এ যেন নিয়তির নির্মম পরিহাস। ৩ বছরের ছোট্ট শিশু মানারুল ইসলাম তাওহীদ, মা ফারহানা আক্তার সুমি একসাথে শায়িত হচ্ছেন। তাদের পাশেই শায়িত হবেন চাচাতো দেবর সাইফুল ইসলাম। এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা গেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার কাটাছরা ইউনিয়নে।
জানা গেছে, এক বছর আগে একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নেন জিয়া উদ্দিন বাবলু। সেই ট্যাক্সি চালিয়ে শনিবার দুপুরে চাচাতো ভাইসহ সপরিবারে শ্বশুর বাড়িতে দাওয়াত খেতে যাচ্ছিলেন। পথে বারইয়ারহাট-খাগড়াছড়ি সড়কের চিনকিরহাট এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ভুলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বালুবোঝাই একটি পিকআপ ভ্যানের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় সিএনজিচালিত অটোরিকশার। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান বাবলুর চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম শাহিন (১৭)। জিয়া উদ্দিন বাবলু (৩০) তাঁর স্ত্রী ফারহানা আক্তার সুমি (২৫), মেয়ে কায়সার জাহান তানিশা (৭) ও ছেলে মানারুল ইসলাম তাওহিদকে (৩) গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টায় মারা যান বাবলুর স্ত্রী ফারহানা আক্তার সুমি ও ছেলে মানারুল ইসলাম তাওহিদ।
নিহত এবং আহতরা সবাই উপজেলার কাটাছড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম বামনসুন্দর গ্রামের রহিম বক্স মাঝি বাড়ি প্রকাশ বেলু বলী বাড়ির বাসিন্দা। একই বাড়ির তিনটি মানুষের একসাথে মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ স্বজন ও এলাকার বাসিন্দারা। এম্বুলেন্সের সাইরেন বাজার সাথে সাথে সবাই জড়ো হচ্ছেন। বাড়ির উঠোনে সাজিয়ে রাখা হয়েছে খাটিয়া। একের পর এক লাশ আসছে উঠোনে। স্বজনদের কান্নায় ভারী হচ্ছে আকাশ।
আহত জিয়া উদ্দিন বাবলুর বৃদ্ধা মা বিবি হালিমা বিলাপ করতে করতে বলেন, আমার আদরের ছোট্ট নাতি, পুত্রবধূকে হারিয়ে ফেলেছি। মৃত্যুর সাথে হাসপাতালে পাঞ্জা লড়ছে ছেলে এবং নাতনি। আমার মনকে কি করে সান্ত্বনা দিবো। আমার নাতি মানারুলের বয়স তো মাত্র তিন বছর। এই বয়সে তো তার যাওয়ার কথা না। আপনারা আমার নাতি-নাতনি, ছেলে এবং পুত্রবধূকে আমার বুকে ফিরেয়ে দেন।
নিহত সাইফুল ইসলাম শাহিনের বাবা নুরুল করিম বলেন, আমার ৬ জন ছেলে-মেয়ের মধ্যে সবার ছোট শাহিন। সে একটু সহজ সরল। যে যেদিকে যেতে বলে সেদিকে চলে যায়। শনিবার দুপুরে আমাদের কাউকে কিছু না বলে আমার ভাতিজার সাথে তার শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গেছে। সেখানে যাওয়ার পথে একটি বালুবোঝাই পিকআপভ্যানের সাথে ট্যাক্সির সংঘর্ষে আমার ছেলে মারা যায়।
আহত জিয়া উদ্দিনের বড় ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখনো চিকিৎসাধীন আছেন জিয়া উদ্দিন এবং তাঁর মেয়ে কায়সার জাহান তানিশা। এর মধ্যেই তিনজনের লাশ দাফনের প্রস্তুতি চলছে পারিবারিক কবরস্থানে। পাশাপাশি খোঁড়া হয়েছে আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ফারজানা আক্তার সুমি ও তাঁর ছেলে মানারুল ইসলাম তাওহিদের কবর। রবিবার বাদ এশা তাদের তাদের পারিবারিক কবরস্থানে জানাজা শেষে দাফন করা হবে।
জোরারগঞ্জ থানার ওসি সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম বলেন, নিহত সাইফুল ইসলামের বড় ভাই মোহাম্মদ রুবেল বাদী হয়ে পিকআপের চালক শাহাবুদ্দিনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেছেন। তিনজনের লাশ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পিকআপ চালককে আটকে অভিযান চলছে।
পূর্বকোণ/ইবনুর