রাঙামাটি কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিনের হস্তক্ষেপে মুক্তি পেয়েছে ভাতের হোটেলে কাজ করতে গিয়ে নির্যাতিত চার শিশু।
বুধবার (১৮) জুন বিকাল ৫টা হতে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ওই ৪ শিশুকে উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার হওয়া চার শিশুরা হলো- কাউখালী উপজেলার যৌথ খামার এলাকার সুইজাইউ মারমার ছেলে অংথোয়াইপ্রু মারমা (১০), অংজাই মারমার ছেলে সুইথুইমং মারমা (৬), কালা মার্মা’র ছেলে পাইসাচিং মারমা(১২) এবং কাপ্তাই উপজেলার ৫ নং ওয়াগ্গা ইউনিয়নের মুরালীপাড়া এলাকার স্লাইচিং মারমার ছেলে হ্লাখ্যাইচিং মারমা (১১)।
নির্যাতিত শিশু সুইজাইউ মারমার পিতা জানান, পাঁচ বছর আগে দোকান মালিক কিশোর ত্রিপুরা আমাদেরকে বলেন, তোমরা তো গরীব মানুষ জুমে কাজ কর, খেতে পারনা, এমনকি ছেলেকে পড়াতেও পার না। আমাকে দিয়ে দাও আমার দোকানে ছোট ছোট কাজ করবে এবং নিয়মিত স্কুলে যাবে লেখাপড়া করবে। এছাড়া আমি তোমাদের মাসে তিন হাজার টাকা করে দিব বলে আমার সন্তানকে নিয়ে যায়।
অন্যান্যা নির্যাতিত শিশুর পরিবারের সদস্যরা জানান, কাজ করার কথা বলে নিয়ে গিয়ে তাদের শিশুদের লেখাপড়াতো করায় না বরং তাদের দিয়ে ভারী কাজ করায়। কাজ না পারলে ওদেরকে লাঠি ও রড দিয়ে নির্যাতন করে শরীরের বিভিন্নস্থানে জখম করে। এরা বাড়ি যেতে চাইলে তাদেরকে যেতে দেয়না। তাদেরকে টাকা, মোবাইল চুরি ও পুলিশকে ধরিয়ে দিবে বলে ভয়ভীতি দেখায়।
৩ নম্বর চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ওয়েশ্লিমং মারমা জানান, ঘটনা আমি শুনেছি এবং নির্যাতিত কজন শিশুর অভিভাবক আমাকে বিষয়টি জানালে দোকান মালিক শিশুদের ছেড়ে বা বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়ার বিষয়ে বলা হলেও আমার কথা শুনেনি।
তিনি জানান, কাজ করা ও লেখাপড়ার কথা বলে শিশু নির্যাতন ঘটনাটি দুঃখজনক। প্রশাসন উদ্ধার অভিযানের সময় মারমা হোটেল মালিক কিশোর ত্রিপুরা এবং তার স্ত্রী হ্লাসুইনুং মারমা মিতাকে দোকানে পাওয়া না গেলেও তার মামাতো বোন ববি মারমা গণমাধ্যম কর্মীদের নির্যাতনের কথা স্বীকার করে।
কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো রুহুল আমিন জানান, চিৎমরম কেয়াংঘাটে একটি মারমা হোটেলে ৪ শিশুকে পড়াশোনার কথা বলে হোটেলে কাজ করাতো মালিক। কাজ না পারলে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতো। পরিবারের কাছে যেতে চাইলে শিশুদের ভয়ভীতি দেখিয়ে যেতে দিত না। বুধবার সন্ধ্যায় ওই দোকানে গিয়ে শিশুদের সাথে কথা বলে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করি। পরবর্তীতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে ৪ শিশুকে হোটেল থেকে উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। নির্যাতিত পরিবারের পক্ষ হতে লিখিত অভিযোগ দেয়া হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পূর্বকোণ/পিআর