চট্টগ্রাম রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রবিউলের

বড় ভাইয়ের ‘নির্দেশে’ জোড়া খুন

নাজিম মুহাম্মদ

১০ মে, ২০২৩ | ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার রাতে পাহাড়তলীতে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে। হত্যার ঘটনায় যারা অংশ নিয়েছেন তাদের সবার বয়স ১৬ থেকে ২৪ বছরের কোটায়। পাহাড়তলী থানা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কথিত বড় ভাই ইলিয়াছ মিঠুর অনুসারী এসব কিশোর ও তরুণরা চলাফেরা করত বন্ধুর মত। মিঠুকে সবাই বড় ভাই বলে সম্বোধন করত।

সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় সিরাজুল ইসলাম শিহাব ও বন্ধু রবিউলের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও মারামারি হয়। ওই ঘটনার মীমাংসা করার কথা বলে দু’পক্ষকে ডেকে রাত আটটার (সোমবার) বৈঠকে বসে ‘বড় ভাই’ শ্রমিক লীগ নেতা ইলিয়াছ। ওই বৈঠকে ইলিয়াছের সামনেই বেদড়ক পিটুনি ও ছুরিকাঘাত করে মাসুম ও সজীব নামে দুই যুবককে খুন করা করা হয়। এ ব্যাপারে নিহত মাসুমের ভাই মনির হোসেন বাদী হয়ে গতকাল পাহাড়তলী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলায় ১৮ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে। মনিরের দাবি ‘বড় ভাই’ মিঠুর নির্দেশে পূর্ব পরিকল্পিভাবে এ খুনের ঘটনা সংগঠিত হয়েছে।

পাহাড়তলী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জোড়াখুনের ঘটনা ঘটেছে। খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইলিয়াছ মিঠুসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে রবিউল নামে এক আসামি হত্যার ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে গতকাল বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, মারামারিতে অংশ নেয়া সকলেই পাহাড়তলী থানা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াছ মিঠুর অনুসারী। সবাই এক সাথে বন্ধুর মত চলাফেরা করে। নিহত মাসুমের ভাই মনির হোসেন জানান, গত ৮ মে সন্ধ্যা সাতটায় সাগরিকা জহুর আহমদ স্টেডিয়াম এলাকায় মাসুমের বন্ধু সিরাজুল ইসলাম শিহাব তার বান্ধবীকে নিয়ে ঘুরতে যায়। ওই সময় শিহাবকে উদ্দেশ্য করে রবিউল বলেন, ‘ওই মেয়ের সঙ্গে তোকে মানায়নি’। বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে মারামারিও হয়। ঘটনার পর ইলিয়াছ মিঠুকে বিষয়টি জানায় রবিউল। রাত আটটার সময় সিরাজুল ইসলাম শিহাবকে ফোন করে মিঠু বলেন, বিষয়টি মীমংসা করতে হবে। শিহাবকে পাহাড়তলী উত্তর কাট্টলী সাগরিকা রোডের বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের গেটের সামনে যেতে বলেন। এ সময় শিহাবের সাথে বন্ধু মাসুম, সজীব, ফাহিম, রোকন, রজিন, তুহীন, মেহেদী হাসান, ইউসুফ ও প্রান্ত সাথে যায়। সেখানে মিঠুর সাথে রবিউলসহ প্রায় ২০/২৫ জন ছেলে ছিল। উভয় পক্ষ কথা বলছিল। এক পর্যায়ে শ্রমিক লীগ নেতা ইলিয়াছ মিঠু রবিউলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘শালাদের মার’। মিঠুর নির্দেশে পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে রবিউল ও তার অনুসারীরা কাঠের বাটাম দিয়ে মাসুমদের বেদড়ক মারধর করে একপর্যায়ে মাসুম ও সজীবকে একাধিক ছুরিকাঘাত করে ফয়সাল, রনি ব্রো, বাবু এবং আকাশ। আহত মাসুম ও সজীবের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে মিঠু, রবিউলসহ অন্যরা পালিয়ে যায়। দুইজনকে লোকজন রক্তাক্ত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন। মনিরের দাবি, শ্রমিক লীগ নেতা ইলিয়াছ মিঠুর নির্দেশে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

১৮ জনকে আসামি করে মামলা : জোড়াখুনের ঘটনায় গতকাল দুুপুরে পাহাড়তলী থানায় নিহত মাসুমের ভাই মনির হোসেন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৮ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন, মো. ইলিয়াছ মিঠু (৪৫), কার্তিক বণিক ওরফে আবদুর রহিম, বিপ্লব মল্লিক প্রকাশ মো. বিপ্লব, রবিউল ইসলাম, রায়হান উদ্দিন, মো. শামীম, সাগর দাশ, রবিউল হাসান হৃদয়, রনি, আমজাদ হোসেন, বাবু, ফয়সাল, রনি ব্রো, আকাশ, রাকিব, ইয়াছিন, রাতুল ও জাকির। এদের মধ্যে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন, আনোয়ারা বারখাইনের মো. ইলিয়াছ মিঠু, সীতাকুণ্ডের জীবন বণিকের ছেলে কার্তিক বণিক ওরফে আবদুর রহিম (২৯), পটিয়ার মৃত নির্মল মল্লিকের ছেলে বিপ্লব মল্লিক ওরফে মোহাম্মদ বিপ্লব (২৮), নোয়াখালীর সেনবাগের রবিউল ইসলাম (২০), জোরারগঞ্জের রায়হান উদ্দিন (১৯), লাকসামের মো. শামীম (২৮), আনোয়ারার সাগর দাশ (২০) ও ফেনীর দাগভুঞার রবিউল হাসান হৃদয় (১৬)। এদের মধ্যে রবিউল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে গতকাল বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। ছয়জনকে পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

 

 

পূর্বকোণ/এ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট