চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মাথা ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার

অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ

২৯ আগস্ট, ২০১৯ | ১২:৪৭ পূর্বাহ্ণ

মা থা ব্যথার ইতি হাস সু-প্রা চীন। খ্রিস্ট জন্মের দু’শো বছর আগে থেকে খ্রিস্টজন্মের দু’শো বছর পর অর্থাৎ এই চারশো বছরের মধ্যে বিখ্যাত চিকিৎসক ‘চরকের’ জীবদ্দশা কেটেছে কোনও একসময়। তিনি মাইগ্রেন সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করে গেছেন চরকসংহিতায়। আয়ুর্বেদে এটাকে বলা হয় অর্ধাবভেদক। যদিও ‘মাইগ্রেন’ শব্দটা এসেছে ফরাসি শব্দ ‘মিগ্রেন’ থেকে। চলতি কথায় আমরা রোগটাকে বলি আধকপালি, যেহেতু মাথার যে কোনও একটি পাশ জুড়েই শুরু হয় ব্যথার দপাদপি।
ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব নিউরোলজির সংজ্ঞা অনুযায়ী মাইগ্রেন হল এমন একটি রোগ যেখানে বারে বারে মাথাব্যথার সঙ্গে থাকবে বমিভাব, চোখের যন্ত্রণা, দেখতে অসুবিধা, খিদে কমে যাওয়া, আলো ও শব্দ সহ্য করতে না পারা, বমি ইত্যাদি উপসর্গ।
মাথাব্যথার তীব্রতা স্থায়িত্ব ও ধরন একেক সময় একেক রকম হতে পারে।

নানা ধরনের মাইগ্রেনের মধ্যে শতকরা ৮৫ভাগই হল জটিলতাহীন সাধারণ মাইগ্রেন, চোখের সমস্যা থাকে ১০ ভাগ ক্ষেত্রে, নার্ভের তীব্র যন্ত্রণা ৪ ভাগ, অন্যান্য উপসর্গ ১ ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়।
মাইগ্রেন হরেক রকম : উপসর্গ অনুযায়ী মাইগ্রেন তিন ধরনের ক্লাসিক মাইগ্রেন : যেখানে যন্ত্রণা শুরু হওয়ার আগে কিছু পূর্বাভঅস বা অরা (অটজঅ) থাকে। এরপর শুরু হয় আসল যন্ত্রণা, থাকে এক থেকে তিনদিন।
কমন মাইগ্রেন : হঠাৎ যন্ত্রণা শুরু হয়। কয়েক ঘণ্টা পর নিজে থেকেই কমে যায়।
কমপ্লিকেটেড মাইগ্রেন : বেশ কয়েকদিন থাকে মাথার যন্ত্রণা। দেহের কোন অঙ্গ অবশ লাগতে পারে, দেখতে অসুবিধা হতে পারে, বারে বারে বমি হতে পারে।

কীভাবে বুঝবেন : মাইগ্রেনের ব্যথার কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আছে, যার সাহায্যে মাথা ব্যথার অন্য কারণগুলো থেকে একে আলাদা করা যায়। অল্প বয়সীদের (১৫বছর) মধ্যেই বেশি হয় মাইগ্রেন। পুরুষদের থেকে মহিলার তিনগুণ বেশি ভোগেন এই রোগে। সম্ভবত হরমোনের তারতম্য, মানসিক চাপ, উপবাসসহ নানা কারণ এর জন্য দায়ী। ব্যথা শুরু হতে পারে দিনের যে কোনও সময়, প্রধানত সকালে। যে কোনও চোখের ঠিক পিছনে একটা অস্বাস্থ্যকর মৃদু ব্যথা শুরু হয়।
আধঘণ্টার মধ্যে ব্যথা বেড়ে সেই দিকের মাথায় ছড়িয়ে পড়ে, কপালের রগে দপদপানি শুরু হয়। বাড়তে বাড়তে অসহনীয় হয়ে উঠে। রোগীর গা গোলায়, অনেকের বমি হয়, আলো, শব্দ এমনকি স্বাভাবিক কথাবার্তাও রোগী সহ্য করতে পারে না। চেষ্টা করে অন্ধকারে ঘরে একা শুয়ে থাকতে। মেজাজটাও সপ্তমে চড়ে থাকে, অকারণে রেগে ওঠে অপরের ওপর। সাধারণত এক থেকে তিন দিনের মধ্যেই ব্যথা কমে আসে, রোগী সুস্থ বোধ করে। বারে বারে যাদের এমন হয় তাদের মধ্যে শতকরা কুড়িজন আগেভাগেই বুঝে ফেলেন যে তারা মাইগ্রেনের শিকার হতে যাচ্ছেন। কয়েকদিন আগে তাদের ঘুম কমে যায়, খাবার ইচ্ছে কমে যায়। অকারণে ক্লান্তি ও অবসাদ আসে, দেখতে অসুবিধা হয়, চোখের সামনে আলোর ঝলঝলানি বা ফ্ল্যাশিং হয়। দেহের একপাশে দুর্বল লাগে, কথা জড়িয়ে যায় ইত্যাদি এদের এক সঙ্গে বলে ‘অরা’।
হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধান : হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার একটা নিজস্ব ধরন আছে। যেখানে রোগের উৎসটাকে খুঁজে বের করতে হয়। কখন বাড়ে ও কমে কখন? এসব কেসহিস্ট্রি বিস্তারিত জেনেই ওষুধ প্রদান করতে হয়। গতানুগতিক ওষুধ প্রয়োগ হিতে বিপরীত হয়। অন্য প্যাথির মত গতানুগতিক প্রেসক্রিপশান রোগ আরোগ্যের ক্ষেত্রে বিঘœ সৃষ্টি হয়। চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ও পরামর্শমত ওষুধ সেবন করতে হয়।

হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ‘ইমিউন সিস্টেম কে’ উজ্জীবিত করে। তাই সংক্ষেপে মাইগ্রেনে ব্যবহৃত কিছু ওষুধের নাম উল্লেখ করলাম। ১) বেলেডোনা, ২) গ্লোনিয়ন, ৩) সাঙ্গুনেরিয়া ৪) স্পাইজেলিয়া, ৫) সাইলেসিয়া, ৬) মেড্রোহিনাম, ৭) নেট্রাম মিউর, ৮) টিউবারকুলিন লক্ষণ ভেদে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

লেখক : সাবেক অধ্যক্ষ ডা. জাকির হোসেন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট