চট্টগ্রাম বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

নববর্ষের দিনে চৈত্র সংক্রান্তি!

মিটু বিভাস 

১২ এপ্রিল, ২০২১ | ১:১৬ অপরাহ্ণ

১৪ না ১৫ এপ্রিল? বাংলা নতুন বর্ষপঞ্জি রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে গত দুইযুগ ধরে নববর্ষ উদযাপন নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়। দেশব্যাপী ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হলেও দেশের হিন্দু সম্প্রদায় একদিন পর ১৫ এপ্রিল উদযাপন করে থাকে নববর্ষের অনুষ্ঠান। আগামী বুধবার বাংলা নববর্ষের দিনে চৈত্র সংক্রান্তিতে পূজা-পার্বণসহ ঘরোয়া বিভিন্ন আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত থাকবে তারা। এদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হবে চড়কপূজা। আর পরদিন হালখাতা থেকে শুরু করে নতুন পোশাক পরিধান, মন্দির বা উপসনালয়ে নববর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন করবেন সনাতনী সম্প্রদায়। যদিও করোনা মহামারীর কারণে লকডাউনে থাকায় টানা দ্বিতীয়বারের মতো এবারও বাতিল নববর্ষের সব অনুষ্ঠান।

জানা যায়, চন্দ্র সন হিজরিকে সৌর গণনা হিসেবে এনে মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে বাংলা সনের উদ্ভব ঘটে। তবে সন গণনার দিন থেকে ইংরেজি ক্যালেন্ডারের সঙ্গে বিভিন্ন অমিল দেখা দেয়। এ কারণে ১৯৫২ সালে ভারতের জ্যোতি পদার্থবিদ ড. মেঘনাদ সাহা ভারতে প্রচলিত প্রাচীন বর্ষপঞ্জির বিজ্ঞান ভিত্তিক সংস্কার করেন। এর মাধ্যমে ইংরেজি তারিখ ১৪ এপ্রিল বাংলা বৈশাখ মাসের প্রথম দিন নির্ধারিত হয়। ড. মেঘনাদ সাহার এই পঞ্জিকা সংস্কারকে সমর্থন করেন ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। কিন্তু দীর্ঘদিন ওই বর্ষপঞ্জিকা কার্যকর হয়নি। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ সংস্কার করা সেই বিজ্ঞান ভিত্তিক পঞ্জিকাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেন। ফলে পহেলা বৈশাখ ১৪ এপ্রিল নির্ধারিত হয়। সেই থেকে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয় ১৪ এপ্রিল।

বাংলাদেশ ও ভারতের সনাতনপন্থীরা মেঘনাদ সাহার সংস্কার করা ওই প্রস্তাব মেনে নেননি। তারা আগের পঞ্জিকাকেই বহাল রাখেন। এজন্যই আলাদাভাবে পালন করা হয়ে থাকে নববর্ষ। চট্টগ্রামের হিন্দুরাও এর ব্যতিক্রম নয়। এবার বড় কোন আয়োজন না থাকলেও নগরীর বড় বড় মন্দির ও উপসনালয়গুলোতে আগামী বৃহস্পতিবার পালন করা হবে নববর্ষ। এমনকি নগরীর বনেদী হিন্দু ব্যবসায়ীরা হালখাতা উৎসব পালন করবে একদিন পর। নগরীর খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী অজিত দত্ত পূর্বকোণকে বলেন, লকডাউনে যদি দোকান খোলার সুযোগ হয় তবে, বুধবার নয়, আগামী বৃহস্পতিবার হালখাতা উৎসব করবেন তারা। মাদারবাড়ি ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী বাবলা রায় চৌধুরী বলেন, অফিস খোলা থাকলে বৃহস্পতিবার হালখাতা উৎসব পালন করবেন তিনি। শুধু হালখাতা নয়, পারিবারিক অনুষ্ঠানগুলোও হয় একদিন পর। নগরীর এক পোশাক কারখানার সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার সবুজ ওয়াদ্দাদার বলেন, নববর্ষের দিন বৃহস্পতিবার পূজা দেয়া, মিষ্টি বিতরণ, নতুন পোশাক পরিধান এবং বাসায় বিশেষ খাবারের আয়োজন অবশ্যই থাকবে।

সনাতনী সম্প্রদায়ের অনত্যম তীর্থস্থান আকবরশাহ থানাধীন কৈবল্যধাম আশ্রমেও নববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে আগামী বৃহস্পতিবার। কৈবল্যধামের মোহন্ত মহারাজ কালীপদ ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে যে বর্ষপঞ্জি স্বীকৃত তাতে হিন্দুদের বিভিন্ন পূর্জা পার্বণের সঠিক হিসাব করা হয়নি। বাঙালি হিন্দুদের তিথি, নক্ষত্র, দ-, পল-এসব হিসেব করতে হয়। এখন যে সন বাংলাদেশ ব্যবহার করছে, তাতে হিন্দুদের ধর্মাচরণের সাথে সামঞ্জস্য নেই। এছাড়া জ্যোতিষশাস্ত্রেও নতুন বর্ষপঞ্জি ব্যবহারে সমস্যা রয়েছে। তিনি বলেন, একজন মানুষ ২০ বা ৫০ বছর আগে কোন সময়ে জন্মগ্রহণ করেছেন তা জানা থাকলে, পঞ্জিকা অনুসারে তার কুষ্ঠি যে কোন সময় তৈরি করা সম্ভব। বাংলাদেশে প্রচলিত বর্ষপঞ্জিতে সে সুবিধা নেই। আর তাই আগের বর্ষপঞ্জি হিসেবে হিন্দুরা নববর্ষ পালন করে থাকেন।

আলাদা আলাদাভাবে নববর্ষ উদযাপন নিয়ে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট চন্দন তালুকদার বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত ১৪ এপ্রিল নববর্ষ। কিন্তু হিন্দুদের বিভিন্ন পূজা-পার্বণ অনুষ্ঠিত হয় পুরাতন বর্ষপঞ্জি অনুসারে। আর তাই আমাদের নববর্ষের অনুষ্ঠান দুইদিন পালন করতে হয়। তিনি বলেন, হিন্দুশাস্ত্রের বিধান ঠিক রেখে পঞ্জিকা সংস্কার করে একদিনে নববর্ষ পালনের দাবি অনেক দিনের। বাংলাদেশ জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী বরাবর এব্যাপারে একটি স্মারকলিপিও দেয়া আছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট