চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিদায় ২০১৯

অধ্যাপক রতন কুমার তুরী

৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ২:৫৫ পূর্বাহ্ণ

পুরনো সব গ্লানিকে পেছনে ফেলে মহাকালের গহ্বরে হারিয়ে গেলো আরো একটি বছর। তার সাথে নতুন প্রত্যাশা নিয়ে উদিত হলো নতুন বছরের লাল সূর্য। বিগত ২০১৯ সালটিতে প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি ছিল অনেক বেশি। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল লক্ষণীয়। দেশ পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষতা দেশ ছেড়ে বিদেশেও সুনাম অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রীর সততা এবং দুরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই দেশ আজ মধ্যআয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। পদ্মাসেতুর মতো একটি আকাশ ছোঁয়া কল্পনার সেতু এখন বাস্তবে পরিণত হতে চলেছে। দেশের বিদ্যুৎ এখন প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। আগের মতো ঘন ঘন লোডসেডিং নেই বললে চলে। বিগত বছরে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ ছিল রোহিঙ্গা সমস্যার একটি আশু সমাধান খুঁজে বের করে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো। প্রধানমন্ত্রীর নিরলস প্রচেষ্টায় তা বার বার বিশ্বদরবারে আলোচিত হয়েছে এবং বর্তমানে মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আশা করা যায় রোহিঙ্গা বিষয়টি মায়ানমার খুব দ্রুত সমাধানের দিকে এগিয়ে নেবে। বিগত বছরে আরো একটি আলোচিত বিষয় ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর যুদ্ধ ঘোষণা এবং তার নিজের দলের দুর্নীতিবাজসহ দেশের সকল দুর্নীতিবাজদের শাস্তির আওতায় আনা।

অভিযান এখনও চলমান রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে একটি দেশের উন্নয়ন এবং জনগণের কল্যাণ নির্ভর করে দেশটির ক্ষমতার শীর্ষ নেতৃত্বে যারা থাকেন তাদের ওপর। দেশ পরিচালনায় তাদের দক্ষতা এবং জনগণের কল্যাণ সাধনে আন্তরিকতা সর্বোপরি ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধে অবস্থান করে দেশসেবা করার মাঝেই লুকিয়ে আছে দেশের আসল উন্নতি।

বিগত বছরে এসকল উপাদানের প্রায় সবগুলোই উপস্থিত ছিল দেশপরিচালনায়, ফলে দেশ এগিয়ে গেছে উন্নয়নের পথে। তবে কিছুক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীকে প্রায় একাই লড়তে হয়েছে, যেমন দুর্নীতি এবং দেশ থেকে মাদকনির্মূলে। দেশের মাথাপিছু আয় বাড়া সত্ত্বেও কিছু মানুষ এক লাফে বড় লোক কিংবা কোনো কাজ-কর্ম না করেই বড় লোক হওয়ার জন্য দুর্নীতি এবং মাদকব্যবসাকে বেছে নিয়েছে, যা পর্যায়ক্রমে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। প্রধানমন্ত্রী তা বুঝতে পেরে বিগত বছরে দুর্নীতি এবং মাদকের বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং দুদককে নির্দেশ দেয়। সে অনুযায়ী বেশ ক্ষাণিকটা কাজ হলেও এর সুফল পেতে আরো সময় লাগবে। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশে দুর্নীতি এবং মাদক বেশ গভীরে শেকড় পুঁতেছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর এবিষয়ে কর্মকা- দেখে মনে হচ্ছে আমরা খুব দ্রুতই এসব বিষয় থেকে বের হতে চলেছি। দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনা গেলে দেশ আগামিতে আরো এগিয়ে যাবে। তাছাড়া দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বিগত বছরে অবাধে চোরাই পথে ইয়াবা প্রবেশ করায় দেশের যুবসমাজ এক কঠিন দিন অতিবাহিত করেছে। এই মাদকদ্রব্য সহজলভ্য হওয়ায় উঠতিবয়সি ছেলেরা সহজেই এর প্রতি আসক্ত হয়ে নেশায় হারিয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে বছরের শেষের দিকে এসে বেশ কড়া পদক্ষেপ নেয়াতে বর্তমানে তা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিদায়ী বছরের মতো নতুন বছরেও মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে বলে সাধারণ জনগণ প্রত্যাশা করে। এ দু’টি বিষয়ে কঠোর এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করলে দেশের অগ্রগতি আরো বেগবান হবে। আমরা একটি স্বনির্ভর এবং সমৃদ্ধশালি বাংলাদেশ চাই, যা আগামি প্রজন্মকে শান্তির পথ দেখাবে। আমাদের এ দেশ স্বাধীন হয়েছে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে। এদেশের প্রতিটি মানুষ কখনও এদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা ভুলবে না। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাই ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলা। স্বাধীনতার এতো বছর পর আমরা এদেশে কতটুকু বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা গড়তে পেরেছি তা প্রশ্ন থাকতেই পারে, তবে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকলে এদেশ আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। তাই নতুন বছরের আমাদের প্রত্যাশা থাকবে একটি দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশকে নিয়ে পরবর্তী প্রজন্ম গর্ববোধ করবে।

অধ্যাপক রতন কুমার তুরী কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, মানবাধিকারকর্মী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট