দেড় বছর পর আবার করোনায় সম্প্রতি তিনজনের মৃত্যুতে বাংলাদেশের মানুষের মাঝে বেড়েছে কিছুটা উদ্বেগ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলেও এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সবাইকে শুধু একটু সচেতন থাকতে হবে।
২০২৫ সালের ৫ জুন রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রবীণ এক ব্যক্তি, ১৩ জুন রাজধানী ঢাকায় একজন এবং চট্টগ্রামে একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এই তিনজনের মৃত্যুর পর নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জারি করা হয়েছে ১১টি নির্দেশনা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার নতুন দুটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে যারা বয়স্ক, শারীরিকভাবে দুর্বল কিংবা আগে থেকে জটিল রোগে আক্রান্ত তাদের স্বাস্থ্যবিধি মানাটা জরুরি। কেননা তাদের জন্য এই ভ্যারিয়েন্ট মারাত্মক হতে পারে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) তথ্যমতে, চলতি বছর সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো করোনার নতুন দুটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি এবং এক্সএফসি। যেগুলো ওমিক্রন জেএন. ১-এর একটি উপ-শাখা। সম্প্রতি যেসব নমুনা পাওয়া গেছে, তার প্রায় সবগুলোতে এক্সএফজি ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, এখন পর্যন্ত দুটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা করোনা সংক্রমণের যে হার, তাতে উদ্বেগের কিছু নেই। অনেকদিন ধরে কোভিডের কোনো রোগী ছিল না। ফলে আমাদের হাসপাতালগুলোতে তেমন কোনো প্রস্তুতি রাখা হয়নি। এখন যেহেতু অল্প পরিমাণে সংক্রমিত রোগী পাওয়া যাচ্ছে, ফলে আমরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও কুর্মিটোলা হাসপাতালকে প্রস্তুত করেছি। আপাতত ৫০ শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেশি শয্যা প্রস্তুত করে কী করব- হাসপাতালে তেমন রোগীর চাপ নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, প্রাথমিকভাবে সব রোগীদের করোনা পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র যাদের জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট বা অন্যান্য উপসর্গ রয়েছে এবং যারা জটিল অবস্থায় রয়েছে, তারাই করোনা পরীক্ষা করাবেন।
ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে জানিয়ে আবু জাফর বলেন, যাদের কখনোই ভ্যাকসিন দেয়া হয়নি তাদের অবশ্যই ভ্যাকসিন নিতে হবে। বিশেষ করে ১৮ বছরের উপরে যারা, বিভিন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করেন, অন্তঃসত্ত্বা নারী তাদের ভ্যাকসিন দিতে হবে। আর পুরাতনদের মধ্যে ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের ভ্যাকসিন দেওয়া জরুরি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. হালিমুর রশীদ জানান, প্রাথমিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহসহ বিভাগীয় শহরের হাসপাতালগুলোতে করোনা পরীক্ষা চালু হয়েছে। যেসব হাসপাতালে আরটি-পিসিআর ল্যাব রয়েছে, শুধু সেখানেই শুরুতে এই সুবিধা মিলবে।
তিনি জানান, স্থানীয় কোম্পানিগুলো থেকে পরীক্ষার কিট সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশ থেকেও কিট আমদানির জন্য সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপোকে (সিএমএসডি) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যাদের উপসর্গ থাকবে, তারাই পরীক্ষার সুযোগ পাবেন। সংক্রমণের হার যদি আরও বাড়ে, তাহলে পরীক্ষার পরিধিও বাড়ানো হবে।
জনগণকে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া এবং উপসর্গ দেখা দিলে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ডা. হালিমুর রশীদ বলেন, আমরা চাই না পরিস্থিতি আবার হাতের বাইরে চলে যাক। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
এছাড়া সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসাধারণের করণীয়তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে ১১ নির্দেশনাও। এছাড়া প্রয়োজন হলে নিকটস্থ হাসপাতালে অথবা আইইডিসিআর (০১৪০১-১৯৬২৯৩) অথবা স্বাস্থ্য বাতায়ন (১৬২৬৩) নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
পূর্বকোণ/ইবনুর