চট্টগ্রাম বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

টিকা নিতে গিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি

ইমাম হোসাইন রাজু

২৩ ডিসেম্বর, ২০২০ | ১:৫২ অপরাহ্ণ

রোগ জীবাণু থেকে সুরক্ষা পেতে সরকারিভাবে শিশুদের দেয়া হচ্ছে হাম- রুবেলার টিকা। বিভিন্ন কারণে এ ক্যাম্পেইন পেছানোও হয়েছে কয়েকবার। শেষে ১২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে ছয় সপ্তাহের এ ক্যাম্পেইন।

করোনার এ মহামারিতে ক্যাম্পেইন বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে দেয়া হয় সুরক্ষা নিশ্চিতের কিছু নির্দেশনাও। যাতে কমপক্ষে ৩ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে ঘন ঘন হাত পরিষ্কার এবং বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার করার কথা বলা হয়। কিন্তু এসব নির্দেশনার কোনটিরই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না টিকাদান কেন্দ্রেগুলোতে। গত কয়েকদিন নগরীর বিভিন্ন টিকাদান কেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

বরং স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েই চলছে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের টিকাদান কর্মসূচি। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সরাসরি এ দায়ের তীর অভিভাবকদের দিকে। কর্তৃপক্ষ বলছে, সাধারণ মানুষ তথা অভিভাবকরা নিজেরাই যদি সচেতন না হয়, তা হলে স্বাস্থ্য বিভাগ একা নিশ্চিত করতে পারবে না। সরেজমিনে নগরীর একাধিক টিকাদান কেন্দ্রে ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার ধারে দীর্ঘ লাইন। অভিভাবকরা দাঁড়িয়ে আছেন তাদের শিশু সন্তানকে নিয়ে। বজায় রাখা হয়নি তিন ফুটের দূরত্বও।

অভিভাবকদের কারো কারো মুখে থাকলেও শিশুর মুখে মাস্ক নেই। আবার কোথাও দেখা গেছে অভিভাবক সন্তান কারোর মুখে নেই মাস্ক।

স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা ছিল, প্রতিটি কেন্দ্রের মুখেই হাত ধোয়া কিংবা স্যানিটাইজার নিশ্চিত করার। কিন্তু তার দৃশ্যও পাওয়া যায়নি কোথাও। সুরক্ষা নিতে গিয়ে বরং ঝুঁকিতে পড়তে হয়েছে টিকা গ্রহণকারীদের।

কি ছিল নির্দেশনায় : হাম-রুবেলা (এমআর) টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২০ এর নির্দেশনার ২ এর ২ তে উল্লেখ করা হয়, টিকাদান সেশন চলাকালে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করা, শ্বাস প্রশ্বাস সম্পর্কিত পরিচ্ছন্নতা (হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা), স্বাস্থ্য সহকারী/টিকাদানকারী ও স্বেচ্ছাসেবীকে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করা, টিকাদানকারীদের  সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, টিকাদান কাজে ব্যবহৃত স্থান, সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণমূলক সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা ও নিরাপদ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। তাতে সেবাদাতা ও গ্রহীতা উভয়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অবশ্যই পালনীয় বলেও উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এর একটি নির্দেশনাও চোখে পড়েনি কোন টিকাদান কেন্দ্রে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘অভিভাবকরা যদি সচেতন না হন, তাহলে স্বাস্থ্য বিভাগতো একা তা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। এটাতো সবার দায়িত্ব। আমি আজ (মঙ্গলবার) একাধিক কেন্দ্রে গিয়ে নিজেও দেখেছি। শিশুর মুখে মাস্ক নেই, অভিভাবক মাস্ক পরে আছে। আবার দু’জনের কারও মুখেই মাস্ক নেই। এসব দেখে কয়েকজনকে কেন্দ্রে থেকে বেরও করে দিয়েছি। স্পষ্ট বলে দিয়েছি, মাস্ক ছাড়া কোন টিকা দেয়া হবে না। তাছাড়া আমাদের জনবলের খুব সংকট। তবুও স্বেচ্ছাসেবী যারা আছেন, তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন যেন সঠিক নিয়মেই এ কার্যক্রম চলে।’

স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানানো হয়, পূর্বে এসব ক্যাম্পেইন তিন সপ্তাহ চললেও কোভিডের কারণে তা ৬ সপ্তাহব্যাপী পরিচালিত হবে। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় সপ্তাহ চলমান আছে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে শুধুমাত্র কমিউনিটি টিকাদান কেন্দ্রের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে এ ক্যাম্পেইন। যার কারণে দৈনিক লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রগুলোতে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি পূর্বকোণকে বলেন, ‘ক্যাম্পেইন শুরু হওয়ার পর থেকেই শহরসহ প্রতান্ত গ্রামের টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে ভিড় রয়েছে। এতে বুঝা যায় সবার সচেতনতা বেড়েছে। আবার অনেকেই ধারণা করছেন হয়তো পরে টিকা পাওয়া যাবে না। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অতিরিক্ত টিকা সংরক্ষণ আছে। আশা করি ৯ মাস থেকে ১০ বছর বয়সী সকল শিশুই এ টিকা পাবে। তবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া আছে। যদিও আমাদের সকলকেই সচেতন হওয়া দরকার।’

প্রসঙ্গত : গত ১২ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে শুরু হয়েছে হাম-রুবেলা (এমআর) ক্যাম্পেইন। এরমধ্যে নগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় সাড়ে ১৯ লাখ শিশুকে (৯ মাস থেকে ১০ বছর বয়সী শিশু) এ টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন স্বাস্থ্য বিভাগ। যা নির্ধারিত দিন থেকেই এ কার্যক্রম চলমান আছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট