চট্টগ্রাম বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪

চাহিদা বেড়েছে অক্সিজেনের

ইমাম হোসাইন রাজু 

২৭ এপ্রিল, ২০২১ | ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ

কোভিড ডেডিকেটেড চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করতে সম্প্রতি বসানো হয় ১৩ হাজার লিটারের প্ল্যান্ট। অথচ গেল দুই মাসের তথ্য বলছে, অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কোনদিনই পূর্ণ রিফিল করতে পারেনি প্ল্যান্টটি। প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ৩ থেকে সর্বোচ্চ ৬ হাজার লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারছে ।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের ভাষ্যে, সংকটের কারণেই সরবরাহ প্রতিষ্ঠান স্বল্প পরিমাণই অক্সিজেন সরবরাহ দিয়ে যাচ্ছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি অন্য হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক রাখতেই এমনটি করছে।  অর্থাৎ আগের চেয়ে অক্সিজেন চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি দিন দিন সংকটও দেখা দিচ্ছে জীবন রক্ষাকারী এই গ্যাসের।

হাসপাতালটির কোভিড ফোকাল পার্সন ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব মাসুম বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের প্রায় ৯০ শতাংশ রোগীরই প্রয়োজন হচ্ছে অক্সিজেন। যদিও এক সময় শুধুমাত্র আইসিইউতে ভর্তি রোগী ছাড়া অক্সিজেন তেমন প্রয়োজন হতো না। কিন্তু গেল দুই মাসে এ চাহিদা দ্বিগুণ বেড়েছে। আশঙ্কা প্রকাশ করে এ চিকিৎসক বলেন, বর্তমানের চেয়ে যদি রোগীর সংখ্যা আরও বাড়ে, তা হলে অক্সিজেনের প্রকট সংকট দেখা দিতে পারে। তখন সামলানো মুশকিল হয়ে পড়বে।

এ চিকিৎসকের মতোই অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে পাশর্^বর্তী দেশ ভারতের মতো জীবন রক্ষাকারী এ অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক রাখতে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

তথ্য অনুসারে, বর্তমানে দেশে অক্সিজেন চাহিদা রয়েছে ১৫০ টন। এরমধ্যে ৯০ টন সরবরাহ দিচ্ছে লিনডে বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের সীতাকু-ে দুটো প্ল্যান্টের মাধ্যমে অক্সিজেন উৎপাদন করে থাকে। এরমধ্যে সীতাকু-ের প্ল্যান্ট থেকে উৎপাদন হয় মাত্র ১৫ টন। বাকিগুলোর মধ্যে ২০ টন আসে ভারত থেকে। অন্য সবগুলোই নারায়ণগঞ্জের প্ল্যান্টে উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া স্পেক্ট্রা ৩৮ টন, আবুল খায়ের স্টিল মেল্টিং লি. দৈনিক ৭ টন, ইসলাম অক্সিজেন ২০ টন এবং এ কে অক্সিজেন লি. ৮ টন উৎপাদন করছে। তবে বড় দুই প্রতিষ্ঠানই তরল অক্সিজেন আমদানি করতো ভারত থেকে। কিন্তু বর্তমানে ভারত তাদের সেই অক্সিজেন রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

ভারতের অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এক্ষেত্রে বাংলাদেশে কোন প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে লিন্ডে বাংলাদেশের মুখপাত্র সাইকা মাজেদ পূর্বকোণকে বলেন, আমাদের দুই প্ল্যান্টে এখন যে পরিমাণ অক্সিজেন উৎপাদন হচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতিতে সমস্যা হবে না। তবে রোগীর পরিমাণ বাড়লে বা পরিস্থিতি খারাপ হলে তখন আমাদের জন্য কিছু সমস্যাতো হবেই। এখন যা দিতে পারছি, তখন সরবরাহ দেয়া কঠিন হবে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে মেডিকেল অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক রাখতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন বন্ধ করা হয়েছে।

লিনডে বাংলাদেশের সাবেক এক কর্মকর্তা পূর্বকোণকে বলেন, কোনভাবে যদি পরিস্থিতি খারাপ হয় কিংবা লিনডে যদি ভারত থেকে তাদের আমদানিকৃত অক্সিজেন সামনে আনতে না পারে তাহলে কোভিড চিকিৎসায় অক্সিজেন সরবরাহে বেশ বেগ পেতে হবে। ওই কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন, দেশে সম্ভাব্য অক্সিজেন সংকটের কথা মাথায় রেখে এখনই জরুরিভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। না হয় সংকট সামাল দেয়া অসম্ভব হবে।

লিনডে বাংলাদেশ ও আবুল খায়ের গ্রুপের দুই কর্মকর্তা জানান, গেল ১৫ দিনে চট্টগ্রামে অক্সিজেনের চাহিদা বহুগুণ বেড়েছে। যেখানে সাধারণ রোগীদের ক্ষেত্রে আগে ২ থেকে ৫ লিটার প্রয়োজন হতো, এখন একজন কোভিড রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে দিনে ৮০ লিটার লাগছে। যদি পরিমাণ আরও বাড়তে থাকে, তাহলে অক্সিজেনের সংকট প্রকট হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এদিকে, অক্সিজেনের সংকট দূর করতে ইতোমধ্যে নতুন উৎস খুুঁজে নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। নতুন করে বিভাগটির উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, একদিকে ভারতে অক্সিজেন সংকট অন্যদিকে দেশে চাহিদা বৃদ্ধি। সবমিলিয়ে ভবিষ্যতে যেন কোন ঘাটতি না হয়, সেজন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ শুরু করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে আবুল খায়ের গ্রুপ, এ কে অক্সিজেন (প্রা.) লিমিডেট, ইসলাম অক্সিজেনসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান। যাদেরকে মেডিকেলের জন্য অক্সিজেন উৎপাদন বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সংকট মোকাবেলায় কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির পূর্বকোণকে বলেন, এখনও সমস্যার মুখোমুখি হইনি। রোগী বাড়লে হয়তো কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তবে সংকট নিরসনে ইতোমধ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করছেন। আশা করি, উপযুক্ত উদ্যোগ গ্রহণ করবেন তারা। চট্টগ্রামেও এমন সংকট যেন না হয়, তা নিয়েও ভাবনা রয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট