চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ৯ সার্ভেয়ারকে একযোগে বদলি

আরফাতুল মজিদ

২০ জুলাই, ২০২২ | ১২:৫৭ অপরাহ্ণ

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখার ৯ জন সার্ভেয়ারকে একযোগে বদলি করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন জেলা থেকে অপর ৯ জন সার্ভেয়ারকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায় পাঠানোর নির্দেশনাও দিয়েছে। আগামী ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে বর্তমান কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত হয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় ২৫ জুলাই তাদের স্ট্যান্ড রিলিজ করা হবে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশনা দেয়া হয়।

গতকাল (মঙ্গলবার) কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ সার্ভেয়ার বদলির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। গত ১ জুলাই ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার সার্ভেয়ার আতিকুর রহমান ২৩ লাখ নগদ টাকাভর্তি ব্যাগসহ ধরা পড়েন। সার্ভেয়ার আতিক ঢাকায় দুদকের হাতে আটকের পর আবারো আলোচনায় আসে এলএ শাখার দুর্নীতি। প্রশাসনের সুনাম ধরে রাখতে এবার একযোগে ৯ সার্ভেয়ারকে বদলি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বদলি হওয়া সার্ভেয়ার মো. সাইফুল ইসলামকে ফেনী পরশুরাম উপজেলা ভূমি অফিসে, দুলাল খানকে রাঙামাটির কাপ্তাই, মো. ইব্রাহিম ফয়সালকে বান্দরবান সদর ভূমি অফিসে, মীর্জা মোহাম্মদ নুরে আলমকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, হযরত আলীকে নোয়াখালীর হাতিয়ায়, মো. আব্দুল কাইয়ুমকে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে, মো. শরিফুল ইসলামকে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে, জিয়াউর রহমানকে বান্দবানের আলীকদমে এবং মোহাম্মদ নুর উদ্দিন আলমকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ভূমি অফিসে পদায়ন করা হয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ জানান, অবৈধ উপায়ে অর্জিত টাকাসহ ধরা পড়া সার্ভেয়ারকে পরে তিনি সদর মডেল থানায় সোপর্দ করে কঠোর শাস্তি বিধানের জন্য লিখিত আবেদন জানান। দুর্নীতি দমন কক্সবাজার সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন সার্ভেয়ার আতিকুর এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়েরপূর্বক নিজেই মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আদালত ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সার্ভেয়ার আতিকুরকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, এলএ শাখার সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠায় তাদের বদলি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সব সময় সরকারের হয়ে জনকল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে প্রশাসনের সুনাম ক্ষুন্ন হতে পারে না।
প্রসঙ্গত, সার্ভেয়ার আতিকুর রহমান মহেশখালী দ্বীপের ধলঘাটা ও মাতারবাড়ির গভীর সমুদ্র বন্দর ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন কর্তৃক্ষের জন্য এক হাজার ৫০০ একর অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধের দায়িত্ব পালন করছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, সার্ভেয়ার আতিকুর সেই দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে মাতারবাড়ি ও ধলঘাটার স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির যোগসাজশে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের নিকট থেকে কমিশন বাণিজ্যের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

এর আগে, ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় কমর্রত সার্ভেয়ার ওয়াসিম খানের বাসায় অভিযান চালিয়ে র‌্যাব সদস্যরা নগদ ৫ লাখ টাকাসহ আটক করে। পরবর্তীতে আরো দু’জন সার্ভেয়ার ফরিদ উদ্দিন ও ওয়াসিম হোসেনের বাড়ি থেকে যথাক্রমে ৬৩ লাখ এবং ২৫ লাখ টাকাসহ সর্বমোট ৯৩ লাখ টাকা উদ্ধার করে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন একটি মামলা দায়ের করে। ওই ঘটনায়ও এক দফায় ৩৪ সার্ভেয়ার প্রত্যাহার করা হয়েছিল। বদলি হওয়া ৯ সার্ভেয়ার দুই বছর আগে প্রত্যাহার হওয়া ৩৪ জন সার্ভেয়ারের স্থলে যোগ দিয়েছিলেন।

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট