চট্টগ্রাম রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

রাত গভীর হলেই ওঁৎ পেতে থাকে ওরা

নাজিম মুহাম্মদ

২০ জুলাই, ২০২২ | ১২:৪০ অপরাহ্ণ

রাত গভীর হলেই সড়কে ওঁৎ পেতে থাকে ওরা। নগরীর ব্যস্ততম দুই নম্বর গেট থেকে জিইসি মোড় এলাকায় ছিনতাইয়ের সঙ্গেও এরাই জড়িত। গত রবিবার মধ্যরাতেও তারা ছিনতাইয়ে নেমেছিল। এরমধ্যে ২৩ বছর বয়সী এক গার্মেন্টস কর্মীকে একা পেয়ে তার গতিরোধ করে। পরে তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। গণধর্ষণের অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে সবাইকে।

পুলিশ জানায়- রবিবার মধ্যরাতে জিইসি এলাকায় এক তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের একটি দল। ওই তরুণীকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে পাঠানোর পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে তিন যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আরও ৩ যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ৬ যুবক হলেন- পটিয়ার আবদুল করিমের ছেলে ফারুক হোসেন (২৮), কুমিল্লার দাউদকান্দির মো. মোস্তফার ছেলে আবদুর রহমান (২৬), খুলশীর ঝাউতলা রেলগেটের চান মিয়ার ছেলে মো. আরিফ (২০), মৌলভী বাজারের রাজনগরের নুরুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম শান্ত (২৬), কক্সবাজারের ঈদগাঁর নুর হোসেনের ছেলে আবদুল খালেক (২০) এবং গাজীপুরের টঙ্গী থানার মনিরের ছেলে মো. হোসেন (২১)। পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া যুবকদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম শান্ত দুই নম্বর থেকে জিইসি এলাকায় ছিনতাইচক্রের হোতা। তার বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র আইনে খুলশী থানায় মামলা রয়েছে। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া মো. আরিফ, আবদুল খালেক এবং মো. হোসেন ওই চক্রের সদস্য। আর ফারুক নগরীর একটি হাসপাতালের সুইপার এবং রহমান রিকশাচালক। গ্রেপ্তারের পর ছয় যুবককে গতকাল মঙ্গলবার আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

কী ঘটেছিলো সেদিন রাতে :
গণধর্ষণের শিকার তরুণী খুলশী থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলেন- স্বামী, সন্তান ও বৃদ্ধ মা নিয়ে বায়েজিদের ভাড়া বাসায় বসবাস করেন তিনি। কাজ করেন একটি পোশাক কারখানায়। গত রবিবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টায় জনৈক রাকিবের রিকশায় খুলশী থানার ঝাউতলায় খালার বাসায় যাচ্ছিলেন তিনি। রাত প্রায় একটার দিকে সানমার সংলগ্ন ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে লর্ডস ইন হোটেলের দিকে যাওয়ার পথে বাটা গলি সংলগ্ন সাদিয়া’স কিচেনের পাশে পৌঁছামাত্র আনুমানিক ২৮ থেকে ৩০ বছরের তিনজন যুবক রিকশার গতিরোধ করে।

পরে তারা ওই তরুণীকে নাসিরাবাদ স্কুলের মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে ছিল আরো তিনজন। ছয়জন মিলে পালাক্রমে ওই তরুণীকে জোর করে ধর্ষণ করে। এ সময় তরুণীকে বহনকারী রিকশাচালক রাকিব একটু দূরে গিয়ে আরেক রিকশাচালক আবদুল হান্নানকে বিষয়টি জানান। হান্নান জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করলে খুলশী থানা পুলিশ এসে তরুণীকে উদ্ধার করেন।

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, রবিবার মধ্যরাতে ঘটনাস্থল থেকে প্রথমে আমরা তিনজনকে আটক করি। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তরুণীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে। তাদের দেয়া তথ্যমতে ধর্ষণে অভিযুক্ত আরো তিনজনকে সোমবার গ্রেপ্তার করা হয়। তারাও ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করে। উদ্ধারের পর তরুণীকে চমেক হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়।

সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, নাসিরাবাদ স্কুল মাঠের দক্ষিণাংশের বাউন্ডারি ওয়ালের কিছু অংশ ভাঙা রয়েছে। ওই তরুণীকে একা পেয়ে তারা ওয়ালের ভাঙা অংশ দিয়ে মাঠে নিয়ে পলাক্রমে ধর্ষণ করে। তিনি বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া যুবকরা রাত হলেই দুই নম্বর গেট থেকে জিইসি মোড় এলাকায় ছিনতাইসহ নানা অপরাধ করে বেড়ায়। দুই নম্বর থেকে জিইসি এলাকায় ছিনতাইচক্রের হোতা শান্তর বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র আইনে মামলা রয়েছে বলে জানান ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা।

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট