চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

উৎপাদনে কৃষক খুশি, দামে অখুশি

২৭ জানুয়ারি, ২০২২ | ১:৩৪ অপরাহ্ণ

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন 

চন্দনাইশ ও সীতাকুণ্ড দুই উপজেলাকে সবজি ভাণ্ডার বলা হয়। এছাড়াও পটিয়া, আনোয়ারা ও বাঁশখালীতেও প্রচুর সবজির চাষ হয়। চট্টগ্রামের সবজির চাহিদা মেটানো হয় এখানকার উৎপাদিত সবজি দিয়ে। অথচ কয়েক বছর আগেও উত্তর বঙ্গ ও বিভিন্ন জেলার সবজি দিয়ে চাহিদা মেটানো হতো। এখন নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় যাচ্ছে চট্টগ্রামের সবজি। কৃষক ও কৃষি বিভাগ জানায়, সবজিতে এখন ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকেরা। হাইব্রিড বীজে বছরজুড়ে সবজির চাষ হচ্ছে। শীত ছাড়াও অন্য মৌসুমেও সবজিতে ভরপুর থাকে। আর ধান উৎপাদনে এখন খরচ বেশি হচ্ছে। এসব কারণে ধানের চেয়ে সবজিতে বেশি ঝুঁকছেন চাষিরা। চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, ‘সবজির দাম ভালো পাচ্ছেন কৃষকেরা। এতে বাণিজ্যিকভাবে সবজি উৎপাদন বছর প্রতি বাড়ছে।’ তিনি বলেন, ধানে খরচ বেশি পড়ছে। তাই ধানের চেয়ে সবজি চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠছেন কৃষকেরা।’ কৃষি বিভাগের কয়েক বছরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতি বছর সবজির চাষাবাদ বাড়ছে। গত বছরের তুলনায় এবার সবজি উৎপাদন বেড়েছে এক লাখ ৫৮ হাজার ৫৬৬ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০১৪-‘১৫ মৌসুমে চট্টগ্রামে সবজি উৎপাদন হয়েছে তিন লাখ ৬৪ হাজার ৭৮৮ মে. টন। চলতি মৌসুমে (২০-২১ সাল) হয়েছে ৬ লাখ ৪৯ হাজার ৮২৪ মে. টন। অর্থাৎ ৬ বছরে সবজি উৎপাদন বেড়েছে ৭৮ শতাংশ। ২০১৪-১৫ সালে আবাদ হয়েছিল ১৭ হাজার ১৭৬ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে আবাদ হয়েছে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘চট্টগ্রামে অনেক পতিত জমি রয়েছে। চাষাবাদ বাড়ানোর আরও সুযোগ রয়েছে। প্রণোদনার মাধ্যমে নতুন নতুন সবজি উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছি আমরা।’
চন্দনাইশের কৃষক রেজাউল করিম বলেন, ‘৫ বছর আগে জমির পরিমাণ অর্ধেক ছিল। উৎপাদন ও লাভ ভালো হওয়ায় বছর প্রতি জমির পরিমাণও বাড়িয়েছি। এবার ২০ শতক জমিতে ফুল-বাঁধাকপি ও শিমের চাষ করেছি।’ এখলাছ উদ্দিন নামে আরেক চাষি বলেন, ‘৬৫ শতক জমিতে সবজি চাষ করেছি। প্রতি হাটে দু-এক বছর লাখ টাকার বেশি সবজি বিক্রি করি। গত মৌসুমের চেয়ে এবার সবজির দাম ভালো পাইনি। তবে মৌসুমের শুরুতে ভালো দাম পেয়েছিলাম।’
চন্দনাইশ ও সীতাকুণ্ডের একাধিক মাঠ কৃষকের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, কয়েক বছর ধরে সবজির ভালো ফলন হচ্ছে। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় সবজি চাষে খুশি চাষিরা। মৌসুমের শুরুতে ভালো দাম পেলেও মাঝদিকে এসে দাম পড়ে যায়।
নগরীর ২নং গেট ষোলশহর কর্ণফুলী বাজারের সবজি বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘৫-৬ বছর আগেও উত্তরবঙ্গ থেকে এনে এখানকার চাহিদা মেটানো হতো। সেই অবস্থা এখন পাল্টে দিয়েছেন আমাদের কৃষক। সবজির চাহিদা ৯০ শতাংশ পূরণ করা হচ্ছে এখানকার উৎপাদিত সবজি দিয়ে।’
কৃষক আখতারুজ্জামান বলেন, নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ও কৃষি বিভাগের সাপোর্ট পেয়ে কৃষক উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। এতে সবজি উৎপাদন বেড়েই চলেছে। এছাড়াও উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ ব্যবহারে উৎপাদন বাড়ছে।
চাষিরা জানান, শীতের সবজি খ্যাত ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, টমেটো, বেগুনের জন্য এখন আর শীতকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় না। এখন গ্রীষ্মকালেও শীতের সবজির আবাদ করা হয়। এক মৌসুমে দুই-তিন বার ফসল উৎপাদন করা যায়। এছাড়া ধান চাষে খরচ বেশি। লোকসান গুনতে হয়। সবজিতে সেই শঙ্কা থাকে না। তবে সবজির চাষ বাড়লেও দামে হতাশ চাষিরা। কৃষকের লাভ লুটে নিচ্ছেন ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীরা।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট