চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে অনুমোদনহীন ‘ঘি’ না কেনার পরামর্শ

চট্টগ্রামে ভেজাল ঘি’র রমরমা বাণিজ্য, কী বলছে বিএসটিআই

রাজীব রাহুল

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৯:৩৫ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামে নগরী ও জেলায় দেড় শতাধিক কারখানায় খাঁটি ঘিয়ের নামে তৈরি হচ্ছে ভেজাল ঘি। পাম অয়েল, ডালডা, সুজি, রং, ফেবিকল আঠা ও সুগন্ধি একত্রে মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এসব ঘি। মুদি দোকানি ও বাবুর্চিদের মোটা অংকের কমিশন দিয়ে সামাজিক অনুষ্ঠানসহ ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে এসব ‘ঘি’।

 

ভোজাল ঘি শরীরে কী ক্ষতি করে, বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন: 

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেন পূর্বকোণকে বলেন, কোম্পানিগুলো সয়াবিন ও পাম ফ্যাট ব্যবহার করে কনডেন্সড মিল্ক তৈরি করে। ক্ষতিকারক বিষাক্ত পাম স্ট্যারিন, চিনি, গাম, আটা এসব যখন দুধে ব্যবহার হয়, এদের প্রভাবে মানব শরীরে ক্ষতিকারক রোগসমূহ বাসা বাঁধে। জটিল ও ক্ষতিকর ফ্যাট শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে জমে এদের অকেজো করে দেয়। অক্সিডাইজড কোলেস্টেরল হল মোমের মতো পদার্থ, যা রক্ত নালীর দেয়ালে আটকে থাকে। যার ফলে রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা থেকে তৈরি হতে পারে হৃদযন্ত্রের নানাবিধ রোগ। দুধের পচনরোধে ব্যবহৃত হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড একটি শক্তিশালী জারক পদার্থ, যা শরীরে অক্সিডেন্টের পরিমান বৃদ্ধি করে নানান রোগ সৃষ্টি করে।

 

বিএসটিআই কর্মকর্তাদের ভাষ্য : 

 

বিএসটিআই চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসের উপপরিচালক (সিএম) ও অফিস প্রধান মোহাম্মদ গোলাম রাববানী পূর্বকোণকে বলেন, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কাছাকাছি নামে অথবা বাহারি নামে মোড়ক বানিয়ে মোড়কে বিএসটিআই’র ভুয়া অনুমোদনের তথ্য দিয়ে  বিক্রি হচ্ছে এসব ঘি। যার কারণে সাধারণ মানুষ খাঁটি ঘি মনে করে এসব ঘি কিনছে। আমরা ইতিমধ্যে রমজানকে সামনে রেখে মাঠে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। যদিও জনবল সংকটে আছে বিএসটিআইয়ের চট্টগ্রাম অফিস। তারপরও আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। অনুমোদিত ঘি এর তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করবো। যাতে করে মানুষ ঘি কিনতে সচেতন হয়।

 

চট্টগ্রামের যেসব ভেজাল ঘিয়ে সয়লাব : 

 

ডানোপা ঘি, এসবি ঘি , এমইআই ঘি, টেসপি ঘি, শতভাগ খাঁটি ঘি, গোয়ালা ঘি, রাজা ঘি, জব্বার ঘি, গোল্ডেন ঘি, পিওর ঘি, রয়েল ঘি, রাজধানী ঘি, রাজবাড়ী ঘি, আনন্দ গাওয়া ঘি, খাঁটি গাওয়া ঘিসহ আরও বাহারি নামে বাজারজাত করা হচ্ছে ভোজল ঘি। 

 

এদিকে গত রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার আমানউল্লাহ্ পাড়া এলাকা থেকে ভেজাল ঘি ও চা পাতা বিক্রির অপরাধে এক ডিস্ট্রিবিউটারের মামলায় সাহেদুল আলম চৌধুরী (৪৭) ও  আব্দুল বাতেন (৪৮) নামের দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

 

চট্টগ্রাম বিএসটিআইয়ের অনুমোদন প্রাপ্ত ঘিয়ের ব্র্যান্ডগুলো হল-

 

বিএসটিআই চট্টগ্রাম অফিসের সহকারী পরিচালক (সিএম) নিখিল রায় পূর্বকোণকে বলেন, রমজান ও রমজান পরবর্তী ঈদকে ঘিরে ঘি এর চাহিদা বাড়ে। এই সুযোগে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল ঘি বাজারবাত করতে তৎপর হয়। এবার চট্টগ্রামে আমরা এসব অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট  চলমান রাখব। তিনি চট্টগ্রাম বিএসটিআই থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ঘি এর নাম উল্লেখ করেন। এছাড়া ঘি তৈরিতে অবশ্যই অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদনহীন কোনো ঘি কারখানা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও যোগ করেন তিনি।

 

চট্টগ্রামের অনুমোদিত ঘি গুলো হলো- রাজ ঘোষ ঘি , টেস্ট্রি ঘি, আসিয়ান ঘি, মিল্ক ক্যারি ঘি, গোল্ড ঘি, হোমল্যান্ড ঘি, মার্ক ঘি, এ-৭ ঘি, এ-৭ স্পেসাল ঘি, এ-৭ গোল্ড ঘি, এ-৭ প্রিমিয়াম ঘি, মিষ্টি মুখ ঘি, বনফুল ঘি, সুপার বাগাবাড়ি ঘি, কুকমি (পিএম) ঘি,কুকমি এসপি ঘি, কুকমি ভিআই পি ঘি, কুকমি মনোরমা ঘি, সলিড ঘি, ফুলেল ঘি, কোয়ালিটি ঘি, নিউ চট্টলা ঘি,নিউ চট্টলা বাটার অয়েল, এস এ থ্রি ঘি, আই কিউ ঘি, দেশি ডেইরি ঘি, রাজরানী প্রিমিয়াম ঘি, রাজরানী সুপার ঘি, রাজরানী ঘি, রাজরানী বাটার অয়েল, তৃপ্তি ঘি, চিটাগং ক্লাব ঘি, গ্রীন হারবেস্ট ঘি, রিফাত ঘি, পিউর ওয়ান ঘি, গাউসিয়া প্রিমিয়াম ঘি, আদি ঘি, আরওয়া ঘি, আবিরা ঘি, শাপলা ঘি, রাজিব ঘি, মমতা, সাদা কালো, ফ্লেভার, হালিশহর মার্ট, চৌধুরী ক্রিমি, চৌধুরী ক্রিমি বাটার অয়েল, ওয়েল ফুড,ক্লাস এ-১,তৃপ্ত,পল্লী বাংলা,বারাকা, এ-১, এ-১ প্রিমিয়াম,গাভী গোল্ড, কাউ স্টার,সোনালেী স্পেশাল, সোনালী সুপার, কুটুম প্রিমিয়াম এবং কোয়ালিটি বাটার অয়েল।

 

ভেজাল ঘি চিনবেন যেভাবে :

 

ভোজাল ঘি চেনার সহজ উপায় হলো সরকারি ফুড ল্যাবে ঘি এর স্যাম্পল পরীক্ষা করা । এছাড়া বাসায় বসেও আপনি চাইলে ভেজাল ঘি সনাক্ত করতে পারেন। তারজন্য কিছু প্যারামিটার চালু আছে। নিম্মে চারটি প্যারমিটার উল্লেখ করা হলো-

 

* হিট টেস্ট: একটি প্যানে ১ চামচ ঘি নিয়ে গরম করুন। যদি ঘি তাৎক্ষণিকভাবে গলে যায় এবং গাঢ় বাদামি রঙে পরিণত হয়, তবে এটি খাঁটি ঘি। যদি ঘি গলতে সময় নেয় এবং হলদে হয়ে যায়, তাহলে বুঝবেন, ঠকেছেন আপনি।

 

* পাম টেস্ট: ১ চা চামচ ঘি নিন হাতের তালুতে। ঘি যদি ত্বকের সংস্পর্শে আপনাতেই গলে যায় তবে বুঝবেন ঘি বিশুদ্ধ। এর ব্যতিক্রম হলে ওই ঘি এড়িয়ে চলুন।

 

* ডাবল-বয়লার মেথড চেক: একটি কাচের বয়ামে সামান্য পরিমাণ ঘি নিন। একটি গরম পানির পাত্রে বয়ামটি বসিয়ে গরম করুন। গলে গেলে ফ্রিজে রেখে দিন বয়াম। ঘি যদি এক লেয়ারে জমে তাহলে বুঝবেন খাঁটি ঘি। কিন্তু যদি দুই লেয়ারে জমে, তা হলে বুঝবেন ঘিয়ের সঙ্গে নারিকেল তেল মেশানো হয়েছে। এক্ষেত্রে ঘি এবং নারকেল তেলের দুটি আলাদা লেয়ার দেখতে পাবেন।

 

* আয়োডিন টেস্ট: অল্প পরিমাণ ঘি গলিয়ে তার মধ্যে দুই ফোঁটা আয়োডিন সলিউশন দিন। আয়োডিন যদি বেগুনি রঙ ধারণ করে তাহলে বুঝবেন ঘি খাঁটি নয়। * বোতল টেস্ট: এক চামচ ঘি গলিয়ে একটি স্বচ্ছ বোতলে রাখুন। এবার এতে এক চিমটি চিনি দিন। এরপর বোতলের মুখ বন্ধ করে খুব জোরে জোরে ঝাঁকান। ৫ মিনিটের জন্য বোতলটি স্থির অবস্থায় রেখে দিন। এরপর খেয়াল করুন বোতলের নিচে লাল রঙের আস্তরণ পড়েছে কি না। যদি লাল রঙের আস্তরণ পড়ে, তাহলে বুঝবেন ঘিয়ে ভেজাল মেশানো আছে।

 

 

পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট