চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঋণখেলাপির তালিকা সংসদে

নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ জানুয়ারি, ২০২০ | ১০:১০ অপরাহ্ণ

অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ঋণ শোধ না করায় ঋণ খেলাপিদের কাছে আটকে আছে ব্যাংকগুলোর বড় অঙ্কের টাকা। সব মিলিয়ে এ টাকার পরিমাণ ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। ঋণখেলাপি এসব গ্রাহক বিভিন্ন সময়ে পরিশোধ করেছেন ২৬ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। এননটেক্স, ক্রিসেন্ট, বিল্ডট্রেড, হলমার্কের মতো আলোচিত ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতরা রয়েছে শীর্ষ খেলাপির তালিকায় । আবার এ তালিকায় স্থান পেয়েছে বেশ কিছু ভালো ব্যবসায়ীদের নামও।

আজ বুধবার (২২ জানুয়ারি) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পক্ষে জাতীয় সংসদের টেবিলে এ তালিকা উপস্থাপন করা হয়। অর্থমন্ত্রীর কাছে সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম জানতে চেয়েছিলেন, যেসব কোম্পানি ঋণখেলাপি, তাদের খেলাপি ঋণ ও পরিশোধিত ঋণের পরিমাণ কত? এর জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, যেসব কোম্পানি গত নভেম্বর পর্যন্ত ঋণখেলাপি, তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৬ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। এদের মধ্যে ২৬ হাজার ৮৩৬ কোটি পরিশোধিত হয়েছে। এ সময় অর্থমন্ত্রী সংসদে ৮ হাজার ২৩৮ প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ও তাদের পরিশোধিত ঋণের তালিকা তুলে ধরেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ডাটাবেজ থেকে ২০১৯ সালের নভেম্বর ভিত্তিক এ তালিকা দেয়া হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী সংসদে জানান, ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণ ছিল ৩১ হাজার ২৮ কোটি টাকা, এর মধ্যে খেলাপি ছিল ৯ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। ২০০৮ সাল শেষে ঋণ বেড়ে হয় ২ লাখ ৮ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা, এর মধ্যে খেলাপি ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে সেপ্টেম্বরে ঋণ বেড়ে হয় ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। আর খেলাপি ঋণ বেড়ে হয় ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। ফলে ২০০৮ সালের তুলনায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫ গুনের বেশি।

সংসদে দেয়া অর্থমন্ত্রীর তালিকা অনুযায়ী, দেশের শীর্ষ ঋণখেলাপি গ্রাহক এখন এননটেক্স, এরপরই ক্রিসেন্ট গ্রুপ। এ প্রতিষ্ঠান দুটি রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছেন। দুটি প্রতিষ্ঠানই ঋণের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, আবার ব্যাংকের ঋণও শোধ করেনি। এননটেক্সের মালিক ইউনুছ বাদল দেশ ছেড়েছেন, আর ক্রিসেন্টের মালিক এম এ কাদের কারাগারে। তবে ক্রিসেন্টের আরেক মালিক চলচ্চিত্র প্রযোজক আবদুল আজিজ রয়েছেন বহাল তবিয়তে। এননটেক্সের কয়েকটি কারখানায় আগুন লেগেছে, আর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ক্রিসেন্টের জুতা উৎপাদন ও জুতার শো রুম।

এছাড়াও খেলাপির শীর্ষ তালিকায় রয়েছে বিল্ডট্রেড গ্রুপ ও চ্যানেল নাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনায়েতুর রহমান। তাঁর কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। স্বাস্থ্য খাতের আলোচিত ব্যবসায়ী মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, নর্থ বেঙ্গল পোলট্রিসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। এ দুই গ্রাহকই নামে বেনামে বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছেন।

খেলাপির তালিকায় ভালো কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামও উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে রহিম আফরোজ, নাভানা লিমিটেড, অটবি, আবদুল মোনেম সুগার রিফাইনারি, কেয়া, গ্রামীণ শক্তি, সিনহা ইয়ার্ন অ্যান্ড ডায়িং, এনা প্রোপার্টিজসহ আরও কয়েকটি।

খেলাপির তালিকায় আরও রয়েছে সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক, রূপালী ব্যাংকের বেনিটেক্স ও গোল্ড আনোয়ার, অগ্রণী ব্যাংকের গ্রাহক জাহাজ ভাঙা ও নির্মাণ খাতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। আবার এবি ব্যাংকের অফশোর ইউনিটের মাধ্যমে অর্থ পাচার করা কয়েকজন গ্রাহকও এখন শীর্ষ খেলাপির তালিকায় উঠে এসেছে।

ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়ে গেছে। এ তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, এফএএস ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিংসহ আরও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এপোলো ইস্পাত, এমারেল্ড ওয়েল্ডও খেলাপি।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরে ঋণখেলাপিদের বড় সুবিধা দেয়। বকেয়া ঋণের ২ শতাংশ টাকা জমা দিয়েই ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দেয়া হয় খেলাপিদের। এতে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদহার ধরা হয়। আর বিধান করা হয় ঋণ পরিশোধে এক বছরের বিরতিসহ ১০ বছরের মধ্যে বাকি টাকা শোধের । এ সুবিধার আওতায় ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ রয়েছে চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট