রামগড়-বারৈয়ারহাট সড়কে প্রায় প্রতিরাতেই যানবাহনে দুর্ষর্ধ ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। ডাকাতদের কবলে পড়ে অনেকেই সর্বস্ব হারিয়েছেন। তাদের হামলায় আহত হয়েছেন বহু যাত্রী ও চালক। ডাকাতরা ভাংচুর করে অনেক গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। গত ১-২ মাস ধরে লাগাতার ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ এ পর্যন্ত কাউকে ধরতে পারেনি। ফলে সড়কটিতে সম্পূর্ণ নিরাপত্তাহীন অবস্থায় বাধ্য হয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে যাত্রী ও চালকদের। এদিকে, অরক্ষিত এ সড়কে আসন্ন ঈদে দূর-দূরান্তের ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাতায়ত নিয়ে ভয় ও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বারৈয়ারহাট হতে হেঁয়াকো-রামগড় সড়কটি ঢাকা, ফেনী, কুমিল্লাসহ সমতল জেলার সাথে খাগড়াছড়ি জেলার সড়ক যোগাযোগের মাধ্যম। এ সড়কে প্রতিরাতেই শতাধিক দূরপাল্লার যাত্রীবাহী নৈশকোচসহ অসংখ্য যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করে।
জানা যায়, সড়কের ভূজপুর থানাধীন বাগানবাজার চা বাগান এলাকা এবং জোরারগঞ্জ থানার কালাপানি নতুন ব্রিজ ও ভাঙ্গাটাউয়ার এলাকাতেই ডাকাতির ঘটনা ঘটছে বেশি। রাস্তার ওপর গাছের টুকরা ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন আটকায় তারা। ধারালো দা, ছুরি, চাইনিজ কুড়াল, কিরিচ ও হালকা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে ডাকাতরা। যাত্রীবাহী বাসের চেয়ে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, পিকআপ প্রভৃতি ছোট গাড়িগুলোই তাদের মূল টার্গেট। গাড়ির গতিরোধ করার সাথে সাথেই আচমকা হামলা-ভাংচুর শুরু করে। পরে অস্ত্র ঠেকিয়ে টাকা,পয়সা, স্বর্ণলংকারসহ সর্বস্ব লুটিয়ে নেয় ডাকাতরা।
জানা যায়, ডাকাতির ঘটনার কারণে লোহারপুল নামক স্থানে জোরারগঞ্জ থানার একটি অস্থায়ী পুলিশ চেক পোস্ট বসানো হলেও গত ২-৩ বছর আগে এটি তুলে নেওয়া হয়। এরপর সড়কটি সম্পূর্ণ অনিরাপদ হয়ে পড়ে। জোরারগঞ্জ থানাধীন কালাপানি নতুনব্রিজ এলাকায় ২২ মার্চ ভোররাতে সংঘটিত একটি দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ঐ ডাকাতির ঘটনার শিকার হওয়া আবুল কাশেমের সাথে কথা বলে রোমহর্ষক তথ্য জানা যায়। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে ভাড়া করা প্রাইভেটকারে অন্তঃসত্তা স্ত্রী ও সাত বছরের শিশুপুত্রকে নিয়ে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার তবলছড়িতে নিজ বাড়িতে যাচ্ছিলেন। কালাপানি নতুন ব্রিজ এলাকায় পৌঁছলে ডাকাতদল তাদের গাড়িটি আটকিয়ে ধারালো দা, কিরিচ, চাইনিজ কুড়াল দিয়ে এলোপাতাড়ি ভাংচুর শুরু করে। ডাকাতদের ৩-৪ জন স্বামী-স্ত্রী দু’জনের গলায় ছুরি ধরে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।
অন্যরা গাড়ির পিছনের ঢালা খুলে বিভিন্ন মালপত্রভর্তি ব্যাগ বের করে নেয়। গাছমায় মুখঢাকা ডাকাতদের প্রত্যেকের হাতে হাই পাওয়ার টচ লাইট ও ধারালো অস্ত্র ছিল। প্রথমে ৩-৪ জন গাড়িটি আটক করার সাথে সাথে রাস্তার পাশের জঙ্গল থেকে আরও ১০-১২জন এসে ডাকাতিতে অংশ নেয়।
আবুল কাশেম আরও জানান, তারা আক্রান্ত হওয়ার আগে একই স্থানে আরও ৫-৬টি গাড়ি ডাকাতি করা হয়।অন্যদিকে, ২৬ মার্চ রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভূজপুর থানার বাগানবাজারের রামগড় চা বাগান এলাকায় রামগড়ের সোনাইপুলের আলম ট্রের্ডাসের মালিক মো. আলমের গাড়ি আটকিয়ে চালক ও অপর ডিএসআরকে মারধর করে অস্ত্রের মুখে প্রায় এক লক্ষ ৪০ হাজার টাকা লুটে নেয় সশস্ত্র ডাকাতরা। এর আগে ১৬ মার্চ একই স্থানে ডাকাতরা সিএনজি অটোরিকশা আটক করে অস্ত্রেরমুখে এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা ও তিনটি মোবাইল ফোন লুটে নেয় রামগড়ের অপর ডিলার ব্যবসায়ী মো. আলা উদ্দিনের দুই সেলসমানের কাছ থেকে । এ ব্যাপারে ডিলার মো. আলাউদ্দিন ভুজপুর থানার দাঁতমারা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন বলে জানান। প্রায় প্রতি রাতেই ডাকাতির ঘটনা ঘটছে এ সড়কে। রাতে দূরপাল্লার গাড়িগুলো ডাকাতির শিকার হয়ে গন্তব্যে চলে যাওয়ায় অনেক ঘটনা প্রকাশও পায় না।
এদিকে, লাগাতার ডাকাতির ঘটনার ব্যাপারে কথা বলতে ভূজপুর থানার ওসিকে ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
পূর্বকোণ/এসএ