আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বেস্ট প্রাকটিসকে অনুসরণের অংশ হিসেবে কাস্টমস সংক্রান্ত কার্যক্রমের অটোমেশন ও আধুনিকায়নে গত এক দশক ধরে বিস্তর আলোচনা হলেও বাস্তবে অগ্রগতি খুবই সামান্য। কাস্টমসের কার্যক্রমে অটোমেশনের ছোঁয়া না লাগায় ব্যবসা সহজ করার ক্ষেত্রে কার্যক্রমে অগ্রগতি হচ্ছে না বলে অভিমত ব্যবসায়ীদের। তাদের আক্ষেপ- আর কত সময় অপেক্ষা করলে কাস্টমস পুরোদমে অটোমেশনে যাবে এবং তার সুফল পাবে ব্যবসায়ীরা।
সর্বশেষ তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ডিজিটাল কাস্টমস ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাস্টমস অটোমেশন ন্যাশনাল টেকনিক্যাল টিম নামে জাতীয় পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০২২ সালের ২ আগস্ট এই টিম গঠন-সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছিল এনবিআর। ১৮ সদস্যের এই টিমের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় এনবিআরের কাস্টমস (নীতি ও আইসিটি) বিভাগের সদস্যকে। কাস্টমস অটোমেশন বিভাগের দ্বিতীয় সচিব এই টিমের সদস্য সচিব। এছাড়া এনবিআরের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারাও এই টিমের সদস্য। এই কমিটি ক্রমেই বাংলাদেশ কাস্টমসের কার্যক্রমকে পেপারলেস করার লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করবে এমন প্রত্যাশা নিয়ে কাজ শুরু করে। তবে প্রায় দেড় বছর অতিবাহিত হলেও তার দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি বলে জানিয়েছেন আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা।
তারও আগে, কাস্টমসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৩৯টি এজেন্সির কার্যক্রমকে একীভূত করতে ২০১৭ সালে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো (এনএসডব্লিও) নামে একটি কার্যক্রম হাতে নিয়েছিল এনবিআর। এর উদ্দেশ্য ছিল, ব্যবসা সংক্রান্ত যে কোন কাজের জন্য একজন উদ্যোক্তা দ্বারস্থ হবেন কেবল এনএসডব্লিওর। সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের ফিডব্যাক অটো কালেক্ট করবে এনএসডব্লিও। এর মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি ও কাস্টমস সংক্রান্ত কাজের জন্য একজন ব্যবসায়ীকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে না। এতে সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে।
প্রাথমিকভাবে ২০১৯ সালের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন করার লক্ষ্য ঠিক করা হলেও পেরিয়ে গেছে প্রায় ৪ বছর। নতুন করে গেল বছর ২০২৩ সালের মধ্যে তা সম্পন্ন করার লক্ষ্য নেওয়া হলেও তাতেও ব্যর্থ হয় সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া ২০১৯ সালে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা অথোরাইজড ইকোনমিক অপারেটর (এইও) সিস্টেমের কাজও আর এগোয়নি। বরং কাস্টমস বিভাগের সক্ষমতার ঘাটতি ও আমদানিকারকদের অনাগ্রহে ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানও তা ঠিকমতো ব্যবহার করেনি বলে একাধিকবার এমন খবরও উঠে এসেছিল। এইও’র অধীনে ট্রাস্টেড ট্রেডারদের পণ্য বা কাঁচামাল কাস্টমস সংক্রান্ত কার্যক্রম ছাড়াই বন্দর থেকে সরাসরি আমদানিকারকের ওয়্যারহাউসে আনা যাবে। সম্প্রতি নতুন করে আরো কিছু প্রতিষ্ঠানকে এ সুবিধার আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
একইভাবে প্রি-অ্যারাইভাল প্রসেসিং অফ কার্গো, পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিটের (পিসিএ) মত কার্যক্রম ২০২০ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। অটোমেশনের জন্য সহায়ক নতুন কাস্টমস আইনও ঝুলে আছে অনেকদিন ধরে।
কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অটোমেশন কার্যক্রমের কিছু ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত অগ্রগতি না হওয়ার পেছনে মূল কারণ কোভিডের অভিঘাত। এছাড়া এনএসডব্লিও’র কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর মাঝপথে সিদ্ধান্তহীনতা এই কার্যক্রমকে কিছুটা পিছিয়ে দিয়েছে। তবে এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সফটওয়্যারের মাধ্যমে আমদানির ক্ষেত্রে বিল অব এন্ট্রি এবং পেমেন্ট অনলাইনে হচ্ছে। এছাড়া কিছু কাস্টমস হাউসে ই-অকশন, ই-টেন্ডার চালু রয়েছে।
উল্লেখ্য, বন্দরে কাস্টমসের পারফরম্যান্স মূল্যায়নে সর্বশেষ টাইম রিলিজ স্টাডির (টিআরএস) রিপোর্ট অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্য খালাসে গড়ে সময় লাগে ১১ দিনের বেশি। আর রপ্তানি পণ্যে ৫ দিনের বেশি, যা এশিয়ার প্রতিযোগী অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।
পূর্বকোণ/জেইউ