সীতাকুণ্ডে ঝরনা ও লেক দর্শনে এসে একের পর এক পর্যটকের মর্মান্তিক মৃত্যু হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের কিছু গাফিলতি ও দর্শনার্থীদের অতি উৎসাহের কারণে এখানে দুই বছরে ডুবে মারা গেছেন অন্তত পাঁচজন। যাদের মধ্যে একজন চাকরিজীবী; বাকিরা সবাই বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিলেও দুই বছরে সেসবের একটিও আমলে নেয়নি বনবিভাগ। ফলে থামেনি আনন্দভ্রমণে এসে প্রাণহানি।
জানা গেছে, সীতাকুণ্ডে মোট ৭টি ঝরনা রয়েছে। এগুলো হলো- ঝরঝরি, মধুখায়া, সহস্ররধারা-২, সহস্ররধারা-১, সুপ্তধারা, অগ্নিকুণ্ড ও বিলাসী। এসবের মধ্যে উপজেলার ছোটদারোগারহাট লবণাক্ষে অবস্থিত সহস্ররধারা-২, ইকোপার্কে অবস্থিত সহস্ররধারা-১, সুপ্তধারা ও অগ্নিকুণ্ড এলাকায় পর্যটকের আনাগোনা বেশি থাকে। যাবার পথের অবস্থার প্রেক্ষিতে সবচেয়ে সুন্দর অবস্থানে রয়েছে সহস্ররধারা-২ ঝরনা। ফলে এখানেই দর্শনার্থীর আগমন হয় সব থেকে বেশি। এই ঝরনায় যাতায়াতের পথে রয়েছে আরেকটি পাহাড়ি লেক। বর্ষায় লেকের পানি বেশি হওয়ায় নৌকা ব্যবহার করে তা পার হয়ে ঝরনায় যান দর্শনার্থীরা। এতে নৌকা উল্টে এবং এই লেকে নামলে তাতে তলিয়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে বেশি।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এই ঝরনা দর্শনে এসে দুই বছরে মারা গেছেন অন্তত চারজন পর্যটক। এছাড়া বাঁশবাড়িয়ার দুর্গম পাহাড়ে বিলাসী ঝরনা দর্শনে গিয়ে মারা যান একজন। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে গত শনিবার পর্যন্ত সময়ে এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে, সহস্ররধারা-২ ঝরনাটি বনবিভাগ ইজারা দিয়েছে। কিন্তু বনবিভাগ কিংবা ইজারাদারদের উদ্যোগে এখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন গত শনিবার এখানে পানিতে তলিয়ে যাওয়া স্কুলছাত্র তাহসিন আনোয়ারের বন্ধুরা।
অন্যদিকে, ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বনবিভাগকে পরামর্শ দিয়ে বলা হয়েছিল, বনবিভাগ কিংবা ইজারাদারের লোকজন উপস্থিত থেকে যেসকল পর্যটক একদম সাঁতার জানেন না কিংবা কম সাঁতার জানেন তাদের অবশ্যই পানিতে নামতে নিষেধ করবেন। যেখানে বিপজ্জনক গর্ত কিংবা পানির গভীরতা বেশি, সেখানে অবশ্যই সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড লাগাতে হবে। যে স্পটগুলো ইজারা দেওয়া আছে সেখানে ইজারাদারের লোক বাড়াতে হবে। যেসব পর্যটনস্পটের অনুমোদন নেই, সেগুলো বন্ধ করতে হবে। কিন্তু এসব পরামর্শের অনেকগুলোই মানা হয়নি।
বনবিভাগের বারৈয়াঢালা রেঞ্জ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় তারা ইজারাদারদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। ইজারাদাররা সব পরামর্শ মানেননি। তবে কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা বিশেষ করে লাইফজ্যাকেট, লাইফ বয়া ও গাইড নিয়েছে, যা গতবছর ছিল না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সহস্ররধারা-২’র ইজারাদাররা টিকিট কাউন্টারের সামনে এবং গাছের সাথে ফেস্টুন স্থাপন করে ‘সহস্ররধারা-২ লেকে সাঁতার কাটা এবং বিপজ্জনক পথে চলাচল করা সম্পূর্ণ নিষেধ’ লিখে রেখেছে। কিন্তু লেকের যেখানে পর্যটকরা নামেন সেখানে এটির গভীরতা বা বিপজ্জনক অবস্থান নিয়ে কোন নির্দেশনা না থাকায় অনেকেই নেমে পড়েন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইজারাদার নিযুক্ত ঝরনায় প্রবেশের টিকিট বিক্রেতা ইকবাল হোসেন বলেন, তারা গতবছরের তুলনায় এ বছরে নিরাপত্তার সরঞ্জাম বাড়িয়েছেন। কিন্তু কিছু পর্যটক কথা না শুনে লেকে নেমে সাঁতার কাটেন; আবার কেউ কেউ নৌকা থেকে লাফিয়ে পড়েন আনন্দে। এতেই দুর্ঘটনা ঘটে। তাদের কিছু করার থাকে না।
পূর্বকোণ/ইবনুর