বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, উন্নয়ন বিশ্লেষক, পিপিআরসি’র প্রধান নির্বাহী ও ব্র্যাক’র চেয়ারম্যান বলেন, সরকার গতবার করোনাকে একটি স্বল্পকালীন সমস্যা হিসেবে দেখেছিল। কিন্তু এবার সেই জায়গায় উপলব্ধির একটা পরিবর্তন এসেছে। কোভিড একটি বড় ও দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হিসেবে এবারের বাজেটে কাগজে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিশদ বিশ্লেষণে দেখা যায় কথা ও বরাদ্দের মধ্যে যথেষ্ট ফারাক আছে। বাস্তবে বরাদ্দের চিত্র কিন্তু ভিন্ন।
বাজেটে করোনা বিবেচনায় পাঁচটি খাতকে নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। যেখানে স্বাস্থ্যকে প্রথম অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রয়েছে করোনা মোকাবেলায় প্রণোদনা, কৃষি, শিক্ষা, গ্রামীণ উন্নয়ন ও নিরাপত্তা। এগুলো সবই কথার মধ্যে আছে। কিন্তু যখন বাজেটের বরাদ্দের দিকে দেখি তখন চিত্র কিন্তু ভিন্ন। যেমন শিক্ষা খাতের দিকে যদি দেখি তাহলে চোখে পড়বে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন বাজেট কমে গেছে। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বাজেট অনেক বাড়ানো হয়েছে।
এবারের বাজেটের করোনার স্বীকৃতি দিলেও বড় কয়েকটি বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরি ছিল। যেমন দারিদ্রের বিষয়ে এবারের বাজেটে কোন আলোচনাই নেই। এছাড়া শিক্ষা খাতে গত একবছর যে ক্ষতি হয়েছে তা নিরসনে সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা নেই।
উন্নয়ন যারা বাস্তবায়ন করবে বা সরকারের নিজের খরচের যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাও চোখে পড়ার মতো। গত দু’বছরে এই খরচের পরিমাণ প্রায় ৪২ শতাংশ বেড়ে গেছে। এছাড়া বাজেটে যে ঘাটতি দেখানো হয়েছে তা পূরণে বিদেশি দাতাদের ওপর নির্ভরশীলতাও বাড়ানো হয়েছে। এতে মধ্যম আয়ের দেশের যে কথা বলা হচ্ছে তাতে প্রভাব পড়তে পারে। একদিকে আমরা মধ্যম আয়ের দেশের দিকে এগুচ্ছি, অন্যদিকে বিদেশি নির্ভরশীলতাও বাড়াচ্ছি। এটি আমাদের জন্য মঙ্গলকর হবে না।
এছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের জন্য কোন বাজেট চোখে পড়ার মত নয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে নদী ভাঙে, নদীপাড়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের জন্য বা নদীর বাঁধ নির্মাণের জন্য চোখে পড়ার মতো বাজেট রাখা হয়নি। বাজেটে দরিদ্র, নতুন দরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দিকে কম নজর দেওয়া হয়েছে। মোট কথা বাজেটের ঘাটতি মেটাতে দাতাদেশের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো, সরকারের আমলাতান্ত্রিক নিজ খরচ বৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো। কিন্তু জনগুরুত্বপূর্ণ অনেক বিশদ আলোচনা হতে পারতো।
পূর্বকোণ/এএ