চট্টগ্রাম বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

কর্ণফুলীতে ক্যামেরুনের দুই ফিশিং ট্রলার নিয়ে তোলপাড়

মোর্শেদ নয়ন হ কর্ণফুলী

৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:২৬ পূর্বাহ্ণ

তদন্ত কমিটি গঠন
হ জাহাজ দুইটি মানব-মাদক পাচার ও আইইউইউ ফিশিংয়ে অভিযুক্ত
হ থাই সরকারের পক্ষ থেকে ইন্টারপোলকে অবহিত

মেরামতের অনুমতি নিয়ে কর্ণফুলী নদীতে অনুপ্রবেশ করা ক্যামেরুনের পতাকাবাহী দুইটি ফিশিং ট্রলার অনুমোদিত মেয়াদ অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত মেরামত কাজ শুরু হয়নি। ‘সি উইন্ড’ এবং ‘সি ভিউ’ নামের ওই মাছ ধরার জাহাজ দুইটি মেরামতের অনুমতি নিয়ে গত ২০ আগস্ট বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ের একটি জেটিতে বার্থ করে। গত ২৬ আগস্ট অনুমোদিত মেয়াদ অতিক্রান্ত হয়েছে। মেয়াদ সীমায় কোন মেরামত কাজ না করায় এবং সন্দেহজনক আচরণের কারণে প্রশাসনে তোলপাড় চলছে। জাহাজ দুইটিতে পুলিশের সার্বক্ষণিক পাহারা বসানো হয়েছে। রবিবার সচিবালয়ে এ বিষয়ে নীতিনির্ধারণী সভা শেষে জাহাজ দুইটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পূর্বজোনের স্টাফ অফিসার(অপারেশান্স) লে. কমান্ডার এম. সাইফুল ইসলাম পূর্বকোণকে জানান, মেরামতের নামে বাংলাদেশের জলসীমায় আসা ‘সি উইন্ড’ ও ‘সি ভিউ’ ফিশিং জাহাজ দুইটি কর্ণফুলী নদীর তীরে কন্টিনেন্টাল (কন্টিনেন্টাল মেরিন ফিসারিজ লিমিটেড) জেটির ভিতরে রাখা। অনুমোদিত মেয়াদের মধ্যে জাহাজ দুইটি মেরামতের কোন উদ্যোগ না নেয়া ২৮ আগস্ট জাহাজ দুইটিতে তল্লাশি চালায়। এ সময় জাহাজে নাবিক হিসেবে আটজন থাই ও আটজন কোম্বোডিয়ান নাগরিক ছিল। তাদের সাথে বন্দরের ইমিগ্রেশন থেকে শোর পাস ছিল।

লে. কমান্ডার এম. সাইফুল ইসলাম আরো বলেন, অনুসন্ধান করে আমরা জানতে পারি এই জাহাজ দুইটি ছিল মূলত থাই জাহাজ। বেশ কয়েকবার মালিকানা বদল হয়ে সোমালিয়া, সর্বশেষ ক্যামেরুনের পতাকা বহন করছে। ২০১৮ সালে জাহাজ দুটি ইন্ডিয়ান ওশান টুনা কমিশনের (আইওটিসি) ইলিগ্যাল, আনরিপোর্টেড এবং আনরেগুলেটেড ফিশিংয়ের (আইইউইউ) তালিকাভুক্ত হয়। জাহাজ দুইটি মানব-মাদক পাচার ও আইইউইউ ফিশিংয়ে অভিযুক্ত হওয়ায় কারণে থাই সরকারের পক্ষ থেকে ইন্টারপোলকে অবহিত করা হয়।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জাহাজ দুটির স্থানীয় এজেন্ট ‘ইন্টারমোডাল প্রাইভেট লিমিটেড’। ‘সি উইন্ড’ এর দৈর্ঘ্য ৪৬ মিটার ও ‘সি ভিউ’ এর দৈর্ঘ্য ৪৫ মিটার গত ২০ আগস্ট জাহাজ দুটি চট্টগ্রাম বন্দরে বহির্নোঙর করে। কাস্টমসের কাছে জাহাজের অভ্যন্তরে থাকা অবৈধ জালের তথ্য গোপন করে ২১ আগস্ট থেকে জাহাজ দুটি কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে কন্টিনেন্টালের (কন্টিনেন্টাল মেরিন ফিসারিজ লিমিটেড) জেটিতে আছে। স্থানীয় এজেন্ট জাহাজ দুটি মার্চেন্ট শিপিং অধ্যাদেশ অনুযায়ী এনেছেন বলে দাবি করেছেন। তবে আইন অনুযায়ী জাহাজ এভাবে আসার সুযোগ নেই। জাহাজ দুটির কাগজপত্রে অনেক ত্রুটি আছে। পোর্ট ক্লিয়ারেন্স পরিবর্তন করা হয়েছে, অর্থাৎ এক জাহাজের পরিবর্তে এই জাহাজের নাম যোগ করা হয়েছে। পোর্ট ক্লিয়ারেন্স অনুযায়ী জাহাজের কম্বোডিয়া যাওয়ার কথা। সেখানে জাহাজ কীভাবে বাংলাদেশে এলো সেই বিষয়ে স্থানীয় এজেন্ট কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। মেরামতের কথা বলা হলেও জাহাজে কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি। কর্ণফুলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলমগীর মাহমুদ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, মানব ও মাদক পাচারে জাহাজ দুইটির সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ইন্টারপোল পুলিশ সদর দপ্তরে জানতে চেয়েছে। ২ সেপ্টেম্বর পুলিশ জাহাজ দুইটিতে তল্লাশি চালিয়েছে। তারা আসলে কি উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে এসেছে আমরা এখনো ক্লিয়ার না। সন্দেহজনক হওয়ায় তারা যাতে মুভ করতে না পারে, কোনো জিনিস আনলোড করতে না পারে সেজন্য জাহাজগুলোতে সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট