চট্টগ্রাম বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রাম থেকে বন্ধ সবজি রপ্তানি

মোহাম্মদ আলী 

৪ জুন, ২০২১ | ১:১২ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম থেকে বন্ধ হয়ে গেছে সবজি ও ফলমূল রপ্তানি। এতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন রপ্তানিকারকরা। করোনা লকডাউনের কারণে গত দেড় মাস ধরে চট্টগ্রাম শাহ আমানত (রাহ.) বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের ফল ও সবজির চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে বহির্বিশ্বে। এর মধ্যে তুলনামূলক বেশি রপ্তানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে। সবজির পাশাপাশি মৌসুমী ফলও রপ্তানি হয়। তবে বিশ্ববাজারে ফল ও সবজি রপ্তানির চাহিদা থাকলেও বাধ সাধছে পরিবহন সমস্যা। কার্গো ফ্লাইট চালু না থাকায় একমাত্র ভরসা যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ।

কিন্তু গত দেড় মাস ধরে লকডাউনের কারণে চট্টগ্রাম থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ চলাচল না থাকায় সবজি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। সূত্র আরো জানায়, ঢাকা থেকে ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সবজি ও মৌসুমী ফলমূল রপ্তানি হলেও চট্টগ্রাম থেকে শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, ওমান ও বাহরাইনে রপ্তানি হয়। বিশেষ করে ওইসব দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যে দেশি সবজি ও ফলমূলের চাহিদা বেশি। তাদের চাহিদা মেটাতে চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ১০টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সবজি রপ্তানি করে থাকে। চট্টগ্রাম ফ্রেশ ভেজিটেবল এন্ড ফ্রুটস এক্সপোটার্স এসোসিয়েশন সূত্র জানায়, বিমান চলাচল স্বাভাবিক থাকলে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন মধ্যপ্রাচ্যে ২৫ থেকে ৩০ মেট্রিক টন সবজি ও ফলমূল রপ্তানি হয়। কিন্তু করোনার কারণে রপ্তানিতে ধস নামে। বিশেষ করে ২০২০ সালের মার্চ থেকে প্রায় ৫ মাস সবজি ও ফলমূল রপ্তানি বন্ধ থাকে। এরপর পুনরায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল শুরু হলে সীমিত আকারে রপ্তানি শুরু হয়। এতে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ মেট্রিক টন সবজি ও ফলমূল রপ্তানি হতো। প্রতিটন সবজির বিক্রয়মূল্য পড়ে প্রায় ১৮০০ ডলার এবং ফলমূল ৩০০০ ডলার। কিন্তু রপ্তানি বন্ধ থাকায় আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন রপ্তানিকারকরা।

চট্টগ্রাম ফ্রেশ ভেজিটেবল এন্ড ফ্রুটস এক্সপোটার্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মাহবুব রানা দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘দেশে ২০২০ সালের মার্চে করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রাম থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে শাকসবজি ও ফলমূল রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রায় ৫ মাস পর কিছুদিন রপ্তানি হয়েছিল। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে এপ্রিল থেকে রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এতে ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির শিকার হই।’ তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে তাজা শাকসবজি ও ফলমূল রপ্তানি করে প্রায় ১০টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে, এস আর ইন্টান্যাশনাল, সিফাত ইন্টারন্যাশনাল, প্রভা ট্রেডিং, গ্রীন ওয়ার্ল্ড ইমপ্লেক্স,  চট্টগ্রাম ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল, নেহা এন্টারপ্রাইজ, রয়েল ট্রেডিং ও আরডিএস ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে লকডাউনের কারণে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ বিমান, এয়ার এরাবিয়া, ফ্লাই দুবাইসহ আন্তর্জাতিক সকল ধরনের ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম থেকে ভেজিটেবল রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়।’

মাহবুব রানা বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪০ ধরনের তাজা শাকসবজি ও ফলমূল রপ্তানি হয়ে থাকে। এর মধ্যে চাহিদা বেশি দেশি আলু, কচু, কচুর লতি, কচুর ফুল, কচুর মুখি, করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, শসা, শিম বিচি ইত্যাদি সবজি। তাজা ফলমূলের মধ্যে রয়েছে কাঁঠাল, লিচু, জলপাই, কালোজাম, আনারস, পানিফল, পান ইত্যাদি।’

রপ্তানিকারকরা জানান, তাজা শাকসবজি ও ফলমূল রপ্তানি হয় পরিবহন বিমানে। প্রতি কেজি সবজি রপ্তানি খরচ পড়ে প্রায় ১ ডলার। কোন কোন সময় এক ডলার ১০ থেকে ৩০ সেন্ট  পর্যন্ত খরচ পড়ে। অথচ প্রতিবেশি দেশ ভারত তুলনামূলক অনেক কম ভাড়ায় সবজি রপ্তানি করে থাকে। এতে মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে মার খাচ্ছে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট