বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে পর্যাপ্ত সংখ্যক ইঞ্জিন ও ওয়াগন সংকটে চট্টগ্রাম বন্দরে ঢাকা কমলাপুর আইসিডিগামী কনটেইনারের স্তুপ দিন দিন বাড়ছে। এ কারণে বিকল্প সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার বন্দরে জমে থাকা ঢাকা কমলাপুর আইসিডিগামী কনটেইনারগুলো রেলের পরিবর্তে নৌপথে পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে এবার রেলের ইঞ্জিন ও ওয়াগন সংকটের সময়ে কমলাপুর আইসিডি’র কনটেইনার নদী পথে পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালে আনা নেওয়া ও ডেলিভারি করা যাবে। এমন সিদ্ধান্তের পরও যদি আমদানিকারকগণ কনটেইনার ডেলিভারি না নেয় তবে চারগুণ স্টোর রেন্ট আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীদের আমদানি করা পণ্য স্বাভাবিক সময়ে রেলপথে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডিতে পৌঁছাতে সাধারণত দুই থেকে তিনদিন সময় লাগার কথা। অথচ সেখানে এখন সময় লাগছে দুই/তিন সপ্তাহেরও বেশি। ক্ষেত্র বিশেষ কখনও একমাসেরও বেশি সময় লেগে যায়। এ সমস্যা নিরসনে বন্দর কর্তৃপক্ষ পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে এনবিআরকে চিঠি দেয়।
গত মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেখানে ২০২০ সালে করোনার মহামারিতে এবং ২০২৪ সালে বন্যার কারণে রেলপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। সেই সময়েও কমলাপুর আইসিডির পণ্য পানগাঁওয়ে নৌপথে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে আগামী তিন বছরের জন্য ঢাকা আইসিডির পণ্য পানগাঁওয়ে পাঠানোর অনুমতি চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চিঠির পরদিনই বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বন্দরের আবেদনের প্রেক্ষিতে আগামী দুই বছরের জন্য কমলাপুর আইসিডির পণ্য পানগাঁওয়ে নৌপথে পাঠানোর অনুমতি দেয় এনবিআর।
ঠিক তার পরদিনই বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) কঠোর হুঁশিয়ারি দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এক চিঠিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায় আগামী ৯ মার্চের মধ্যে আমদানিকারকগণ যাতে তাদের কনটেইনার ডেলিভারি নিয়ে নেয়। অন্যথায় ১০ মার্চ থেকে চারগুণ হারে স্টোর রেন্ট আরোপের সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত হয় চট্টগ্রাম বন্দরের বোর্ড সভায়।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা কনটেইনারের ৭০ শতাংশই ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকার ব্যবসায়ীদের। এসব কনটেইনারের ৩ শতাংশ পরিবহন হয় রেলপথে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হয় কমলাপুর আইসিডি। এরমধ্যে ডিপোর পরিচালন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে চট্টগ্রাম বন্দর।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরে ঢাকা কমলাপুর আইসিডিগামী কনটেইনারের জন্য নির্ধারিত জায়গায় ৮৭৬ একক কনটেইনার রাখা যায়। তবে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সেখানে ছিল ১ হাজার ৬৫৬ একক। ২০ ফেব্রুয়ারি সেটি হয় ১ হাজার ৮১৫ একক এবং গতকাল পর্যন্ত সেখানে কনটেইনার ছিল ১ হাজার ৮৬৫ একক।
গতকালের হিসেব অনুযায়ী পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৬টি ট্রেন দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। যেখানে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মোট ১১২ একক কনটেইনার ঢাকায় গেছে। এইদিন জাহাজ থেকে আরো ৩২ একক ঢাকা কমলাপুর আইসিডিগামী কনটেইনার নেমেছে। ট্রেন ১১২ একক কনটেইনার যাওয়ার পর এবং নতুন ৩২ একক কনটেইনার যুক্ত হওয়ার পর গতকাল বন্দরে ১ হাজার ৭৮৫ একক ঢাকা আইসিডিগামী কনটেইনার ছিল বন্দরের অভ্যন্তরে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ২৪ ঘণ্টায় ২শ এককের বেশি কনটেইনার রেলের ওয়াগনে লোড করার সক্ষমতা রয়েছে বন্দরের। তবে ইঞ্জিন ও ওয়াগন সংকটের কারণে বন্দর গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ১১২ একক লোড দিতে পেরেছে। ফলে বন্দরে থাকা কনটেইনার রেলে সরাতে গেলে অন্তত ২০/২৫দিন রেগুলার সময় লাগবে। তাই নৌপথই এখন সবচেয়ে সুবিধাজনক পথ।
পূর্বকোণ/ইব