সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলমকে বুধবার আদালতে তোলার প্রাক্কালে কক্সবাজারের চকরিয়ায় নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলের পর জেলাজুড়ে সাঁড়াশি অভিযান করেছে পুলিশ।
অভিযানে বুধবার (১৮ জুন) বিকেল থেকে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুর পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগ নেতাসহ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে চকরিয়া থানা পুলিশ। এছাড়া পুরো জেলা জুড়ে অভিযান চালিয়ে মোট ৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলমের ভাতিজা হাছান আল বসরী, ভাগিনা হেলাল উদ্দিন, উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অহিদুজ্জান অহিদ রয়েছেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে নেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।
অন্যদিকে কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী জানান। জেলা জুড়ে একই সময়ে অভিযান চালানো হয়। ওইসময় কুতুবদিয়া, মহেশখালী, উখিয়া, পেকুয়া,রামু,সদর থেকে সাবেক এমপি আশেক উল্লাহর ঘনিষ্ঠজনসহ আরও ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুরো জেলা থেকে মোট গ্রেপ্তার করা হয় ৫৫ জনকে। তারা সবাই আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী।
জেলা পুলিশের তথ্যমতে আটককৃতরা হলেন- রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামশুল আলম মণ্ডল, রাজারকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, চাকমারকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ফতেখারকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আলম, খুনিয়াপালং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক মেম্বার আবু তাহের টুনু, উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মকবুল হোসাইন মিথুন, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম মনজুর, সিনিয়র সদস্য ও সাবেক মেম্বার সিরাজুল বশর, দানু মিয়া চৌধুরী, জালিয়া পালং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য আবুল মনজুর, আওয়ামী লীগ নেতা রিদুয়ান ইসলাম, চকরিয়া যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অহিদুজ্জামান অহিদ, সাবেক এমপি জাফর আলমের ভাতিজা হাসান আল বশির, ভাগিনা হেলাল উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা নুর মোহাম্মদ মাদু মেম্বার, মগনামা নুন্যার পাড়ার মোস্তাক মিয়া, মহেশখালীর যুবলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেন, এমপি আশেকের ঘনিষ্ট সহচর সাদ্দাম, আওয়ামী লীগ নেতা মফিজ মেম্বার, সিরাজ মেম্বার, কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য মো. গিয়াস উদ্দিন এবং লেমশীখালী ইউনিয়নের শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক নুরুল আমিন।
এছাড়া, কক্সবাজার সদর উপজেলায় পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইমরানসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করা রয়েছে।
জানা যায়, বুধবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে চকরিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয় কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলমকে। বিচারক আনোয়ারুল কবির তদন্তকারী কর্মকর্তাদের পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৭টি মামলায় ১৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
আদালত সূত্র জানায়, জাফর আলম চকরিয়া থানার পাঁচটি ও পেকুয়া থানার দুটি মামলার আসামি। এর মধ্যে চকরিয়া থানার ৫টি মামলায় ১৪ দিন ও পেকুয়া থানার ২টি মামলায় ৪ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে । ৭টি মামলায় শুনানি শেষে তাকে কাঠগড়া থেকে নামিয়ে চকরিয়া থানার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।
জাফর আলমকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে হয়রানি করা হচ্ছে দাবি করে এর প্রতিবাদে ঝটিকা মিছিল করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চকরিয়া পৌরসভার মগবাজার এলাকায় তারা ঝটিকা মিছিল করেন। এতে নেতৃত্ব দেন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন জয়নাল, খুটাখালী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম ও চকরিয়া পৌরসভা যুবলীগের কর্মী এনামুল হক। এই মিছিলের পর জেলাজুড়ে আইনশৃঙ্খলার ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠে।
অপরদিকে একইদিন চকরিয়া পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সাবেক এমপি জাফর আলমের ফাঁসির দাবিতে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক এনামুল হকের নেতৃত্বে মিছিল করে বিএনপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
পূর্বকোণ/পিআর