চট্টগ্রাম বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

গো-চারণ ভূমিতে পরিণত খেলার মাঠ

মিটু বিভাস

৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ | ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ

বিষণ্ন মুখে হালিশহর হাউজিং এস্টেট মাঠের পূর্ব পাশে দাঁড়িয়ে আছেন দুই কিশোর মো. সজীব ও নূর আলম। প্রথম জন উত্তর কাট্টলী মোস্তফা হাকিম কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র এবং অপরজন গরীবে নেওয়াজ স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়াশুনা করে।

গত শনিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এ দুই শিক্ষার্থী এসেছিল মাঠে। গত চার মাস ধরে বন্ধের দিন তারা নিয়মিত খেলার জন্য মাঠে আসে। তবে মাঠের দুরবস্থায় খেলতে না পেরে বাসায় ফেরত যেতে হয়েছে তাদের। গত কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুম শুরুর পর থেকে শীত পর্যন্ত ব্যবহারের অনুপযোগী থাকে এ মাঠটি।

হালিশহর হাউজিং সোসাইটি এলাকায় প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক লোকের বসবাস থাকলেও খেলার মাঠ মাত্র এই একটি। সংস্কারের অভাবে এখন বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময় পরিত্যক্ত হিসেবে পড়ে থাকে মাঠটি। অথচ এ মাঠে একসময় বছর জুড়ে হাজারো শিশুর পদচারণায় মুখরিত থাকত। স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠকদের আয়োজনে প্রতি মাসেই আয়োজিত হতো কোনো না কোনো টুর্নামেন্ট। এসব এখন যেন কেবলই স্মৃতি তাদের কাছে।

স্থানীয় আই ব্লকের বাসিন্দা এই দুই শিক্ষার্থী জানায়, ছোটবেলা থেকেই এ মাঠে খেলাধুলা করেছি। কিন্তু গত দুই বছর ধরে মাঠে নামতে পারি না। পুরো হালিশহরে আর কোন বিকল্প খেলার মাঠ নেই।

একসময় আবাহনী মাঠে খেলার সুযোগ থাকলেও কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ঐ মাঠেও খেলতে পারি না। তাই মাঠ থেকেও খেলতে না পারায় হতাশ সজীব ও নূরের মতো এলাকার প্রায় প্রত্যেক শিশু কিশোর। বর্তমানে তাদের একটাই দাবি মাঠটি সংস্কার করে দ্রুত খেলার উপযোগী করে তোলা হোক। একসময় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের সদস্যরা এ মাঠে প্যারেড করত বলে স্থানীয়দের কাছে এ মাঠটি বিডিআর মাঠ নামেও পরিচিত।

সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পুরো মাঠ জুড়ে কাদা পানিতে একাকার। মাঠের চারপাশে ওয়াকওয়েগুলো চলাচলের অযোগ্য। স্থানীয় ক্রীড়াবিদদের পরিবর্তে মাঠে বিচরণ করছে কিছু গবাদিপশু।

মাঠের বর্তমান অবস্থা সর্ম্পকে ছাত্র নেতা গোলাম সাদমানি জনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই এ মাঠে খেলে বড় হয়েছি। কিন্তু গত দশ বছর ধরে এ মাঠের উপর যেন শনি ভর করেছে। ২০১৩ সালের দিকে মাঠটি স্থানীয় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে বরাদ্দ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয়দের আন্দোলনের মুখে সে যাত্রায় রক্ষা পায় মাঠটি। এরপর ২০১৭ সালে তৎকালীন মেয়রের সহযোগিতায় মাঠটি ভরাট করে উঁচু করা হয়েছিল। এরপর মাঠের তিনপাশে রাস্তা উঁচু করায় মাঠটির এ দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, এটি বর্তমানে রাস্তা থেকে তিন ফুট নিচে। নতুনভাবে মাটি ফেলে ভরাট করা না গেলে এটি খেলার উপযুক্ত হবে না। তিনি আরও বলেন, সিটি কর্পোরেশন পক্ষ থেকে কিছুদিন আগে মাঠটি সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল। এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

স্থানীয় সাংসদের নির্দেশে মাঠটি বর্তমানে দেখাশুনা করে হালিশহর ফ্রেন্ডস ইউনিট সোসাইটি নামের একটি সংগঠন। সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, স্থানীয় শিশু কিশোরদের খেলার সুবিধার্থে ২০১৭ সালে মাঠটি সংষ্কার করা হয়েছিল। সে সময় মাটি ভরাটের পাশাপাশি চারপাশে ওয়াকওয়ে এবং ৩৬টি সোলার লাইট স্থাপন করা হয়েছিল।

স্থানীয় সাংসদের অনুরোধে জেলা পরিষদ থেকে আট লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এছাড়া ফ্রেন্ডস সোসাইটির বর্তমান সভাপতি ফরিদ আহমেদ বাবুসহ স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠকরা এ উন্নয়ন কাজে আর্থিক সহযোগিতা করেছিলেন। কিন্তু দুইবছরও ঠিকমতো খেলাধুলা করতে পারেনি স্থানীয় শিশু কিশোররা। পাশের সড়ক সংস্কারের পর আবারও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, এলাকার শিশু কিশোরদের স্বার্থে মাঠটি দ্রুত সংস্কার করা উচিত।

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট