চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

৫ বছরে আবাদ বেড়েছে ৭ গুণ

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১৩ নভেম্বর, ২০২২ | ১২:৩৪ অপরাহ্ণ

ভোজ্যতেলের ওপর আমদানি-নির্ভরতা কমাতে দেশে তেলজাতীয় ফসলের আবাদ বাড়ানোর বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে কৃষি অধিদপ্তর। এ লক্ষ্যে তিল, সূর্যমুখী ও চিনাবাদামের আবাদ লক্ষ্যমাত্রাও বড় আকারে বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। তিন বছর মেয়াদি এ বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।

কৃষি বিভাগ জানায়, ২০১৪-২০১৫ মৌসুমে চট্টগ্রামে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩৫১ হেক্টর জমি। ২০২২-২০২৩ সালে বিশেষ পরিকল্পনায় সরিষার আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২৪’শ হেক্টরে যা গত পাঁচ বছরের তুলনায় ছয় দশমিক ৮৪ শতাংশেরও বেশি। শতাংশ হিসাবে ৫৮৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

এ বিশেষ পরিকল্পনায় একই সঙ্গে তেলজাতীয় আরও তিনটি ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাতে তিল, সূর্যমুখী ও চিনাবাদামের আবাদ এবং উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তিলের আবাদ ধরা হয় ৪৫ হেক্টর, সূর্যমুখীর আবাদ ৪৫ হেক্টর এবং চিনাবাদামের লক্ষ্য ধরা হয় ১৭৫০ হেক্টর জমিতে।

 

কৃষি বিভাগ জানায়, ভোজ্যতেল জাতীয় ফসল উৎপাদনে চাষের সময় আর খরচ দুটোই কম হওয়ায় সরকার এ পরিকল্পনা নিয়েছে। কৃষকের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সরিষা চাষ। গত কয়েক বছরে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের ফলে শস্যটির ফলনও আগের চেয়ে বেড়েছে। মূলত ভোজ্যতেলের আমদানি-নির্ভরতা কমাতে সরিষাকে বিকল্প হিসেবে দেখছে সরকার। এজন্য ফসলটির উৎপাদন বাড়াতে নেওয়া হয়েছে বড় প্রকল্প। ফসলের শ্রেণিবিন্যাসে পরিবর্তন এনে গতিশীল করা হচ্ছে সরিষার চাষ। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সরিষার উৎপাদন বাড়িয়ে দেশে ভোজ্যতেলের আমদানি-নির্ভরতা এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ভোজ্যতেলের আমদানি-নির্ভরতা কাটিয়ে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এজন্য বোরো ও আমনের মাঝামাঝি সময়ে সরিষা আবাদের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।

 

কৃষিবিদ আখতারুজ্জামান বলেন, তিন বছর মেয়াদি বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। চলতি মৌসুমে বিশেষ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪’শ হেক্টর। পরের বছর ৬ হাজার এবং তার পরের বছর ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ভোজ্যতেল আবাদের বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদার মাত্র ১২ শতাংশ দেশে উৎপাদন হয়। বাকিটা আমদানি করে দেশীয় চাহিদা পূরণ করা হয়। আগামী তিন বছরে দেশে উৎপাদন ১২ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত করার জন্য এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বিশ্বে সরিষা উৎপাদনের শীর্ষে রয়েছে কানাডা, গণচীন, নেপাল, নাইজেরিয়া ও থাইল্যান্ড। তিল উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে মিয়ানমার, ভারত, গণচীন, সুদান, তানজানিয়া, চীনাবাদাম আমদানি করে গণচীন, ভারত, নাইজেরিয়া। এসব দেশ থেকে সরিয়াসহ তেলজাতীয় শস্য আমদানি করে বাংলাদেশ।

 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ২০১৮ সালে দেশে ৪৬.২১ লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানিতে ২৭ দশমিক ৭৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের ফলে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েক বছরে এই আমদানি হার আগের বছরগুলোর তুলনায় আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাথাপিছু দৈনিক ৪০ গ্রাম হারে ভোজ্যতেল প্রয়োজন।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে বার্ষিক ভোজ্যতেলের চাহিদা ১৬ লাখ টন। চাহিদার বিপরীতে দেশে উৎপাদন হয় মাত্র দুই লাখ টন। বাকি ১৪ লাখ টন তেল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। যার পেছনে ১২ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। মূলত আমদানিনির্ভরতা কমাতে সরকার দেশের তেলজাতীয় শস্য উৎপাদন বাড়ানোর বড় পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। খরচ কমাতে দেশে ভোজ্যতেলের উৎপাদন বাড়ানোর জোর চেষ্টা করছে। এজন্য সরিষা, তিল ও স‚র্যমুখীসহ অন্যান্য তেলজাতীয় শস্য আবাদের ক্ষেত্র বাড়ানোর তিন বছর মেয়াদি প্রকল্প নিয়েছে।

 

পূর্বকোণ/এএস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট