খাগড়াছড়ি জেলা সদরের সরকারি একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী মেঘলা (ছদ্মনাম)। বয়স কেবল ১৫ বছর ৯ মাস। অথচ আগামী সোমবার তার বিয়ে এবং রবিবার গায়ে হলুদের দিন ধার্য্য। সব আয়োজনও চূড়ান্ত প্রায়। অতিথিদের নিমন্ত্রণের পালাও শেষ। বর ও কনে উভয়ের বাড়ি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার গোলাবাড়ি ইউনিয়নের উত্তর গঞ্জপাড়া এলাকায়।
বরের বাড়িতে সাজানো হচ্ছে প্যান্ডেল, সাজসাজ রব। বর ইদুল হাসান (২৯), চট্টগ্রামের বারৈয়ারহাটে সবজির ব্যবসা করেন তিনি। কনের প্রাপ্ত বয়স না হলেও দুই পরিবার সম্মত হয়েছিল এই বিয়েতে। কিন্তু তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুজন চন্দ্র রায়।
শুক্রবার (১৩ জুন) দুপুরে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তিনি সদর থানা পুলিশের সহায়তায় জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুস্মিতা খীসাকে সঙ্গে নিয়ে উত্তর গঞ্জপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন।
অভিযানে গিয়ে দেখা যায়, বর ও কনের বাড়ি একেবারেই পাশাপাশি। বিয়ের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়ে গেছে। রান্নার সরঞ্জাম এসে গেছে, বাড়িতে উৎসবমুখর পরিবেশ। তবে বিয়ের কনে অপ্রাপ্ত বয়স্ক। জন্মসনদ ঘেঁটে বাল্য বিয়ের প্রস্তুতির সত্যতা পান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
কনে মেঘলা (ছদ্মনাম) বলেন, আমি এই বিয়ে করতে চাই না। আমার ইচ্ছে আরও পড়াশুনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর।
বর ও কনের পরিবার নিজেদের ভুল স্বীকার করে ভবিষ্যতে এমন কাজ আর করবে না বলে মুচলেকা দেন। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুজন চন্দ্র রায় বর ও কনের পিতা উভয়কে ১০ হাজার টাকা করে মোট ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চন্দ্র রায় বলেন, নিজের অপরাধ স্বীকার করায় প্রাথমিকভাবে উভয় পরিবারকে সতর্ক করে মুচলেকা নেওয়ার পাশাপাশি অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একইসাথে ভবিষ্যতে যেন মেঘলা (ছদ্মনাম) প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে বিয়ে দিতে না পারে সেইজন্য স্থানীয় গণ্যমান্য, শিক্ষক ও সাংবাদিকদের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কমিটি করা হয়েছে।
পূর্বকোণ/জহুর/জেইউ/পারভেজ