চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন গেটের কনটেইনার স্ক্যানারগুলো অনেক আগের। আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ায় প্রায় সময়ই মেশিনগুলো কিছুক্ষণ ভালো থাকে তো আবার কিছুক্ষণ পর অচল। এভাবে জোড়াতালি দিয়েই চলছে চট্টগ্রাম বন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পণ্য স্ক্যানিংয়ের কাজ। এ কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে, নতুন কেনা চার কনটেইনার স্ক্যানার এখনো চালু করা যায়নি। বক্সবন্দী হয়ে আছে। আর পুরোনো জোড়াতালি মেশিন দিয়েই চলছে কনটেইনার স্ক্যানিং। চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন গেটের পুরোনো এসব মেশিন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বন্দরের সক্ষমতার পাশাপাশি অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
কয়েকজন কনটেইনারবাহী গাড়ি চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের চার নম্বরগেটসহ বিভিন্ন গেটের পুরোনো স্ক্যানার মেশিনগুলো প্রায় সময় নষ্ট থাকে। গাড়িগুলো আমদানি এফসিএল কনটেইনার নিয়ে বের হওয়ার সময় গেটের কাছে গিয়ে জানা যায় মেশিন নষ্ট। তখন ড্রাইভারদের গাড়ি ভিন্ন গেটে পাঠানো হয়। সেখানে গিয়ে দেখা যায় দীর্ঘ লাইন। এমনকি ওই গেট থেকেও ফেরত পাঠিয়ে অন্য গেটে যেতে বলে। এছাড়া সেই গেটে দিয়ে বের হওয়ার অনুমতিও নিয়ে আসতে বলেন দায়িত্বশীলরা। ফলে কনটেইনারবাহী বড় বড় এসব গাড়িকে বন্দরের এক গেট থেকে অন্য গেটে ঘুরতে হয়। এতে নষ্ট হয় বাড়তি তেল ও সময়। তাছাড়া বন্দরের ভেতরেও গাড়ির জট তৈরি হয়।
এর সত্যতা নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ও ফ্লাটবেড ওনার্স এসোসিয়েশনের বন্দর বিষয়ক সম্পাদক মো. ইউনুচ আজাদ পূর্বকোণকে বলেন, বন্দরের ভেতরে নানা সমস্যার মধ্যে সম্প্রতি স্ক্যানার নষ্ট হওয়ায় ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। বন্দরের বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে গাড়ি গিয়ে ফেরত যাচ্ছে। স্ক্যান না হওয়ায় গাড়ি বের হতে পারে না। এতে সময়ের অপচয় হয়। বিশেষ করে যেসব গাড়ি কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রামের বাইরে যাবে তাদের সময় নষ্ট হওয়ায় বেশ ক্ষতিপূরণ গুনতে হচ্ছে। তাছাড়া বন্দরের ভেতরে কনটেইনারবাহী বড় গাড়িগুলো বারবার ঘুরানো অনেক চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। এজন্য বন্দরের অভ্যন্তরে গাড়ির জ্যাম সৃষ্টি হয়ে বন্দরের অপারেশনাল কাজেও ব্যঘাত ঘটায়। তাই এটি দ্রুত সমাধান হওয়া দরকার।
একই প্রসঙ্গে অফডকগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর্ট এসোসিয়েশনের মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার পূর্বকোণকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে ২০১০ সালে আমদানি কনটেইনার আসে প্রায় ৬ লাখ ২৪ হাজার। তারমধ্যে স্ক্যান হয় প্রায় ২ লাখ কনটেইনার। সে সময় চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন গেটে ছিল ৪টির মতো স্ক্যানার মেশিন। অথচ ১৪ বছর পর এসে ২০২৪ সালে বন্দরে আমদানি কনটেইনার দাঁড়ায় প্রায় ১৫ লাখে। যার প্রায় সাড়ে ৬ লাখ স্ক্যান হয়ে বিভিন্ন অফডক ও আমদানিকারকদের চত্বরে গেছে। এরই মধ্যে আবার পুরোনো চারটি স্ক্যানারের আয়ুষ্কাল ১০ বছর ধরলেও ২০২০ সালেই সেগুলোর মেয়াদ শেষ। এখন সেগুলো বাড়তি কাজ করে যাচ্ছে। যার কারণে প্রায় সময় সেগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যদিও এই ১৪ বছরের মধ্যে নতুন তিনটি স্ক্যানার মেশিন বসানো হয়েছে। তবে তা ১৪ বছরে যে পরিমাণ আমদানি কনটেইনার বেড়েছে তার তুলনায় এটি নগণ্য। চট্টগ্রাম বন্দরে পুরোনো স্ক্যানারগুলো অচল ঘোষণা করে আরো অন্তত ৮টি নতুন স্ক্যানার বসানো জরুরি।
এদিকে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য কেনা চার কনটেইনার স্ক্যানারের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত হলেও এখনো চালু করা যায়নি।
পূর্বকোণ/ইব