চট্টগ্রাম বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪

দেশেই বিশ্বমানের সেবা, বিদেশ গিয়ে দুর্ভোগে রোগাক্রান্তরা

ইমাম হোসাইন রাজু

২৮ এপ্রিল, ২০২১ | ১:০১ অপরাহ্ণ

দীর্ঘদিনের ক্যান্সারে আক্রান্ত চট্টগ্রামের বাসিন্দা মাইনুল হকের (ছদ্মনাম) সফল সার্জারি হয়েছে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। দেশের প্রথম সারির বিশেষজ্ঞ সার্জন দ্বারাই অপারেশনটি সম্পন্ন করা হয়। সফল সার্জারির পর ক্যান্সার বিশেষজ্ঞগণ মাইনুল হককে পরামর্শ দেন কেমো থেরাপি দেয়ার। দেশে থেরাপি দেয়ার মতো উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্র থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি পরিবারের সদস্যরা মাইনুলকে নিয়ে যান ভারতে। সঙ্গে পাড়ি দেন পরিবারের আরও চার সদস্যও।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, থেরাপি দেয়াতো দূরের কথা উল্টো করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরতে হচ্ছে ওই পরিবারকে। এরমধ্যে মাইনুলের অক্সিজেন লেভেলও ৭০ এর নিচে নেমে আসায় পুরোই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন পরিবারটি। পারছেন না দেশে আসতে, পারছেন না করোনার ভালো চিকিৎসা নিতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশেষজ্ঞ এক চিকিৎসক এ প্রসঙ্গে বলেন, অক্সিজেন লেভেল ৭০ এর নিচে নেমে যাওয়ায় মাইনুলকে নিয়ে পুরোই চিন্তিত তার পরিবার। তার অবস্থা বর্তমানে খুবই খারাপ। আক্ষেপ করে এ  বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ডায়াগনস্টিক ও সার্জারির মতো জটিল সবকিছুই দেশে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। অথচ শুধুমাত্র থেরাপির জন্য গিয়ে জটিল পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে পরিবারটিকে। রাজধানীর বেশ কিছু হাসপাতাল রয়েছে, যেখানে এখনও থেরাপি দেয়ার মতো উন্নত চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। অথচ এই কেমোথেরাপির জন্য ভারতে যাওয়ার কোন প্রয়োজনই ছিল না।

এখানে সার্জারি করিয়ে শুধুমাত্র কেমোথেরাপিটির জন্য ভারতে যাওয়াটা পুরোই অর্থহীন। শুধু মাইনুলরাই নন। প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে পার্শ্ববর্তী ভারতে চিকিৎসা নিতে পাড়ি দেন ১০ থেকে ১২ লাখ মানুষ। মহামারি করোনার এ সময়ও চিকিৎসা নিতে বহু মানুষ পাড়ি দিয়েছেন দেশটিতে। সম্প্রতি ভারতে মরণ কামড় বসিয়েছে করোনার সংক্রমণ।

দেশটিতে অক্সিজেন সংকট তীব্র আকার ধারণ করায় জ্যামিতিক হারে মৃত্যু বাড়ছে। এরমধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারও বাংলাদেশি। অনেকেই কোভিড পজিটিভ হয়েও হাসপাতাল ও বাসা বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, দেশেই যখন বিশ্বমানের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে, তাহলে বিদেশ পাড়ি দেয়াটা অর্থহীন। এতে করে যেমন শারীরিক, মানসিক অশান্তি তেমনি আর্থিক ক্ষতিরও মুখে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে করোনার এমন মহাকালে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাড়ি কোন বিচারেই যৌক্তিক নয়।

দেশের প্রখ্যাত সার্জারি বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা. খন্দকার এ কে আজাদ বলেন, বাংলাদেশেই এখন ভালোমানের চিকিৎসা হয়। এ নিয়ে মনের মধ্যে সন্দেহ থাকার কোন কারণ নেই। নিরাপদেই দেশের সেবা গ্রহণ করা যেতে পারে। জীবনের বাড়তি ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে না যাওয়াটাই উত্তম। যে চিকিৎসাটা ঢাকায় উন্নত কেন্দ্রগুলোতেই ভালোভাবে পাওয়া যায়, তাহলে কেন বাইরে যেতে হবে?

বিদেশে সেবা নেয়ার মানসিকতা আমাদের পরিহার করা উচিত উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, সরকারি সুযোগ সম্বলিত বিশ্বমানের সেবা এখন দেশেই পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি এখন বেসরকারি অনেক হাসপাতালও উন্নত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তবুও কেন মানুষ বিদেশে উড়াল দেবে? বিদেশে গিয়ে অর্থের অপচয়ের কোন যৌক্তিকতা নেই। যারা চিকিৎসায় বিদেশমুখী, দেখা যায় সময়মতো বিদেশ যেতে না পারলে অনেক ক্ষেত্রে তাদের জটিলতায়ও পড়তে হচ্ছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট