চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ওসি রেফায়েতের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

১৪ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:৪৩ পূর্বাহ্ণ

আলোচিত ও সমালোচিত পটিয়া থানার সাবেক ওসি রেফায়েত উল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে দুদক। একই সাথে রেফায়েত উল্লাহ’র দুই ভাই মো. আফতাব উল্লাহ চৌধুরী ও মো. হাফিজ উল্লাহ চৌধুরীকেও আসামি করা হয়। গতকাল সোমবার বিকেলে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-চট্টগ্রাম-১ এ মামলাটি দায়ের করা হয়। দুদক, চট্টগ্রাম-কর্যালয়-২ এর সহকারী পরিচালক হুমায়ন কবির বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। যার মামলা নং (৩০) ১৩/১০/১৯। এর আগে অবৈধভাবে উপায়ে অর্জন করা প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের দুটি ফ্ল্যাট জব্দও

করে দুদক। দুদকের মামলা সূত্রে জানা যায়, সাবেক ওসি মো. রেফায়েত উল্লাহ চৌধুরী ও তার দুই ভাই মিলে দুর্নীতির মাধ্যমে ২ কোটি ৭৯ লাখ ২৫ হাজার ৬৬৩ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তর করেন। এসব টাকা রেফায়েত উল্লাহ চৌধুরী ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত করে স্ত্রী নাসরিন আক্তার রুমার নামে বিভিন্ন ব্যাংকে জমা করেছেন। পরবর্তীতে তিনি স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে জমাকৃত টাকা নিজের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করে উত্তোলন করেন। এছাড়া নিজের ব্যাংক হিসাব থেকে ভাই আফতাব উল্লাহ চৌধুরীকে ৬৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকার দুইটি পে-অর্ডার ও আফতাব উল্লাহ চৌধুরীর নামে ৪১ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট কিনেছেন। যার প্রমাণ দুদকের অনুসন্ধানে মিললেও ওসি রেফায়েত উল্লাহ কোন বৈধ উৎস দেখাতে পারেননি বলেও এজহারে উল্লেখ করা হয়।

এ দিকে দুদকের অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, পুলিশের এই কর্মকর্তার নামে এবি ব্যাংক , এনসিসি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে মোট ১২টি হিসাবের তথ্য পায় দুদক। এছাড়া স্ত্রী নাসরিন আক্তার রুমার নামে এবি ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও আল আরাফহ ইসলামী ব্যাংকে মোট ৬টি হিসাবের তথ্যও পাওয়া যায়। তবে ওসি রেফায়েত বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের পর প্রথমে স্ত্রীর ব্যাংক একাউন্টে অর্থ জমা রাখলেও পরবর্র্তীতে এসব টাকা নিজের নামে থাকা বিভিন্ন একাউন্টে সরিয়ে নিতেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক হুমায়ন কবির বলেন, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাটি করা হয়।
রেফায়ের উল্লাহ দু’বছর আগে পটিয়া থানার ওসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে

সংযুক্ত আছেন।

জব্দ করা হয় দু’কোটি টাকার দুই ফ্ল্যাট : এর আগে ওসি রেফায়েতের নামে থাকা জব্দ করা প্রায় দু’কোটি কোটি টাকা মূল্যের দু’টি ফ্ল্যাট ছাড়াও তার নামে থাকা সকল ব্যাংক একাউন্টের হিসাব স্থগিত করেছে দুদক।

জব্দ করা ফ্ল্যাটগুলোর মধ্যে নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির আবাসিক এলাকায় অবস্থিত জুমাইরা গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন নামের একটি ভবনের ২ হাজার ১শ’ ৫০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার ডিউ উদয়ন নামীয় আরেকটি এপার্টমেন্ট ভবনের ১৪শ’ ৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট জব্দ করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারিতে নিজ স্ত্রী নাছরিন আক্তার রুমার দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলায় দায়ের হওয়ার পরই আলোচনায় আসে পুলিশের এই কর্মকর্তা। ওই মামলায় তিনি জেলেও ছিলেন। এছাড়া স্ত্রী নাছরিন আক্তার রুমা সংবাদ সম্মেলন করে ওসির অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়েও দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট