতে বেশি আগ্রহী।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, খাদ্য গুদামে চাল বিক্রিতে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। গুদাম কর্মকর্তাদের টাকা না দিলে ধানে চিটা বেশি বা ভালোভাবে শুকানো হয়নি বলে ফেরত দেয়। তখন ধান নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গুদামে আনা-নেওয়ায় পরিবহন ও শ্রমিক খরচ গুনতে হয় কৃষকদের। এসব হয়রানি, অনিশ্চয়তা ও লোকসানের আশঙ্কায় ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করেন চাষীরা।

 

প্রতি আমন ও বোরো মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ধান ও মিলারের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করে সরকার। তবে ২০১৭ সাল থেকে দেশীয় বাজারে ধান-চালের দাম বাড়তি থাকায় সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না সরকার। তাই বিদেশ থেকে চাল আমদানি করে দেশীয় চাহিদা মেটাতে হয় সরকারকে।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট