কর্ম হারিয়ে দেশে ফেরত আসা সাড়ে ২৩ হাজার প্রবাসীকে কারিগরি প্রশিক্ষণ ও দেশ-বিদেশে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে কাজ করছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। একইসাথে সারাদেশে রেজিস্ট্রেশনকৃত দুই লাখ ৫৩ হাজার প্রবাসীকে দেওয়া হচ্ছে আর্থিক সহায়তা।
করোনাকালীন কাজ হারিয়ে দেশে ফেরত আসা ছয় লাখ প্রবাসীর মধ্য থেকে বাছাই করে তাদের এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে গৃহিত পাঁচ বছর মেয়াদি সরকারি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪২৭ কোটি টাকা।
করোনায় ‘প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণের জন্য অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃজনে সহায়ক’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে সহযোগিতা পেতে সারাদেশে রেজিস্ট্রেশন করেছেন দুই লাখ ৫৩ হাজার প্রবাসী। আবেদনকারীদের মধ্য থেকে প্রথম পর্যায়ে দুই লাখ প্রবাসীকে জনপ্রতি ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে এককালীন পরিশোধ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৫৩ হাজার প্রবাসীকে গত মে মাসে আগের নিয়মে এককালীন টাকা পরিশোধ করা হয়।
আলোচ্য প্রকল্পের অধীনে চট্টগ্রাম থেকে রেজিস্ট্রেশন করেছেন ১০ হাজার ৪৪৮ জন প্রবাসী। রেজিস্ট্রেশনকৃত প্রত্যেকে প্রকল্পের অধীনে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। করোনা মহামারিতে দেশে ফেরত অভিবাসী কর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়াধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে।
প্রকল্পসূত্র জানায়, এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে করোনার কারণে কর্ম হারিয়ে দেশে ফেরত আসা দুই লাখ প্রবাসীকে এককালীন আর্থিক সহযোগিতা প্রদান এবং এদের মধ্য থেকে বাছাইকৃত সাড়ে ২৩ হাজার প্রবাসীকে কারিগরি প্রশিক্ষণ ও দেশ-বিদেশে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া। বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নে ২০২১ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া প্রকল্পের অধীনে সারাদেশে ৮টি এনজিও সংস্থার মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করেন দুই লাখ ৫৩ হাজার প্রবাসী।
এমনকি প্রকল্পের অধীনে চট্টগ্রামের জন্য টার্গেট দেওয়া হয় ১০ হাজার। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে নির্ধারিত টার্গেট ছাড়িয়ে রেজিস্ট্রেশন করেন প্রায় ১৪ হাজার বিদেশফেরত প্রবাসী। রেজিস্ট্রশনকৃতদের মধ্য থেকে ইতোমধ্যে ১০ হাজার ৪৪৮ জন প্রবাসীকে এককালীন ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। রেজিস্ট্রেশনকৃত অবশিষ্ট প্রবাসীর মধ্যে আরও দুই হাজার জনকে এককালীন আর্থিক সহায়তা প্রদানের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। শুরুতে এ প্রকল্পের মেয়াদ ছিল চার বছর। কিন্তু প্রকল্পটির কাজ শেষ না হওয়ায় এটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বিশ্বের ১৭৫টি দেশে এক কোটি ২৫ লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মী কাজ করছেন। করোনা মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে অনেকেই কর্ম হারিয়ে দেশে ফেরত আসেন। আবার অনেকে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় কর্মস্থলে ফিরতে পারেননি। এর মধ্যে কর্ম হারিয়ে দেশে ফেরত আসা প্রবাসীর সংখ্যা প্রায় ছয় লাখ। তবে ফেরত আসা প্রবাসীর মধ্যে অনেকে কর্মস্থলে পুনরায় ফিরে যেতে সক্ষম হন।
অপরদিকে, কাজ হারিয়ে বিশাল একটি অংশ আর কর্মস্থলে ফিরতে পারেননি, দেশে থেকে যেতে বাধ্য হন। কাজ হারিয়ে ফেরত আসা এসব বেকার প্রবাসী পরিবার-পরিজন নিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় সরকার তাদের মধ্য থেকে রেজিস্টেশনকৃত দুই লাখ প্রবাসীকে প্রকল্পের আওতায় নগদ অর্থ সহায়তা দেয়। তবে রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সরকার তাদেরও প্রকল্পের অধীনে সহযোগিতা করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে করোনার কারণে ফেরত অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণের লক্ষ্যে রেইস প্রকল্পের আওতায় দেশের ৩১টি জেলার প্রবাসী কল্যাণ সেন্টারের মাধ্যমে নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে করোনার কারণে বিদেশফেরত অভিবাসী কর্মীগণ বিনামূল্যে এ প্রকল্পে নিবন্ধন করেন।
জানতে চাইলে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের প্রবাসী কল্যাণ সেন্টার চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, প্রকল্পের অধীনে রেজিস্ট্রেশনকৃত প্রত্যেকে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা সহযোগিতা ছাড়াও বাছাইকৃত ২৩ হাজার ৫০০ জনকে দেশ-বিদেশে বিকল্প কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের আন্তর্জাতিক মানের সার্টিফিকেটও দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, মূলত করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসীরা কাজ হারিয়েছেন। তাদের বড় একটি অংশ দেশে ফিরে আসেন। তাদের অনেকেই আর কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারেননি। এসব প্রবাসীর পাশে থাকতেই সরকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
পূর্বকোণ/পিআর