নগরীর সদরঘাট থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ব্যবসায়ীকে অপহরণের ঘটনায় সাতজনের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এরমধ্যে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি পাঁচজন ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে। এরমধ্যে হারুণ নামে ‘সেনা সদস্য’ পরিচয় দেয়া এক ব্যক্তিও রয়েছে। পুলিশ এখনো তাকে খুঁজে পায়নি।
সদরঘাট থানার পরিদর্শক (ওসি) আবদুর রহিম জানান, ঘটনার পর থেকে জড়িতরা আত্মগোপনে চলে যায়। ঘটনায় জড়িত মাইক্রোবাস চালক ইরফান আহমেদ রায়হান ও হেলাল উদ্দিন নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুইজনেই জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে সম্প্রতি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
গ্রেপ্তার হেলাল হাতিয়ার জগন্নাথ বাজারের মৃত আবুল হাশিম এবং রায়হান হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শা দক্ষিণ বাড়িঘোনার মোহাম্মদ ইদ্রিসের ছেলে। হারুণ বায়েজিদ এলাকায় বসবাস করেন।
গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে গত ৪ জানুয়ারি দুপুরে নগরীর কদমতলীর নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে মোবিল ব্যবসায়ী শুভাশিষকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় অপহরণকারীর। ওইদিন সন্ধ্যায় তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তিনি মুক্তি পান।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হেলাল উদ্দিন (৪৫) জানান, আনুমানিক ছয়, সাতমাস আগে মুরাদপুর এলাকায় হারুণের সাথে পরিচয় হয়। তিনি নিজেকে ‘সেনা কর্মকর্তা’ পরিচয় দেন। গত ২ জানুয়ারি হেলালকে ফোন করে দুই নম্বর গেটে ডেকে বলেন-৪ জানুয়ারি কদমতলীতে একটি কাজ আছে। গেলে ১০ হাজার টাকা পাবেন।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪ জানুয়ারি সকাল সাড়ে সাতটায় ‘সেনা অফিসার’ পরিচয় দেয়া হারুণের ফোন পেয়ে সিআরবিতে যান হেলাল। সেখান থেকে সকাল আনুমানিক সোয়া নয়টার সময় একটি মাইক্রোবাসে তারা কদমতলীতে যান। বেলা সাড়ে বারোটার সময় মোবিল ব্যবসায়ী শুভাশিষ বসুকে তারা গোয়েন্দা পরিচয়ে মাইক্রেবাসে তুলে হাটহাজারী এলাকায় নিয়ে যান। ওইদিন সন্ধ্যায় তিন লাখ টাকা মুক্তিপণে শুভাশিষকে ছেড়ে দেয়া হয়। হাটহাজারী চৌধুরীহাট এলাকা মুক্তিপণের টাকা লেনদেন হয় বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানান হেলাল।
জবানবন্দিতে যা বলেন রায়হান: গ্রেপ্তার মাইক্রোবাস চালক ইরফান আহমদ রায়হান (২৭) জবানবন্দিতে জানান, ব্যবসায়ী শুভাশীষ বসু অপহরণের ঘটনায় তিনিসহ সাতজন ছিলেন। এরমধ্যে সেনাবাহিনীর অফিসার পরিচয়ে এক ব্যক্তিও ছিলেন। গত ৩ জানুয়ারি রাতে পূর্বপরিচিত মাইক্রোবাস চালক আজাদ তাকে ফোন দিয়ে বলেন ৪ জানুয়ারি একটি ভাড়া আছে। হাটহাজারী আমান বাজার এলাকা থেকে এক ব্যক্তি দামপাড়া সোহাগ কাউন্টারে যাবেন। যে ব্যক্তি যাবেন তাকে রায়হানের ফোন নম্বর দিয়েছিলেন আজাদ। ৩ জানুয়ারি রাতে এক ব্যক্তি রায়হানকে ৪ জানুয়ারি সকাল সাড়ে সাতটায় আমানবাজারে যেতে বলেন। পরদিন সকাল আটটায় আমান বাজার থেকে সেনা অফিসার পরিচয় দেয়া ওই ব্যক্তি এবং ছেলে পরিচয় দেয়া আরেকজন মাইক্রোবাসে উঠেন। আনুমানিক সাড়ে আটটার সময় দামপাড়া সোহাগ কাউন্টারে ছেলেটি নেমে যায়। সেনা অফিসার পরিচয় দেয়া ব্যক্তি মাইক্রোবাসে ছিলেন। দামপাড়া থেকে তারা সিআরবি সিএনজি স্টেশনে গেলে সেখানে থেকে আজাদসহ আরো তিনজন গাড়িতে উঠেন। তখন রায়হানকে পাশের সিটে বসিয়ে আজাদ নিজেই চালকের আসনে বসেন। সিআরবি থেকে তারা পাঁচজন গাড়ি নিয়ে কদমতলীতে একটি মোবিলের দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ান।
রায়হান জানান, মোবিলের দোকানের সামনে গাড়ি থামার পর তিনি নিজে, আজাদ ও সেনা অফিসার পরিচয় দেয়া ওই ব্যক্তি গাড়িতে বসে ছিলেন। বাকি দুইজন গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ান। এরমধ্যে একটি এলিয়ন প্রাইভেটকার মাইক্রোবাসের পেছনে এসে দাঁড়ায়। যে দুইজন গাড়ির বাইরে ছিলেন তারা প্রাইভেট কার থেকে নামা আনুমানিক ষাট বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে মাইক্রোবাসে তুলে নেন। গাড়িতে তোলার পর লোকটাকে বলা হয়-‘আমরা ডিবির লোক তোমার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে’। প্রায় ৫/৭ মিনিটর পর লোকটার চোখ গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। হাতে হ্যান্ডকাপ লাগানো হয়।
জবানবন্দিতে রায়হান বলেন, গাড়ি নিয়ে তারা কাপ্তাই রাস্তার মাথা মৌলভী বাজারের দিকে যান। এর আগে এভারকেয়ার হাসপাতালের কাছে আজাদ চালকের আসনে বসেন। ওই সময় সেখান থেকে আরেকজন লোক গাড়িতে উঠেন। মৌলভীবাজার পার হবার পর যে দুইজন লোক বৃদ্ধ লোকটিকে গাড়িতে তুলেছিলেন তাদের একজন গাড়ি থেকে নেমে আরেকটি মোটরসাইকেলে উঠেন। মোটরসাইকেল থেকে একজন গাড়িতে উঠেন। পরে মোটরসাইকেলটি একটি অফ হোয়াইট দুইতলা ভবনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। দুই জনের একজন গাড়ি থেকে থেকে নামিয়ে বৃদ্ধ লোকটিকে ওই ভবনে নিয়ে যান। আজাদসহ বাকিরা ওই মাইক্রোবাসে উঠে এভারকেয়ার হাসপাতাল এলাকায় নেমে যান। অপহরণকারীদের একজন আজাদের মাধ্যমে রায়হানকে চার হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া দেন।
পূর্বকোণ/ইব