চন্দনাইশের বিভিন্ন এলাকায় কুঁচিয়ার চাষ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। লাভবান হচ্ছে চাষিরা। এখনো তেমনভাবে কুঁচিয়া চাষের লোকজন বেশি না হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
কুঁচিয়া বা কুইচ্চা নামটি শুনলেই এখনো অনেকে আঁতকে উঠে। কুচিয়া পুষ্টি সম্পূর্ণ একটি মাছ। তা আমরা অনেকে জানি না। খাদ্য হিসেবে গ্রহণ না করলেও এটি এখন রপ্তানিযোগ্য মৎস্য হিসেবে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে। এ মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম মনোপ্রোটাস কুঁচিয়া। কুঁচিয়া সাধারণত কাদা মাটিতে থাকে। প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন খাল, বিল হতে সংগ্রহ করার নিয়ম হচ্ছে কাদা মাটি থেকে খুঁড়ে খুঁড়ে বের করা। প্রাথমিক দৃষ্টিতে এটিকে সাপ বলে মনে করলেও প্রকৃতপক্ষে এটি এক প্রজাতির মাছ। আমাদের দেশে কুঁইচ্চা হিসেবে পরিচিত। দেশের উপজাতীয় জনগোষ্ঠী ব্যতীত বেশিরভাগ মানুষেই খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারেনি কুঁচিয়াকে। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে পুষ্টিগুণ, বাজার চাহিদা, বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার অপার সম্ভবনা হাতছানি দেয়ায় এ প্রজাতির মাছ চাষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিদেশে এ মাছের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।
একটি পরিসংখ্যানে জানা যায়, ২০১৩-১৪ সালে ৭ হাজার ১৭৫ টন কুঁচিয়া বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। এতে প্রায় ১.৫ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে আমাদের দেশে কোথাও কুঁচিয়া চাষ করা হয় নাই। এ দেশে প্রকৃতি থেকে বিপুল পরিমাণে কুঁচিয়া আহরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষায় কুঁচিয়া প্রাকৃতিকভাবে সংগ্রহের পর বিধি-নিষেধ রয়েছে। সময় এসেছে বাণিজ্যিকভাবে কুঁচিয়া চাষাবাদ করার। চন্দনাইশ উপজেলার বরকলে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মমতার সহায়তায় সুচিয়ার সামন্ত পাড়ার জিকু সামন্ত, পৌরসভায় অমিতাভ চৌধুরী টিটু, সাতবাড়িয়া বড়–য়া পাড়ার লিটন বড়–য়া, কাবুল বড়–য়া, ঝর্ণা বড়–য়া, দীপক বড়–য়া, কানাইমাদারীতে মমতার উদ্যেগে কুঁচিয়া চাষ করছে পল্লী কর্মসংস্থান সহায়ক ফাউন্ডেশন পিকেএসএফ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এ চাষ শুরু করে। চাষিরা জানান, প্রতি কেজি কুঁচিয়া শীতকালে ৪’শ থেকে ৫’শ ও অন্যসময় ৩’শ থেকে সাড়ে ৩’শ টাকা বিক্রি হয়। এক বছরের মধ্যে কুঁচিয়াগুলো বিক্রির উপযোগী হয় বলে চাষিরা জানান।
খুব অল্প পরিমাণ স্থানে, জলাশয়ে হাঁপা স্থাপন করে সহজে কুঁচিয়ার চাষ করা যায়। কুঁচিয়া মাটিতে গর্ত করে, জলজ আগাছা বা আবর্জনার নিচে লুকিয়ে থাকে। পুকুরের পাড় ছিদ্র করে এক পুকুর থেকে অন্য পুকুরে চলে যায়। কুঁচিয়া আহরণ করা সহজতর নয়। হাঁপায় চাষকৃত কুঁচিয়া সহজে আহরণ করা যায়। যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে, প্রতিকূল অবস্থায় সহজেই হাঁপাসহ কুঁচিয়া স্থানান্তর করা যায়। হাঁপায় কুঁচিয়া চাষ তুলনামূলকভাবে খরচও কম। কুঁচিয়া রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। স্বল্প ব্যয়ে কুঁচিয়া চাষে ব্যাপক কর্মসংস্থানের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কুঁচিয়া চাষের মাধ্যমে নতুন অথনৈতিক খাত সৃষ্টিসহ বেকারত্ব দূরীকরণ, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, বহিঃবিশ্বে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। কুঁচিয়া চাষাবাদ খুবই লাভজনক।
চন্দনাইশের বিভিন্ন এলাকায় পিকেএসএফের সহায়তায় মমতা’র কুঁচিয়ার চাষ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বরকলে কুঁচিয়া চাষের জন্য ৫টি হাঁপা তৈরি করে প্রদর্শনী কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, মমতা কুঁচিয়ার চাষ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, তারা তাদেরকে এ ব্যাপারে কারিগরি প্রশিক্ষণ, অন্য সহায়তা করে যাচ্ছেন। এখন বেশ কিছু মাছ চাষি কুঁচিয়া চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে কুঁচিয়া চাষ লাভজনক হওয়ায়। কুঁচিয়ার চাষ ক্রমশই জনপ্রিয়তা লাভ করছে চন্দনাইশের বিভিন্ন এলাকায়। কুঁচিয়া চাষের মাধ্যমে সমাজের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করা সম্ভব হচ্ছে।