চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে কর কর্তনের বিধান বাতিল চাই

নিজস্ব প্রতিবেদক

৮ মে, ২০২৪ | ১:১৩ অপরাহ্ণ

আসন্ন নতুন অর্থবছরের বাজেটে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের উপর কর কর্তনের বিধান বাতিল করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন ইস্পাত শিল্পের শীর্ষ স্থানীয় প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমের আলী হুসাইন।

 

তিনি বলেন, আগামী বাজেটে আয়কর আইন ২০২৩ এর ধারা ১০৪ এবং ১১৯ এ উল্লেখিত নিবাসীর সুদ আয় হতে কর কর্তনের বিষয়টি বাতিল করা প্রয়োজন। এছাড়া, জমির ওপর দ্বৈত কর অপসারণ করার নির্দেশনা বাজেটে দেখতে চাই। আগামী নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রসঙ্গে পূর্বকোণ প্রতিনিধির সাথে ‘বাজেট ভাবনা’ আলোচনায় বিএসআরএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমের আলী হুসাইন এই দাবিগুলো তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে ব্যবসাবান্ধব ইস্পাত শিল্পের স্বার্থে বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে, আসন্ন ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে ইস্পাত পণ্য বিক্রির টনপ্রতি উৎস কর বর্তমান ২% থেকে কমিয়ে ১% করার দাবি। এছাড়া আসন্ন বাজেটে ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল ফেরাসওয়েস্ট ও স্ক্র্যাপ আমদানির ক্ষেত্রে টনপ্রতি কাস্টমস শুল্ক ১৫শ থেকে কমিয়ে ৫শ এবং টনপ্রতি অগ্রিম আয়কর ৫শ থেকে কমিয়ে ২শ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন আমের আলী হুসাইন। পাশাপাশি তিনি ফেরো এলয়স আমদানিতেও টনপ্রতি রেগুলেটরি ডিউটি ১৫% থেকে কমিয়ে ৫% নির্ধারনের দাবি জানান।

 

ভ্যাট আপিল ও ভ্যাট অডিট প্রসঙ্গে আমের আলী হুসাইন বলেন, বর্তমানে ভ্যাট এর প্রথম আপিলের ক্ষেত্রে ২০% অর্থ জমা দিয়ে ৯০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হয়। আগামী বাজেটে এই ২০% অর্থ জমার শর্ত প্রত্যাহার করা এবং আপিলের সময় ৯০ দিনের পরিবর্তে ১২০ দিন করার দাবি জানাই। এছাড়া ভ্যাট অডিট প্রতি বছর না করে তিন বছরে একবার করার বিধান জারির অনুরোধ জানাই।

 

ইস্পাত শিল্প প্রসঙ্গে আমের আলী হুসাইন বলেন, বর্তমানে ইস্পাত একটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। অবকাঠামো উন্নয়নসহ যে কোন নির্মাণ কাজে ইস্পাত বা রড অপরিহার্য উপাদান। দৈনন্দিন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির ন্যায় রডের মূল্য বৃদ্ধি মানুষের জীবন যাত্রার উপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে। অর্থাৎ মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ ব্যক্তিগত কিংবা রাষ্ট্রীয়ভাবে সকল মানুষই নির্মাণকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
তিনি আরো বলেন, স্টিল উৎপাদনে মোট খরচের ১৫% ব্যয় হয় জ্বালানি খরচ বাবদ। এমন সংকটময় মুহূর্তে হঠাৎ করে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বার বার গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি স্টিল শিল্পকে মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন করে ফেলেছে।

ইস্পাত শিল্পের সংকটের কথা বর্ণনা করে তিনি বলেন, করোনার শুরু থেকে গত ৪ বছর বিভিন্নঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে ইস্পাত শিল্প অস্তিত্ব সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। স্টিল উৎপাদনের কাঁচামাল শতকরা ৭০ ভাগ আমদানি নির্ভর। ডলার সংকটে কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার সমস্যাসহ ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধির কারণে স্টিলের কাঁচামাল আমদানি চরমভাবে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে অধিক মূল্যে ডলার ক্রয়ের কারণে স্টিল উৎপাদনের ব্যয়ভার বৃদ্ধিসহ স্টিল উৎপাদনকারীগণের চলতি মূলধনে ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে।

বর্তমানে দেশের ভৌত অবকাঠামো কাজের মাত্রা মন্থর হওয়ায় এবং বেসরকারি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে নির্মাণ কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়ায় স্টিল শিল্প ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সেই সঙ্গে নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হাউজিং, সিমেন্ট, বালু, সিরামিক-হার্ডওয়ারসহ শতাধিক শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত। সামগ্রিকভাবে স্টিল শিল্পসহ এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৫০ লাখ জনবল অর্থনৈতিকভাবে বিপন্ন। বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ ও দীর্ঘ সময়ের পরিশ্রমে গড়ে উঠা ইস্পাত শিল্প বর্তমানে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অস্তিত্ব সংকটের সম্মুখীন। তাই বাজেট প্রণয়নের সময় ইস্পাত শিল্প রক্ষার্থে এই খাতের ব্যবসায়ীদের দাবি পূরণের বিকল্প নেই।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট