চট্টগ্রাম সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিশ্ব মানবতার জননী শেখ হাসিনা

শাহিদা আক্তার জাহান

২ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:৪৭ পূর্বাহ্ণ

শেখ হাসিনা। বাংলার নন্দিত নেত্রী, মানবতার বিশ্বজননী। বাংলার কোটি কোটি ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রতীক। শুধু বাংলাদেশের নন, উন্নয়নকামি
তৃতীয় বিশ্বের আকাশে উদিত হওয়া এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা- যার দেদীপ্যমান আলোর বিচ্ছুরণে অন্ধকারাচ্ছন্ন জনপদ

হয়েছে আলোক রশ্মিমালার অগাধ ছড়াছড়ি।

১৯৪৭ সালের ২৮ শে সেপ্টেম্বর মধুমতি নদীর কূল ঘেঁষা টুঙ্গিপাড়ায় জম্মগ্রহণ করেছিলেন শেখ হাসিনা। পদ্মার উত্তাল হাওয়া গায়ে মেখেই আস্তে আস্তে বেড়ে উঠেছিলেন তিনি। বিশাল রাজনৈতিক পরিবারে তাঁর জম্ম। পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি ছিলেন রাজনীতির বিশাল মহীরূহ। পিতা বঙ্গবন্ধুর বাড়িটি ছিল বাংলার মানুষের সকল আশা-ভরসার কেন্দ্রবিন্দু। অতএব শিশু-কৈশোর-তারুণ্য থেকেই প্রতিদিন তাঁর ঘুম ভেঙেছে দাবি ও অধিকার আদায়ের শ্লোগান শুনে। আর শুনতে শুনতে একদিন নিজেই শ্লোগান দেওয়া শুরু করলেন যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা হিসেবে। আস্তে আস্তে হয়ে উঠলেন ছাত্রনেতা। একদিন নির্বাচিত হলেন ইডেন কলেজের ভিপি।

ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯’র গণআন্দোলন ও ৭০’র সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যখন শুরু হল সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম, তখন তিনি প্রত্যক্ষ করলেন সকল উথাল-পাতাল, ঘাত-প্রতিঘাত। অন্তরে ধারণ করলেন রাজনীতির কোমল কঠিন সকল পাঠ। ৭১’র ১৬ ই ডিসেম্বর জয় বাঙালি জাতির জয়। উদিত হল স্বাধীনতার নতুন সূর্য। বঙ্গবন্ধু জাতীর পিতা হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করলেন। শুরু হল নতুন পথ।

কিছু পথ চলতে না চলতেই আসলো ১৯৭৫ সাল। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে সৃষ্টি হল বেদনা বিধুর ১৫ই আগষ্ট। নির্মমভাবে সপরিবারে খুন করা হল বঙ্গবন্ধুকে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সকল চেতনা ও আদর্শকে সমূলে নিশ্চিহ্ন করার সকল অপচেষ্টা ছিল এই হত্যাযজ্ঞে। কলঙ্কিত হল রক্তের অক্ষরে লেখা সংবিধান। মসনদ জুড়ে বসল উর্দি পরা প্রচ্ছন্ন বর্ণচোরা পাকিস্তানি ভাবশিষ্য সামরিক জান্তারা। পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসল সকল স্বাধীনতা বিরোধীরা। শুরু হল বানানো ইতিহাসের নতুন অধ্যায়ের। মুছে ফেলার অপচেষ্টা হল বঙ্গবন্ধুর নাম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বাধীনতার ইতিহাসকে। এমনি ক্রান্তিকালে সারা জাতি যখন ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত, যখন জাতিকে দিশা খুঁজে দেবার কেউই রইল না, ঠিক তখনই ১৯৮১ সালের ১৭ ই মে, একটি নিমজ্জিত জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত করার এবং দিশা খুঁজে দেবার মানসে অপার সাহস ও অমিত তেজ নিয়ে আত্মোৎসর্গের মানসিকতা নিয়ে তিনি বাংলার মাটিতে প্রত্যাবর্তন করলেন। স্বজন হারানোর শোককে পাথর চাপা দিয়ে সামনে কঠিন সংগ্রাম লড়াইয়ের হাতছানি। বুকে অসীম সাহস আর জয়ী হওয়ার দৃঢ়প্রত্যয়। এসেই জনতাকে সম্মোধন করে বললেন, “আমি এসেছি আপনাদের কাছে পিতা মুজিবের মত আন্দোলন করতে আপনাদের অধিকার আদায়ের জন্য। আমি আমার সর্বস্ব হারিয়েছি, তবুও আপনাদের আমি পেয়েছি। আর আপনাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে প্রয়োজন হলে আমি আমার মা বাবার মত নিজেকে এই বাংলার মাটিতে উৎসর্গ করব।” বিমান বন্দরের বাইরের সেদিনের বক্তব্যের পর তিনি বধু, কন্যা, মাতা, জায়া সব কিছুরই উর্ধ্বে উঠে শুধু জননেত্রীই হয়ে গেলেন।

তারপর থেকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে বাংলার মানুষের জন্য তাঁর দুরুহ পথ চলা। কিন্তু সব পথ মোটেও কুসুমাস্তির্ন ছিল না। ফলশ্রুতিতে ২৪ জানুয়ারি, ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামে পুলিশ গুলি চালায় নেত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে। আল্লাহতালার অপার রহমতে নেত্রী অলৌকিকভাবে সেদিন বেঁচে গেলেন। কোটালিপাড়ায় আবারও প্রচেষ্টা চালানো হল বোমা মেরে হত্যা করার। কিন্তু সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হল। ২১ আগষ্ট ঢাকায় গ্রেনেড হামলা করা হল বিশালভাবে রাষ্ট্রীয়হীন পরিকল্পনায়। ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্বংশ করতে চেয়েছিল। ২১ আগষ্ট আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে নির্বংশ করার ষড়যন্ত্র ছিল। এমন আক্রমন থেকে ¯্রষ্টা কিভাবে কোন অলৌকিকতায় বাংলার দুঃখী মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছেন তা কেবল বিধাতাই জানেন। কোন বাধা, ভয়, জুলুম কিছুতেই তিনি টলেননি, ভীত হননি। ইপ্সিত লক্ষ্যে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে গেছেন নির্ভীক চিত্তে। তারপর একসময় জনগণের সার্বিক সহযোগিতায় আরোহণ করলেন ক্ষমতায়। শুরু করলেন দ্বিতীয় ধাপের পথ চলা। আর ২১ বছরের জঞ্জাল সরিয়ে একদিকে জাতিকে তার আসল আত্মপরিচয়ে সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলা, অপর দিকে দেশ গঠন ও জাতীয় উন্নয়নে মনোনিবেশ করা। বলাবাহুল্য উভয় ক্ষেত্রেই আজ তিনি এক সফল রাষ্ট্রনায়ক। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর করেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার ও দ- কার্যকর করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন।

উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের যুগান্তকারী উন্নয়ন, দরিদ্র জনগোষ্টির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি, বিধবা ও দুস্থ নারীদের জন্য ভাতা, বয়স্ক ভাতা,আশ্রয়ণ প্রকল্প, কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, মাতৃকালীন ভাতা, বিনামূল্যে বছরের প্রথম দিনই বই বিতরণ, ছাত্র ছাত্রীদের উপবৃত্তি, যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত বৈপ্লবিক উন্নয়ন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, গঙ্গার পানি চুক্তি ও চুক্তিমত পানি আদায়, সমুদ্র জয়, ছিটমহল চুক্তি বাস্তবায়ন, শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে গৃহযুদ্ধের শান্তিপূর্ণ অবসান, দেশকে কার্যকর ডিজিটাল দেশে উন্নয়ন, কঠোর হস্তে জঙ্গি উত্থান দমন, সর্বোপরি সফল স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মহাকাশ জয়, ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে এবং ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণিক দলিল হিসাবে স্বীকৃতি আদায় করে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে এক সম্মান জনক গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদার আসনে তিনি আসীন করেছেন।

জাতিকে সু-নেতৃত্বের মাধ্যমে কাঙ্খিত
সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য ধীশক্তি সম্পন্ন পারদর্শী নেতার প্রয়োজন হয়। নেপোলিয়ন, কামাল পাশা, ম্যান্ডেলা, চার্চিল, মাহাথির এর মত নেতারা সবসময় আবির্ভূত হয় না। শেখ হাসিনাই বাংলার নেপোলিয়ন, কামাল পাশা, চার্চিল কিংবা মাহথির। যাঁর আবির্ভাব শুধু বাংলাদেশ এবং তার দুঃখী জনগনের ভাগ্যগুণে আর মহান ¯্রষ্টার অপার কৃপাবলে এদেশে হয়েছে। যাঁর দক্ষ হস্তে নিপুন পরিকল্পনায় দেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। এমন ক্ষণজম্মা মহান নেত্রীর জন্য এ বদ্বীপের কোটি কোটি মানুষ আজ ধন্য। বাঙালি জাতি আজ গর্বিত নেত্রীকে পেয়েছি বলে। তাঁর বলিষ্ঠ
নেতৃত্বে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও নারী উন্নযনের জন্য তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৬ সালে ‘গ্লোবাল ফোরাম ফর ডেভেলপমেন্ট’ এবং ইউনাইটেড ন্যাশনস এর পক্ষে থেকে ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ এবং ‘এজেন্ট অব চ্যাঞ্জ’ পদকে ভূষিত করা হয়। ২০১৫ সালে তিনি পরিবেশ বিষয়ে ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ লাভ করেন। ২০১৪ সালে তিনি শিক্ষা উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য ইউনেস্কো কতৃক ‘ট্রি অব দ্যা পিস’ পুরস্কার লাভ করেন।২০১৩ সালে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ‘সাউথ সাউথ কো অপারেশন ভিশনারি অ্যাওয়ার্ড’ দেয়া হয়। ২০১০ সালে তিনি বিশ্বখ্যাত ‘ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পদক ২০০৯’ এ ভূষিত হন। ‘শেখ হাসিনা’ ১৫ এপ্রিল ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী ৪টি দেশে সফর করেছেন এবং তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। আর এ তিনটিতেই তিনি ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তিনি এখন শুধু বাংলাদেশের নেতা নন, তিনি বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা। এই সফরগুলো ও সম্মাননাগুলো তারই কাজের স্বীকৃতি। শেখ হাসিনা একজন সাহসী নারী, নারী ক্ষমতায়নের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে।
আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণে তার অবদান অনন্য ও বর্তমান বিশ্বের জন্য অবিস্মরণীয়।
জাতির জনকের সোনার বাংলার অগণিত দুঃখী মানুষের স্বপ্ন, শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নে তিনি আজ দেশে বিদেশে আলোচিত ও সমাদৃত। বাংলাদেশের গণমানুষের হৃদয়কে করেছেন জয়।
জয় বিশ্ব মানবতার জননী।

লেখক- সদস্য, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট