চট্টগ্রাম বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

নগরীতে করোনার প্রভাব

করোনায় বেড়েছে পানির সংকট

ওয়াসার বিলের বিলম্ব ফি জুন পর্যন্ত মওকূপ

মোহাম্মদ আলী

১৯ এপ্রিল, ২০২০ | ২:৫০ পূর্বাহ্ণ

  • বর্তমানে পানির চাহিদা ৪২ কোটি লিটার। স্বাভাবিক সরবরাহ ৩৬ কোটি লিটার। ব্যবহার বেড়েছে ৭ কোটি লিটার
  • প্রতিটি প্লান্ট এবং পাম্প হাউসে তিন শতাধিক প্রকৌশলী ও কর্মী সার্বক্ষণিক নিয়োজিত।

নগরীতে দৈনিক ৭ কোটি লিটার অতিরিক্ত পানির ব্যবহার বেড়েছে। ফলে বেড়েছে পানির সংকট। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বারবার হাতধোয়া, একাধিকবার গোসল এবং কাপড়ধোয়া বেড়ে যাওয়ায় আবাসিক গ্রাহক খাতে পানির এই ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। সংস্থাটি পানির এই বাড়তি চাহিদার বিপরীতে ডিপ টিউবয়েলের মাধ্যমে প্রায় দেড় কোটি লিটার পানির উৎপাদন বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে আগামী জুন মাস পর্যন্ত পানির বিলের বিলম্ব ফি মওকুফেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ. কে.এম ফজলুল্লাহ দৈনিক পূর্বকোণকে জানান, করোনা থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী অবশ্যই আমাদের বারবার হাতধুতে হবে, গোসল করতে হবে এবং কাপড়ও ধুতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের পানি ব্যবহারেও যতœবান হতে হবে।
তিনি বলেন, ‘পানি ব্যবহারে একটু সতর্ক হলে অতিরিক্ত চাহিদা বাড়ত না। তিনি মনে করেন, নগরবাসীর মধ্যে অনেকেই একেকবার হাতধোয়ার সময় নির্ধারিত ২০ সেকেন্ডেরও বেশি সময় ধরে পানির কল খোলা রেখে সাবান ব্যবহার করেন এবং কল খোলা রেখে কাপড়চোপড় ধৌত করেন। আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি সাবান ব্যবহারের সময় কল খুলে রাখলে ৫ লিটার পানি হাত ধুতেই অপচয় হয়। অথচ অপচয় না করলে ২ লিটার পানি দিয়ে হাতধোয়া সম্ভব। আর কাপড় ধোয়ার সময় কল খুলে রাখলে আরও কয়েকগুণ পানি নালায় যায়। তাই নগরবাসীর কাছে পানি ব্যবহারে আরও যতœবান ও সাশ্রয়ী হওয়ার অনুরোধ করছি। পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হলে পানির অতিরিক্ত ব্যবহারের পরিমাণ অনেকাংশে কমে আসবে। ফলে নগরবাসী তাদের চাহিদা মতো পানি পাবেন’। চট্টগ্রাম নগরীতে বর্তমানে পানির চাহিদা ৪২ কোটি লিটার। তার বিপরীতে স্বাভাবিক সরবরাহ ৩৬ কোটি লিটার। ব্যবহার অতিরিক্ত হওয়ার পর থেকে বেড়েছে সংকট। চাহিদার বিপরীতে ডিপটিউবওয়েল থেকে বাড়তি প্রায় দেড় কোটি লিটার তোলা হচ্ছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মো. মাকসুদ আলম জানান, ৬৭ হাজার আবাসিক সংযোগেই মূলতঃ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার বেড়েছে। নগরবাসী অপচয় না করলে অতিরিক্ত পানির প্রয়োজন পড়বে না। এ কারণে আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি পানির অপচয় না করতে।
অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নগরীতে পানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে ওয়াসার প্রতিটি প্লান্ট এবং পাম্প হাউসে পানি উৎপাদন এবং সরবরাহে নিয়োজিত সবমিলিয়ে তিন শতাধিক প্রকৌশলী ও কর্মীকে সার্বক্ষণিকভাবে সেখানেই রাখা হচ্ছে। তাদের থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থাও প্লান্ট ও পাম্পে করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ.কে.এম ফজলুল্লাহ জানান, চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ পানি উৎপাদন ও সরবরাহে নিয়োজিত প্রকৌশলী ও কর্মীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্লান্টেই তাদের সার্বক্ষণিক অবস্থান নিশ্চিত করেছে। যাতে বাইরে আসা-যাওয়া করে কেউ করোনা সংক্রমিত না হয়। আগামী রমজানেও পানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে চলমান ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। জানালেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
গতকাল (শনিবার) ওয়াসার শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার পরিদর্শন শেষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাংবাদিকদের জানান, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে চলমান বিধি নিষেধের কারণে গ্রাহকদের বিল পরিশোধে নানা অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে বলে বিলম্ব ফি না নেয়ার বিষয়ে জরুরি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়েরও সম্মতি নেয়া হয়েছে।
এদিকে জীবন রক্ষাকারী অত্যাবশ্যকীয় উপাদান পানির অপচয় রোধে নগরবাসীকে আরো বেশি সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সদস্য মহসীন কাজী। তিনি বলেন, পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ের সুফল নগরবাসীই পাবেন। আবার অপচয়ের দুর্ভোগও তাদের পোহাতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট