চট্টগ্রাম সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামে বইপ্রেমীদের অন্যরকম উৎসব

আল-আমিন সিকদার

১২ মার্চ, ২০২১ | ১২:১৩ অপরাহ্ণ

প্রবাদ আছে, ‘জানার কোন শেষ নেই, শেখার কোন বয়স নেই’। জ্ঞানের এই পরিধি বিস্তৃত করতে সব থেকে বড় ভূমিকা পালন করছে বই। সাইন্সফিকশন, ডিটেকটিভ, উপন্যাস আর প্রবন্ধ। এমন নানা ক্যাটাগরিতে লেখকদের বই রয়েছে বাজারে। প্রতিটি বইয়ে পাঠকদের ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করছে লেখকরা। বই জগতে নিজেকে সঁপে দেয়া পাঠকরাও থেমে নেই। শত ব্যস্ততার মাঝেও গড়ে চলছেন পছন্দের লেখকের বইয়ের সংগ্রহশালা। এবার এই সংগ্রহশালা হয়ে উঠেছে পাঠকদের নতুন বইয়ের অভিজ্ঞতা নেয়ার চাবিকাঠি। পড়া শেষ এমন বই জমা দিয়ে পাঠকরা সংগ্রহ করতে পেরেছেন পছন্দের লেখকের অপঠিত বইগুলো। তাও আবার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর জামালখান মোড়ে এমনই ভিন্ন ধরনের এক বই উৎসবের আয়োজন হয়। ‘বই বিনিময় উৎসব’ শীর্ষক এ আয়োজকের নেপথ্যে ছিল বইয়ের নেশায় আসক্ত একদল তরুণ-তরুণী। ‘ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ’ নামের একটি গ্রুপ এ ভিন্নধর্মী বই উৎসবের আয়োজন করে। যেখানে বই বিনিময় করে প্রিয় লেখকের লেখার স্বাদ নিতে ভিড় জমায় শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ হাজারো মানুষ। সকাল ১১ টা থেকে শুরু হওয়া এ উৎসবে রাত ৮টা পর্যন্ত বিনিময় হয় দেশি-বিদেশি ৫শ’রও বেশি লেখকের ১০ হাজার ২৫২টি বই। বিনামূল্যে জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর এমন সুযোগ পেয়ে এমন উৎসবের ধারবাহিকতারও দাবি জানান পাঠকরা। চট্টগ্রাম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাইশা ইবনাত। বই বিনিময়ের এই উৎসবে এসে নিজের পড়া ৩টি বইয়ের সাথে বিনিময় করে সংগ্রহে নিয়েছেন একই ক্যাটাগরির ভিন্ন ৩টি বই।

এমন অভিজ্ঞতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বই পড়াটা আমার নেশায় পরিণত হয়েছে। ক্লাস টু থেকে বই পড়ি। আমার প্রথম বই ছিল ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ ও ‘দিপু  নাম্বার টু’। সেই থেকে এখনও বই পড়ছি। সব থেকে বেশি ভালো লাগে ডিটেকটিভ বই পড়তে। একাডেমিক পড়াশোনার ফাঁকে যতটুকু সময় পাই ততটুকু সময়ও আমার বন্ধু হিসেবে সঙ্গ দেয় বই। সব থেকে বেশি ভালো লাগে হুমায়ন আহমেদ, জাফর ইকবাল, সুনীল ও স্বরবিন্দু স্যারের বই পড়তে। আজ আমার সংগ্রহশালা থেকে জাফর ইকবাল স্যারের ৩টি বই এনেছিলাম এই উৎসবে। যেগুলো বিনিময় করেছি তারই লেখা আমার অপঠিত ৩টি বইয়ের সাথে। আজকে আমার নতুন সঙ্গী হয়েছে জাফর ইকবাল স্যারের ‘রাশা’, ‘নিউরণের আবরও অনুরণ’ ও ‘স্বপ্ন এবং অন্যান্য’ বই ৩টি। বিনামূল্যে এমন সুযোগ সত্যিই অভাবনীয়। এতে আমাদের সাহিত্য চর্চা বহুগুণে বাড়বে। আমরা চাই এমন আয়োজন প্রতিমাসে সম্ভব না হলেও অন্তত ৩ মাস পর পর যেন হয়।’

পাঠকদের এ চাহিদা মেটাতে প্রতিবছর বড় পরিসরে এমন উৎসবের আয়োজন করতেদ চায় আয়োজকরাও। বই বিনিময় উৎসবের আয়োজক গ্রুপ ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ-এর পরিচালক সাইদ খান সাগর। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘বই বিনিময় উৎসব এর আগে ঢাকা ও খুলনায় অনুষ্ঠিত হলেও চট্টগ্রামে এটাই প্রথম। এমনকি পূর্বের বই বিনিময় উৎসব থেকে ব্যতিক্রমও। সেখানে টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম থাকলেও আমারা বই বিনিময়ের সুযোগ রেখেছি বিনামূল্যে। এতে পাঠকদের ব্যাপক সাড়া পড়েছি। এই আয়োজনের মাধ্যমে আমরা বুঝেছি, এমন উৎসবের চট্টগ্রামে কতটা প্রয়োজন ছিল। আমরা এই আয়োজন দিন দিন আরও বড় পরিসরে করার চেষ্টা করবো। ইচ্ছা রয়েছে, প্রতি বছরই জামালখানে এই বই বিনিময় উৎসব করার। এতে সাহিত্য চর্চায় কিছুটা হলেও আমরা ভূমিকা রাখতে পারবো।’    

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট