চট্টগ্রাম শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

সর্বশেষ:

সীতাকুণ্ডে পাঁচ কোটি টাকায় নির্মিত ১০ শয্যার হাসপাতাল চালু হয়নি ৫ বছরেও

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুণ্ড

৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে অজ্ঞাতনামা রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র এক সপ্তাহে ১১টি শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর স্থানীয় ত্রিপুরা আদিবাসীসহ স্থানীয়দের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ১০ শয্যার সরকারি হাসপাতাল নির্মাণের পর সেই হাসপাতালে দুইজন চিকিৎসক নিয়োগ পেলেও ৫ বছরেও চালু হয়নি হাসপাতালটি। ফলে সেসময় আশাবাদী হয়ে উঠা ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের মানুষগুলো হতাশ।

 

একইভাবে স্থানীয় হাজার হাজার মানুষের সাথে হতাশ সরকারিভাবে হাসপাতাল তৈরির জন্য ৩ কোটি টাকা মূল্যের ৫১ শতক জমি দানকারী সমাজসেবক ব্যক্তিটিও। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার অভাবে বিদ্যুৎ ও অন্যান্য পরিষেবা সেখানে না পৌঁছানোয় এ অবস্থা হয়েছে।

 

জানা গেছে, ২০১৭ সালের জুন মাসে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ফুলতলা ত্রিপুরা পাড়ায় হঠাৎ অজ্ঞাত রোগ ছড়িয়ে পড়লে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ১১ শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। সে ঘটনা মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার শুরু হলে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সেসময় সরকারের উচ্চ পর্যায়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ টিম, স্থানীয় সাংসদসহ জনপ্রতিনিধিসহ বহু সচেতন মানুষ ঐ এলাকা পরিদর্শন করে এ এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়সহ সর্বসাধারণের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য একটি ১০ শয্যা হাসপাতাল স্থাপন করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, হাসপাতাল করতে হলে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জায়গা দিতে হবে। এ তথ্য জেনে এগিয়ে আসেন ঐ এলাকারই বাসিন্দা শিল্পপতি ও সমাজসেবক মো. মাস্টার আবুল কাসেম। তিনি ৩ কোটি টাকার দামের নিজস্ব মালিকানাধীন ৫১ শতক জায়গা রেজিস্ট্রি করে দেন হাসপাতালের জন্য।

 

এরপর স্থানীয় তৎকালীন সংসদ সদস্য দিদারুল আলমসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের তৎপরতায় ৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ৯ মার্চ। দ্রুতগতিতে হাসপাতালটির নির্মাণও সম্পন্ন হয়। শেষে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অধীনে সেখানে দুইজন চিকিৎসকও নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালটিতে যেতে হয় রেললাইন পার হয়ে। এখানে একটি রাস্তা তৈরি করা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ খুবই জরুরি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পাওয়ায় হাসপাতালে বিদ্যুৎ সংযোগ এবং রাস্তা নির্মাণ শেষ করতে না পারায় হাসপাতালটি চালু করা যাচ্ছে না।

 

হাসপাতালটির ভূমিদাতা শিল্পপতি ও সমাজসেবক মাস্টার আবুল কাসেম প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের সোনাইছড়ি এলাকাতে একটি ভালো ফার্মেসিও ছিলো না। এতে সুচিকিৎসা বঞ্চিত ছিলো আদিবাসীসহ সকল সম্প্রদায়ের মানুষ। ত্রিপুরা পাড়ার ভয়াবহ অজ্ঞাত রাগে এত মৃত্যুর পর যখন জানলাম কেউ জায়গা দিলে সরকার হাসপাতাল নির্মাণ করে দিতে রাজি তখন আমি ৩ কোটি টাকা মূল্যের ৫১ শতক জমি আরো ১০ লাখ টাকা খরচ দিয়ে রেজিস্ট্রি করে দিলাম। সেখানে বরাদ্দও এলো এবং একটি দৃষ্টিনন্দন হাসপাতাল তৈরি হলো। কিন্তু এখনো হাসপাতালটি চালু হলো না। এলাকার অবহেলিত মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে করতে দ্রুত চালু করার জন্য আমি জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জনসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

 

সোনাইছড়ি পাহাড়ের ত্রিপুরা সর্দার কাঞ্চন ত্রিপুরা বলেন, আমরা যুগ যুগ ধরে সুচিকিৎসাসহ সকল নাগরিগ সুবিধা বঞ্চিত। ২০১৭ সালে সুচিকিৎসা না পাওয়ায় আমাদের ১১টি নিষ্পাপ শিশু মারা যায়। আরো বহু লোক রোগে আক্রান্ত হলে আমরা হাসপাতাল স্থাপনের দাবি তুলি। কর্তৃপক্ষও বিষয়টি আমলে নিয়ে দানশীল ব্যক্তির জায়গায় হাসপাতাল নির্মাণ করেন। কিন্তু সেটি চালু না হলে আমাদের দুরাবস্তার তো পরিবর্তন হলো না। এটি দ্রুত চালুর দাবি জানাই আমরা।

 

সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জিয়াউল কাদের বলেন, এ হাসপাতালে যাওয়ার পথে একটি খাল রয়েছে। সেটার উপর একটি অস্থায়ী ব্রিজ তৈরির অনুমোদন হয়েছে। আপাতত একটি অস্থায়ী ব্রিজ তৈরি করা হবে।

 

পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ১০ শয্যার হাসপাতালটি সম্পূর্ণ রেডি। ইতোমধ্যে দুইজন ডাক্তারও নিয়মিত অফিস করছেন। কিন্তু রেল মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না মেলায় যাতায়াতের রাস্তা করা যাচ্ছে না। বিদ্যুতের সংযোগও রেডি কিন্তু রেলওয়ের অনুমতি না পাওয়ায় রেললাইন ক্রস করে লাইন নেওয়া যাচ্ছেনা। ইতোমধ্যে আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। অনুমতি পাওয়া গেলে হাসপাতালটি চালু করা যাবে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট