চট্টগ্রাম রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫

সর্বশেষ:

বন্ধুদের সাথে সীতাকুণ্ড ঝর্ণায় গিয়ে পানিতে তলিয়ে গেল স্কুলছাত্র তাহসিন

বন্ধুদের সাথে সীতাকুণ্ড ঝর্ণায় গিয়ে পানিতে তলিয়ে গেল স্কুলছাত্র তাহসিন

সীতাকুণ্ড সংবাদদাতা

১৪ জুন, ২০২৫ | ৯:৫৬ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বন্ধুদের সাথে ঝর্ণা দেখতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা গেল তাহসিন আনোয়ার (১৭) নামক এক স্কুল ছাত্র।

 

শনিবার (১৪ জুন) সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের ছোটদারোগারহাট লবনাক্ষ পাহাড়ে সহস্রধারা ঝর্ণা দর্শনকালে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস লাশটি উদ্ধার করে। পুলিশ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ৭ ছাত্র সীতাকুণ্ডের ছোটদারোগারহাট পাহাড়ে সহস্রধারা ঝর্ণা দেখতে আসে। এখানে পাহাড়ি এলাকায় ঘোরাঘুরির একপর্যায়ে ফেরার পথে তাহসিন নামক এক ছাত্রের পায়ে কাদা আটকে যায়। এ সময় সহস্রধারায় দায়িত্বে থাকা কয়েকজনের কাছে তারা জানতে চায় ঝর্ণায় নেমে কাদা মাটি ধোয়া যাবে কি না। এতে কোন সমস্যা নেই জানালে তাহসিন ঝর্ণায় পানিতে নেমে পা ধোয়ার চেষ্টা করলে পা পিছলে গভীরে পড়ে যায়। এ সময় তার সহপাঠীরা বন্ধুকে বাঁচাতে উপস্থিত দায়িত্বরতদের সহযোগিতা চাইলেও কেউ এগিয়ে না এসে তা দেখতে থাকে। একপর্যায়ে তাহসিন ডুবে তলিয়ে যায় সেখানে। পরে বন্ধুরা থানায় খবর দিলে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে সাড়ে ৭টার দিকে লাশটি উত্তোলন করে।

 

তাহসিনের সাথে ঝর্ণা দেখতে আসা চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অন্য ছাত্র নাফিস, কফিল, ফাহিম, সুমিত, ইবরার ও আহাদ বেড়াতে এসে বন্ধু তাহসিনকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা ঝর্ণায় দায়িত্বরতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, তারাই বলেছে ঝর্ণায় নামলে অসুবিধা নেই। আবার তাদের চোখের সামনে ডুবে যাবার সময়ও তারা এগিয়ে আসেনি। এ কেমন নিষ্ঠুরতা।

 

নিহত তাহসিন আনোয়ার চট্টগ্রাম কেইপিজেটের প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনোয়ার কবির ও জীবন বীমা কর্পোরেশনের জিএম লুৎফর নাহারের একমাত্র সন্তান। তাদের বাড়ি নোয়াখালীর লক্ষীপুরে হলেও তারা চট্টগ্রামের ডিওএইচএস কলোনিতে বসবাস করে আসছিলেন। এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে তাহসিন।

 

ঘটনার সময় তাহসিনের সাথে থাকা বন্ধু ফাহিম জানান, পাহাড়ি এলাকায় ঘুরে যখন তারা ঝর্ণার কিনারায় আসে তখন তাদের পায়ে ছিল কাঁদা-মাটি। এ সময় সহস্রধারার দায়িত্বরত কর্মকর্তারা তাদেরকে বলে ঝর্ণাতে নামলে তাদের কোন অসুবিধা হবে না। পায়ে লাগা কাঁদা পরিষ্কার করতে পারবেন।

 

আশ্বস্ত হয়ে তাহাসিন যখন ঝর্ণার পাড়ে পায়ের কাঁদা ঝর্ণার পানিতে পরিষ্কার করছিল তখন পা পিছলে ঝর্ণার মধ্যে পড়ে গিয়ে পানিতে তলিয়ে যায়। এ দৃশ্য সবাই দাঁড়িয়ে দেখলেও কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।

 

সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র কর্মকর্তা মচিন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, খবর পেয়ে ঝর্ণার পানির ৩০ ফিট গভীর থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। লাশ থানা পুলিশকে হস্তান্তর করা হয়েছে।

 

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফখরুল ইসলাম বলেন, তাহসিনের মরদেহ পরিবারকে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এই মৃত্যুর পিছনে সহস্রধারা ঝর্ণার কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের কোন গাফেলতি থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুজিবুর রহমান ঝর্ণা থেকে মরদেহ উদ্ধার তথ্য নিশ্চিত করেন।

 

প্রসঙ্গত, সীতাকুণ্ডের এই সহস্রধারা ঝর্ণায় ইতিপূর্বেও বহু দর্শনার্থী ডুবে মারা গেছে। কিন্তু এরপরও ঝর্ণাটি থেকে দর্শনার্থীদের রক্ষায় তেমন কোন পদক্ষেপ না থাকায় বারবার এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।

 

পূর্বকোণ/সৌমিত্র/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট