চট্টগ্রাম সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা

২১ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:১২ পূর্বাহ্ণ

পুরুষের পাশাপাশি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা অমত প্রকাশ করার কোনো সুযোগ নেই। এ দেশের মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য নারীর অবদান বিশদ আলোচনা করলে দেখা যায়, নারী তার সব সামর্থ্য প্রয়োগ করেছিল স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টিতে। ১৯৭১ সালে জীবনকে বাজি রেখে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন অগণিত বাঙালি নারী। অথচ আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নারীর অবদান সেভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। নারীর অবদান একমাত্র লাঞ্ছিত ও ধর্ষিত হওয়ার মধ্যেই নির্দিষ্ট রাখা হয়েছে।

বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণ সম্পর্কে গবেষণাধর্মী কাজ চালু হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের কাছে ‘মুক্তিযুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণ’ এমন সংবাদ বিস্তৃত পরিসরে প্রচার হয়নি। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়, কজন নারী যোদ্ধা আছেন যাদেরকে নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজ হয়েছে, জাতীয় স্বীকৃতি পেয়েছেন। সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীর ধর্ষণের ঘটনাই চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে প্রচারিত হয়েছে সব থেকে বেশি। আর এ কারণেই সম্ভবত রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষিকরা মঞ্চে ওঠেই অনর্গল বলতে থাকেন, তিরিশ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা-বোন, বউ-ঝির ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা। যুদ্ধের সময় বাঙালি নারীরা আমাদের অনেক বড় সহায়-শক্তি ছিল একথা অনেকেই ভুলে গেছেন। এ নারীরা কখনও সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ নিয়েছেন আবার কখন সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ গ্রহণ না করে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন । দুঃসাহসী নারীরা যে যেভাবে পেরেছেন সেভাবে কাজ করেছেন দেশের স্বাধীনতার জন্য। তাঁদের মধ্যে কাঁকন বিবি, তারামন বিবি, শিরিন বানু মিতিল, আশালতা, রওশন আরা প্রমুখ উল্লেখ্য। এসব নারীগণ সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গোবরা, আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে। ভারতে শরণার্থী শিবিরে ডাক্তার, নার্স ও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অসংখ্য নারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের সেবা করেছেন। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী হিসেবে অংশ নিয়েছেন অনেক নারী শিল্পী। তা ছাড়া যুদ্ধ চলাকালে অনেক নারী কবি, লেখক, সাংবাদিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে। তাদের লেখায় ও শিল্পীদের গানে ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা। এত অবদান সত্ত্বেও তাদের সবার মূল্যায়ন হয়নি। অনেক নারীযোদ্ধা সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছেন। যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁদেকে খুঁজে বের করে উপযুক্ত সম্মান জানানো সময়ের দাবি।

শেখ একেএম জাকারিয়া
সুনামগঞ্জ,বাংলাদেশ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট