চট্টগ্রাম রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫

সর্বশেষ:

সীতাকুণ্ডের লক্ষাধিক মানুষ পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে
পাহাড় ধসের আশংকায় সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ত্রিপুরা পাড়া এলাকা

সীতাকুণ্ডের লক্ষাধিক মানুষ পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুণ্ড

২০ জুন, ২০২৫ | ১:০৩ অপরাহ্ণ

সীতাকুণ্ডে প্রতি বর্ষায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে কখনো কখনো ঘটে যায় মর্মান্তিক প্রাণহানি, আবার কখনো প্রাণে বাঁচলেও ঘরসহ মূল্যবান সম্পদ হারায় পাহাড়ে বসবাসকারীরা। বারবার এসব ঘটনা ঘটলেও অবৈধভাবে বসবাসকারী লক্ষাধিক মানুষ কিছুতেই পাহাড় ছাড়েন না। ফলে চলমান টানা বর্ষণেও দুর্ঘটনা শংকা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বারৈয়াঢালা, বাড়বকুণ্ড, পৌরসভা, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা, সোনাইছড়ি, ভাটিয়ারি ও সলিমপুর ইউনিয়নের পূর্ব অংশে পাহাড়ি এলাকায় যুগ যুগ ধরে অসংখ্য মানুষ বসবাস করে আসছে। তবে এর মধ্যে সর্বাধিক প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার মানুষ বাস করে সলিমপুর ইউনিয়নের জঙ্গল সলিমপুর এলাকায়।

 

এছাড়া দুই সহস্রাধিক মানুষ বসবাস করছেন সোনাইছড়ি, কুমিরা ও পৌরসদরের মধ্যম মহাদেবপুর ত্রিপুরা পাহাড়। অবশিষ্ট বারৈয়াঢালা, বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া ও ভাটিয়ারি এলাকাতেও পাহাড়ে সহস্রাধিক মানুষ বসবাস করে।

 

সরেজমিনে এসব পাহাড় ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বারৈয়াঢালা, পৌরসভা, কুমিরা, সোনাইছড়ি এলাকার পাহাড়ে বসবাসকারীদের ৯০ শতাংশই ত্রিপুরা আদিবাসী। নিজস্ব কোন ভূমি না থাকায় এরা স্বাধীনতা পূর্ব সময় থেকে পাহাড়ে সরকারি খাস ও বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমিতে বসবাস করছেন।

 

সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাহাড় বাসিন্দা ও ত্রিপুরা সর্দার কাঞ্চন ত্রিপুরা জানান, নিজস্ব ভূমি না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে যুগ যুগ ধরে এই পাহাড়ে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, পাহাড়ে বসবাস সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষত বর্ষায় অনেক সময় পাহাড় চূড়ার ঘর থেকে শিশুরা গড়িয়ে পড়ে যায় নিচে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। তাছাড়া বর্ষায় যেকোন সময় পাহাড় ধসের আশংকাও রয়ে যায়। পাহাড় ধস হলে পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। এসব কারণে স্থায়ী জায়গা পাবার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের কাছে বারবার আবেদন করলেও সুফল মেলেনি। একই কারণে কুমিরা, মহাদেবপুরের ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীও পাহাড় ছেড়ে অন্যত্র যেতে পারছেন না বলে জানান কাঞ্চন ত্রিপুরা।

 

একইভাবে উপায় না থাকায় সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন বলে জানান, জঙ্গল সলিমপুর ছিন্নমূল বস্তির বাসিন্দা মো. জামাল, আনোয়ার, রোকসানা বেগম, জোছনা খাতুনসহ অনেকে। তারা বলেন, এখানে কমদামে সরকারি প্লট কিনে ঘর তৈরি করে বাস করছেন তারা। এত অল্পমূল্যে আর কোথাও জায়গা পাওয়া যাবে না বলে তারা এখানে বসতি গড়ে তুলেছেন। তাদের মতো এখানে বাস করছেন লক্ষাধিক মানুষ। কারো নিজস্ব ভূমি না থাকায় সবাই এই পাহাড়ে বাস করছেন।

 

জামাল ও আনোয়ার বলেন, এখানে বর্ষাকালে প্রচুর পাহাড় ধসের ঝুঁকি আছে। টানা বর্ষার সময় মাঝে মধ্যেই পাহাড় ধসে পড়ে ঘরের উপর। এতে পুরো পরিবারও নিশ্চিহ্ন হবার উদাহরণ আছে বহু। এছাড়া আহত তো প্রতিবারই হচ্ছে। কিন্তু তাদের অন্যত্র যাবার উপায় নেই। এখন টানা বৃষ্টি চলছে। সামনে আরো বেশি হবে। এ সময়টা নিয়ে টেনশনে আছেন তারা।

 

সীতাকুণ্ডের ইউএনও মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গল সলিমপুর বা এখানে অন্যান্য পাহাড়ে যারা বাস করছেন কেউই নতুন নয়। তারা দীর্ঘ সময় ধরে বসবাস করছেন। এদের সবাইকে পাহাড় থেকে সমতলে নিতে ইতিপূর্বে প্রশাসন চেষ্টা করলেও তারা পাহাড় ছাড়েনি। আর টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের আশংকা দেখা দিলে আমরা তাদেরকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে চেষ্টা করি। সেক্ষেত্রেও অনেক সময় তারা ঘর ছাড়তে চায় না। তবুও পরিস্থিতির আলোকে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে যারা বেশি ঝুঁকিতে থাকে তাদেরকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিই।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট