চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এফএমসি ডানা মেলেছে বিদেশেও

১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | ৩:৩৮ অপরাহ্ণ

যুবায়ের তনিম

 

প্রাচীনকাল থেকেই নৌকা ও জাহাজনির্মাণে বাংলাদেশের খ্যাতি রয়েছে। চট্টগ্রামেই নির্মিত হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী জাহাজ ও কাঠের নৌকা। মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় পরিব্রাজক সিজার ফ্রডেরকিরে ভাষ্য মতে, চট্টগ্রাম পঞ্চদশ শতকে এ অঞ্চল বড় কাঠের জাহাজনির্মাণ শিল্পের মূলকেন্দ্র ছিল। মোগল আমলে বাংলা জাহাজ ও নৌকা তৈরি কাজে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি পায়। উনিশ শতক পর্যন্ত চট্টগ্রাম ১০০০ টন ধারণক্ষমতার জাহাজনির্মাণে সক্ষম ছিল। কিন্তু কাঠের যুদ্ধ জাহাজের পরিবর্তে লৌহ নির্মিত যুদ্ধ জাহাজ তৈরি করা শুরু হয় উনিশ শতকের শেষভাগে। এরপর বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে কিছুটা স্থবিরতা নেমে আসে।

আশাব্যাঞ্জক হচ্ছে, এফএমসি ডকইয়ার্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরীর মতো তরুণ মেধাবী উদ্যোক্তাদের হাত ধরে বাংলাদেশ আবারো জাহাজনির্মাণ শিল্পের সেই হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনার পথে। বিগত এক-দেড় শতাব্দী ধরে স্থবির এই শিল্পে নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে এই মেধাবী তরুণদের সুযোগ্য নেতৃত্বে। যদিও জাহাজ নির্মাণ শিল্পের প্রথম প্রজন্ম হিসাবে অনেক সমস্যার ও সম্মুখীন হতে হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে।

এফএমসি ডকইয়ার্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী বলেন, ‘আমার স্বপ্ন বাংলাদেশকে একটি শিপ বিল্ডিং ক্ল্যাস্টার হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা। যত সমস্যা, বাধা-বিপত্তি আসুক না কেন, আমরা আমাদের লক্ষ্যে অবিচল। আমি আশাবাদী আরএমজি সেক্টরের মতো, একদিন গ্লোবাল শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিতে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ।

৩৩ বছর বয়সে তিনি শুরু করেছিলেন তাঁর স্বপ্নযাত্রা। চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর পশ্চিম গোমদ-ীতে কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে প্রায় ৬৫ একর জমির ওপর গড়ে  তোল হয় এফএমসি ডকইয়ার্ড লিমিটেড। যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় শিপ ইয়ার্ড হিসাবে স্বীকৃত। অত্যাধুনিক এলটিসি ভ্যাসলে, টসিভি ভ্যাসলে, অত্যাধুনিক মাল্টি পারপাস ভ্যাসলে, ব্যারাক বার্জ, মাল্টিবীম ইকো সাউন্ডার সংযুক্ত সার্ভে ভ্যাসলে, কন্টেইনার শিপ, অয়েল ট্যাংকার, যাত্রীবাহী জাহাজ, ফিশিং ট্রলার, ড্রেজার, টাগ বোট, পন্টুনসহ মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার নির্মাণ করে এফএমসি। এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও জাহাজ রপ্তানি করছে এ প্রতিষ্ঠানটি।

২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এফএমসি ডকইয়ার্ড এ যাবত সরকারি-বেসরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রায় ২০০টি নতুন জাহাজ তৈরি করেছে। বর্তমানে এই ইয়ার্ডে প্রায় ১২০০ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। জাহাজ মেরামত এবং জেটি তৈরিতেও এক পরম নির্ভতার নাম এফএমসি ডকইয়ার্ড লিমিটেড।

বিশ^ব্যাপী ব্যবসায়িক প্রসারের উদ্দেশ্যে বিশ্বের কয়েকটি দেশে এফএমসি গ্রুপের শাখা অফিস রয়েছে। বর্তমান সরকারের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী এফএমসি ডকইয়ার্ড দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি শিগগিরই বিদেশেও জাহাজ রপ্তানি করতে যাচ্ছে। বর্তমানে সুদান সরকারের জন্য নির্মিতব্য একটি অত্যাধুনিক এএসডি টাগবোটের নির্মাণ কাজ চলছে।

এছাড়াও কয়েকটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সাথেও জাহাজ নির্মাণের চুক্তি করতে যাচ্ছে এফএমসি। যা শুধু দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনবে না, সেই সাথে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হবে। জাহাজ রপ্তানির জন্য আরও কয়েকটি দেশের কাছ থেকে আরো ১৫০ থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলারের কার্যাদেশ পাওয়ার অপেক্ষায় আছে এফএমসি। করোনার কারণে উক্ত কার্যাদেশ প্রাপ্তিতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ আন্তর্জাতিক সাময়িকী ইউআরএস এশিয়া ওয়ান আয়োজিত ১৫তম এশিয়া আফ্রিকা বিজনেস এন্ড সোশ্যাল ফোরাম-২০২১ (এএবিএসএফ) এ ‘ওয়ার্ল্ড’স গ্রেটেস্ট ব্র্যান্ডস এন্ড লিডার্স ২০২০-২১’-এ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী এফএমসি গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী ‘ওয়ার্ল্ড’স গ্রেটেস্ট লিডার্স ২০২০-২১’ এবং তাঁর মালিকানাধীন জাহাজনির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এফএমসি ডকইয়ার্ড লি. ‘ওয়ার্ল্ড’স গ্রেটেস্ট ব্র্যান্ড’ নির্বাচিত হয়েছে। এশিয়া আফ্রিকা বিজনেস এন্ড সোশ্যাল ফোরাম শুধুমাত্র এশিয়া মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার সেরা ব্র্যান্ডগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শনের জন্য নয় বরং বিশ্বমানের এবং সর্বোত্তম-শিল্প সংস্থাগুলোর অর্জনকে সামনে আনার জন্য একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্ম।

একমাত্র বাঙালি হিসাবে মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী এবং তাঁর মালিকানাধীন এফএমসি ডকইয়ার্ড লি. ব্র্যান্ড হিসাবে বিশ্বের অন্যতম অভিজাত এই দু’টি পুরস্কার লাভ করেন। ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক সাময়িকী এশিয়া ওয়ান আয়োজিত চতুর্থ ‘এশিয়া’স গ্রেটেস্ট ব্র্যান্ডস এন্ড লিডার্স ২০১৯-২০’ এ এশিয়া’স গ্রেটেস্ট লিডার নির্বাচিত হয়েছিলেন এফএমসি গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী। শিল্পোন্নয়নে অনন্য অবদান এবং স্বতন্ত্র কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে এই পুরস্কার দেয়া হয় ।

ব্যবসায়িক কর্মকা- ছাড়াও বহু আগে থেকেই তিনি একজন জনপ্রিয় ক্রীড়া সংগঠক, সমাজসেবক এবং শিক্ষানুরাগী হিসেবে খ্যাতি রয়েছে এয়াছিন চৌধুরীর। স্থানীয় ক্রিকেটারদের তোলে আনার লক্ষ্যে তিনি গঠন করেছেন এফএমসি স্পোর্টস ক্লাব। বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটকে প্রমোট করার জন্য আইসিসি অনুমোদিত বিশ্বের প্রথম এবং একমাত্র আন্তর্জাতিক টি টেন ক্রিকেট লিগ ‘আবুধাবী টি ১০’ লিগে মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরীর মালিকানাধীন বাংলাদেশের একমাত্র ফ্রাঞ্চাইজি টিম ‘বাংলা টাইগার্স’ ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছর অংশগ্রহণ করে আসছে। মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরীর একমাত্র স্বপ্ন, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রীড়া খাতে বাংলাদেশের নাম একদিন বিশ্বের প্রথম সারিতে থাকবে এবং আজকের মেধাবী তরুণ প্রজন্মই তাতে নেতৃত্ব দেবে। তার আশা, সেই দিন খুব বেশি দূরে নয়।

লেখক: প্রাবন্ধিক

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট